|
|
|
|
লোকসভা ভোটে বাংলায় ঢুকছেন বদরুদ্দিন আজমল
রাজীবাক্ষ রক্ষিত • গুয়াহাটি
২৭ ডিসেম্বর |
সংখ্যালঘু দল’-এর তকমা ঝেড়ে ফেলে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ‘ধর্মনিরপেক্ষ’ দল হিসেবেই লড়তে চাইছে বদরুদ্দিন আজমলের অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এআইইউডিএফ)। পাশাপাশি, নিজেদের প্রভাব বাড়াতে অসমের গণ্ডির বাইরে গিয়ে, প্রতিবেশী পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছেন আজমল। তাঁর দাবি, “লোকসভা ভোটে অসমে ভাল ফল তো আমরা করবই। বাংলাতেও কয়েকটি কেন্দ্রে নির্ণায়ক ভূমিকা নেবে এআইইউডিএফ।” আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গেও প্রথমবার লড়ার জন্য তৈরি দল। আজমল সাফ জানান, পশ্চিমবঙ্গের ১৪টি লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে এআইইউডিএফ। এর মধ্যে অন্তত ৪ থেকে ৫টি আসনে ভাল ফল করার আশা রাখছেন তিনি।
লোকসভা ভোটের আগে কেন দলের ‘ইমেজ’-টাই বদলে ফেলতে চাইছেন আজমল? তাঁর সোজা কথা, “লোকে এআইইউডিএফকে আরও একটা মুসলিম লিগ যাতে না ভাবেন, তাই দলের আদর্শ ও কর্মপন্থায় দৃশ্যত কিছু বদল আনা দরকার হয়ে পড়েছে। জন্মলগ্ন থেকে আমরা -মুসলিমদেরও দলে সমান গুরুত্ব দিয়েছি। তবু কিছু দল নিজেদের স্বার্থে আমাদের গায়ে সংখ্যালঘু দলের তকমা সেঁটে দিয়েছে। এ বার আমরা সর্ব অর্থেই আধুনিক, অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে লড়াইয়ের ময়দানে নামতে চাই।”
২০০৫ সালে তৈরি হওয়া এআইইউডিএফ ২০০৬ সালের অসম বিধানসভা নির্বাচনে ১০টি আসনে জয়লাভ করে। এর মধ্যে দু’জন বিধায়ক ছিলেন অ -মুসলিম। ২০১১ সালের নির্বাচনে ১৮টি আসন পেয়ে এআইইউডিএফ এখন প্রধান বিরোধী দল। বর্তমান বিধায়কদের মধ্যেও দু’জন অ -মুসলিম। এমনকী দলের কেন্দ্রীয় কমিটির ২০ শতাংশ সদস্যও অ -মুসলিম। দলের কার্যনির্বাহী সভাপতির নাম আদিত্য লাংথাসা। আপাতত তাঁর কাঁধেই দলের ভাবমূর্তি বদলের ভার পড়েছে।
কিন্তু দলের ভাবমূর্তি বদলের ডাক দিলেও, বড়োভূমি সংঘর্ষের পরে দলের মাথায় যে ‘সাম্প্রদায়িক’ তকমা আরও চেপে বসেছে তা বড় বালাই হয়ে দাঁড়িয়েছে আজমল সাহেবের সামনে। দলের ভাবমূর্তি বদল যে এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তা মেনে নিয়ে ‘আতর-ব্যারন’ আজমল বলেন, “কিছু মানুষ, কয়েকটি সংগঠন ও রাজনৈতিক দল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমাদের মুসলিম দলের প্রতিনিধি হিসেবে চিহ্নিত করে মানুষকে ভুল বোঝাচ্ছে। আমরা ঠিক করেছি, লোকসভা নির্বাচনে সম-সংখ্যাক মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়ের প্রার্থী দেব। দলে অ-মুসলিম সদস্যও বাড়ানো হচ্ছে।” আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে অসমে কংগ্রেসের সঙ্গে প্রাক-নির্বাচনী কোনও রকম আঁতাতের সম্ভাবনা নস্যাত্ করে দিয়েছেন ধুবুরির এই সাংসদ। তবে কেন্দ্রে ইউপিএ-কেই যে তাঁরা সমর্থন করবেন তা স্পষ্ট করে দিয়ে আজমল বলেন, “কেন্দ্রে দুটি বিকল— ইউপিএ, না হলে এনডিএ। বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ -র সঙ্গে কোনও ভাবেই হাত মেলাব না। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ তো মূলত অসাম্প্রদায়িক। তবে কেন্দ্রে ইউপিএকে সমর্থন করা আর রাজ্যে কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলানো এক ব্যাপার নয়।”
অসমে মুসলিমদের মধ্যে আধুনিক চিন্তার প্রসার ঘটাতে আজমলের প্রধান হাতিয়ার তাঁর আজমল ফাউন্ডেশন। হোজাইয়ে ২০০৬ সালে তিনি গড়েন মরিয়াম আজমল উওমেন্স কলেজ অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। আজমলের কথায়, “কোরানে সব মুসলিমদের জ্ঞান আহরণ বাধ্যতামূলক বলা হয়েছে। কিন্তু ঘরকন্নার দোহাই দিয়ে মেয়েদের যে ভাবে আটকে রাখা হচ্ছে তা অন্যায়। রাজ্যের মুসলিম পরিবারগুলিতে নারী শিক্ষার প্রসার ঘটাতেই হবে।” আজমল ফাউন্ডেশনের তরফে হোজাইয়ে একটি মেডিক্যাল কলেজ ও গুয়াহাটিতে একটি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ার কথাও ঘোষণা করেছেন বদরুদ্দিন আজমল। |
|
|
|
|
|