ফের ফ্ল্যাটে ঢুকে এক বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাকে মারধর করে গয়নাগাঁটি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটল। ঘটনাস্থল সেই কসবা।
পরিচিত ডাক শুনে দরজা খুলে দিয়েছিলেন ৬৫ বছরের বেলা মজুমদার। দরজা খুলতেই ঘরে ঢুকে তাঁর উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে এক যুবক। মারধর করে সোনার হার, বালা এবং কানের দুল ছিনিয়ে নেয় সে। রেহাই পাননি শৌচাগারে থাকা বৃদ্ধার স্বামীও। লুঠপাট সেরে দু’জনকে বেঁধে শৌচাগারে আটকে চম্পট দেয় সেই দুষ্কৃতী। শুক্রবার বেলা ১১টা নাগাদ এই ঘটনা ঘটলেও রাত পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।
গত ৪ ডিসেম্বর কসবাতেই রত্না মুখোপাধ্যায় নামে এক বৃদ্ধার বাড়িতে লুঠপাট চালায় তিন দুষ্কৃতী। তাদের মধ্যে দু’জন শাড়ি বিক্রির সূত্রে ওই বৃদ্ধার পূর্ব-পরিচিত ছিল। একই কায়দায় বাড়িতে ঢুকে রত্নাদেবীকে বেঁধে ফেলে তিন জন। লুঠপাট সেরে যাওয়ার আগে ওই বৃদ্ধাকে প্রণামও করে গিয়েছিল তারা। ওই ঘটনাতেও এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি।
কী হয়েছিল এ দিন? পুলিশ জানায়, কসবার জোহরাবাগান লেনের একটি বাড়ির তিনতলায় স্বামীকে নিয়ে থাকেন বেলাদেবী। বাকি দু’টি তলাতেও তাঁর আত্মীয়েরাই থাকেন। এ দিন বেলা ১১টা নাগাদ কলিং বেল বাজে। সঙ্গে বেলাদেবীর কানে আসে ‘ছোটমা, ছোটমা’ বলে ডাক। ওই বৃদ্ধা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁর এক ভাইপো ওই নামেই তাঁকে ডাকে। তাই ভাইপো এসেছে ভেবেই তিনি দরজা খোলেন। পরে দেখেন, ভাইপোর বদলে পুরনো শিশি-বোতল কিনতে আসা এক যুবক দাঁড়িয়ে রয়েছে। পুলিশকে বেলাদেবী জানিয়েছেন, মাস দুয়েক আগে ওই যুবক শিশি-বোতল কিনতে এসেছিল। তখনও তাঁর স্বামী অরুণবাবুর গলার সোনার হার ছিনতাইয়ের চেষ্টা করেছিল সে। তবে ওই যুবকের নাম তদন্তকারীদের জানাতে পারেননি বৃদ্ধা।
পুলিশ সূত্রের খবর, বেলাদেবী দরজা খুলতেই জোর করে ভিতরে ঢুকে পড়ে ওই যুবক। বৃদ্ধার অভিযোগ, তাঁকে মারধর করে সোনার হার, বালা, কানের দুল ছিনিয়ে নেয় সে। এর পরে বেলাদেবীর স্বামী অরুণবাবুর খোঁজ শুরু করে। অরুণবাবু তখন শৌচাগারে ছিলেন। সেখানে ঢুকে তাঁর গলা থেকেও হার ছিনিয়ে নেয় ওই দুষ্কৃতী। এর পরে অরুণবাবুর লুঙ্গি ছিঁড়ে তাঁদের দু’জনকেই বেঁধে ফেলে সে। তার পরে ওই শৌচাগারেই দু’জনকে আটকে রেখে চম্পট দেয় ওই দুষ্কৃতী।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, যুবকটি পালিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরেই বেলাদেবীর রাঁধুনি ওই ফ্ল্যাটে আসেন। তিনি এসে দেখেন, ঘর ফাঁকা। শৌচাগার থেকে চিৎকার শোনা যাচ্ছে। তিনিই শৌচাগারের দরজা খুলে বেলাদেবীদের বার করেন। তাঁর চিৎকার শুনে ততক্ষণে অন্য ফ্ল্যাটের আত্মীয়েরাও হাজির হন। খবর যায় কসবা থানায়।
ডিসি (সাউথ সাবার্বান) সন্তোষ পাণ্ডে বলেন, “ঘরে ঢুকে এক দুষ্কৃতী সোনার হার, কানের দুল-সহ গয়না লুঠ করেছে। ওই বৃদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু হয়েছে।”
পরে বেলাদেবীর বাড়িতে যান লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগের অফিসারেরাও। বৃদ্ধার বর্ণনা অনুযায়ী অভিযুক্তের ছবি আঁকানো হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, দিন কয়েক আগের ঘটনার সঙ্গে এ দিনের ঘটনার কিছুটা মিল রয়েছে। সে কারণে রত্নাদেবীর বাড়ির লুঠপাটের ঘটনায় অভিযুক্তদের স্কেচ এনে দেখানো হয়েছে বেলাদেবীকে। তবে বেলাদেবী ওই ছবি দেখে কাউকে চিনতে পারেননি বলে তদন্তকারীরা জানান। |