|
|
|
|
অমিতের মনোনয়নে খুশি দিল্লি, শিল্পমহলও
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি
২৭ ডিসেম্বর |
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের শিল্প দফতরের দায়িত্ব অমিত মিত্রের হাতে তুলে দেওয়ায় খুশি দিল্লি। আশাবাদী মুম্বইও।
আজ নতুন শিল্পমন্ত্রীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজের কর্ণধার মুকেশ অম্বানী। সংস্থার তরফে দিল্লিতে এ খবর জানানো হয়েছে। ক’মাস আগে অমিতবাবুর উদ্যোগেই মুম্বইয়ে মমতার শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত হয়েছিলেন মুকেশ। আলাদা বৈঠকও করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে। সেই অমিতবাবুর হাতে শিল্প দফতর আসাটা রাজ্যের পক্ষে ভাল বিজ্ঞাপন বলেই মনে করছেন শিল্প ও বণিক মহলের সঙ্গে যুক্ত অনেকে।
দিল্লির রাজনৈতিক নেতারাও মমতার এই পদক্ষেপকে ইতিবাচক বলে মনে করছেন। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ যেমন বলছেন, “অশোক মিত্র থেকে অমিত মিত্র পশ্চিমবঙ্গের এই রাজনৈতিক অভিমুখ বদল নিশ্চয়ই ইতিবাচক। কারণ, অশোক মিত্র মতাদর্শগত ভাবে কট্টরপন্থী ছিলেন। আর ফিকি-র প্রাক্তন মহাসচিব অমিত মিত্র আর্থিক সংস্কারের মুখ।”
কেন্দ্রে শাসক দলের সুরে সুর মিলিয়ে বিরোধী দল বিজেপি-র নেতা অরুণ জেটলিও বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যদি রাজ্য প্রশাসনকে চাঙ্গা করতে চান, অমিত মিত্রকে সামনে এনে যদি শিল্পোন্নয়নের চেষ্টা করেন, তবে তা নিশ্চয়ই অভিনন্দনযোগ্য হবে।” আর দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভড়েকরের কথায়, “উন্নয়ন নিয়ে বিজেপি কখনও রাজনীতি করে না। তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপি-র রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকতেই পারে। কিন্তু যেখানে উন্নয়নের প্রশ্ন জড়িত, সেখানে মুখ্যমন্ত্রী নতুন শিল্পমন্ত্রীকে সামনে
রেখে শিল্পায়নের চেষ্টা করলে তাকে সাধুবাদ জানাব।”
বণিকসভা ফিকি-র সঙ্গে দীর্ঘদিন জড়িত থাকার সুবাদে দেশের প্রথম সারির শিল্পপতিদের সঙ্গে অমিত মিত্রের যোগাযোগ ঘনিষ্ঠ। সেই যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি পশ্চিমবঙ্গে লগ্নি করার ব্যাপারে আগ্রহ তৈরি করতে পারবেন বলে মনে করছেন অনেকেই। শিল্পপতি হর্ষ নেওটিয়া যেমন আজ বলেন, “উনি এই ক্ষেত্রের এক জন পোড়খাওয়া ব্যক্তি। অনেক শিল্পপতির সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ও ভাল সম্পর্ক রয়েছে। ফলে তিনি ভাল ভাবে তাঁদের কাছে এ রাজ্যে লগ্নির সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরতে পারবেন।”
আর বণিকসভা সিআইআই-এর ডিরেক্টর জেনারেল চন্দ্রজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, “আশা করছি, অমিত মিত্র তাঁর অভিজ্ঞতাকে দক্ষতার সঙ্গে রাজ্যের শিল্পায়নের কাজে লাগাবেন।”
এটা ঠিক যে, নীতি না-পাল্টে, শুধু মন্ত্রী বদল করে রাজ্যে লগ্নি টানা কতটা সম্ভব, তা নিয়ে শিল্পপতিদের একটা বড় অংশের সংশয় রয়েছে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে অমিতবাবুই যে মমতার সেরা বাজি, সে কথাও স্বীকার করছেন তাঁরা। তাঁদের মতে, শিল্পায়ন নিয়ে বিরোধীদের তীব্র সমালোচনার মুখে অমিতবাবুকে মন্ত্রী করে মমতা এই বার্তা দিতে পেরেছেন যে, তিনি ধ্বংস নয়, নির্মাণের পক্ষে।
আবার রাজনৈতিক নেতাদের মতে, অমিতবাবুকে শিল্পমন্ত্রী করাটা আসলে মমতার এক ঢিলে দুই পাখি মারার চেষ্টা। শিল্পের জন্য জমি নিয়ে মমতা তাঁর নীতি পাল্টাবেন কি না, তা নিয়ে এই নেতারা সংশয়ী। তাঁদের মতে, জমি অধিগ্রহণ নিয়ে সক্রিয় না-হলে, শহরাঞ্চলে জমির ঊর্ধ্বসীমা আইন তুলে না-দিলে রাজ্য সম্পর্কে সাধারণ ভাবে শিল্পপতিদের আগ্রহী হওয়া কঠিন। কিন্তু রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট মাথায় রাখলে এখনই এই কাজ মমতা করে ফেলতে পারবেন বলে মনে হয় না। সে দিক থেকে অমিতবাবুকে মধ্যপন্থা বলেই মনে করছেন ওই নেতারা। আপাতত জমি নীতি না-বদলালেও যাঁর নিয়োগ শিল্পমহলকে ভবিষ্যতের বার্তা দেবে। বোঝাবে, শিল্পের প্রতি বাস্তববাদী দৃষ্টিভঙ্গিই নিতে চান মমতা।
সেই লক্ষ্যে বেশ কিছু দিন ধরেই অমিতবাবুকে কাজে লাগাচ্ছেন মমতা। শিল্প দফতর দেওয়ার আগেই লগ্নিকারীদের সঙ্গে কথা বলতে তাঁকে আমেরিকায় পাঠিয়েছিলেন। সেখানে গিয়ে লগ্নির ঠিকানা হিসেবে পশ্চিমবঙ্গকে তুলে ধরেছিলেন অমিতবাবু। তা ছাড়া, হিলারি ক্লিন্টনের কলকাতা সফরের সময় তো বটেই, ফিকি-তে থাকার অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন সময়ে কূটনীতিকদের সঙ্গে মমতার বৈঠক সফল করতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন তিনি।
মমতা অবশ্য প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে পশ্চিমবঙ্গ শিল্প উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যানের পদে রেখে দিয়েছেন। তাঁর দু’বছরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে পার্থবাবু যাতে অমিতবাবু সাহায্য করতে পারেন, সে জন্যই তাঁকে ওই পদে রেখে দেওয়া হয়েছে।
|
পুরনো খবর: পার্থর ‘ভার’ কমিয়ে অমিতে আস্থা মমতার |
|
|
|
|
|