বিদ্যুত্ না থাকায় বন্ধ সেচ প্রকল্প, সমস্যায় ময়ূরেশ্বরের বহু চাষি |
নিজস্ব সংবাদদতা • ময়ূরেশ্বর |
বিদ্যুত্ সংযোগ না মেলায় বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে ময়ূরেশ্বর থানা এলাকার একটি সেচ প্রকল্প। তার জেরে সেচ-সঙ্কটে পড়েছেন এলাকার একটি বড় অংশের কৃষিজীবী মানুষ। তাঁদের অভিযোগ, বারবার প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও ওই সেচ প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুত্ কেন্দ্রের জলাধারের স্বার্থে জেলার বেশ কিছু এলাকার চাষিদের সেচখালের জলের দাবি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। পরিবর্তে প্রশাসন তাঁদের গভীর নলকূপ বা সাব মার্সিবল পাম্পের মতো ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্প থেকে সেচের জলের ব্যবস্থা করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। সেই মতো ১৯৯৭-৯৮ সালে ‘পাওয়ার ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডে’র (পিডিসিএল) অনুদানে জেলা সেচ দফতরের উদ্যোগে ময়ূরেশ্বরের বড় ডিবুর মৌজায় একটি গভীর নলকূপ বসানো হয়। ওই নলকূপ থেকে সংশ্লিষ্ট বড় ডিবুর, গুনুর, ষাটপলশা-সহ বেশ কয়েকটি মৌজায় হাজার বিঘেরও বেশি জমিতে সেচের জল সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু কয়েক বছর পরে রক্ষণাবেক্ষণ এবং উপযুক্ত মেরামতির অভাবে ওই সেচ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে প্রশাসনিক উদ্যোগে ওই সেচ প্রকল্পের সংস্কার হলেও বিদ্যুত্ সংযোগ না আসায় আজও তা চালু করা যায়নি।
ওই সেচ প্রকল্পের বেনিফিসিয়ারি কমিটি সূত্রে খবর, প্রকল্পের জন্য একটি ট্রান্সফর্মার বরাদ্দ ছিল। মাঝে গভীর নলকূপ খারাপ হয়ে যাওয়ায় কিছু দিন ওই সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকে। ওই সময় বিদ্যুত্ পর্ষদ ওই ট্রান্সফর্মার থেকে অন্যত্র সংযোগ দিয়ে দেয়। বর্তমানে একই সঙ্গে পুরনো সেচ প্রকল্প টানার ক্ষমতা ওই ট্রান্সফর্মারের আর নেই। |
কমিটির অন্যতম সদস্য সুনীল মণ্ডল বলেন, “এখন পর্ষদ বলছে, সবার আগে সেচ প্রকল্পের জন্য বকেয়া বিদ্যুতের বিল মেটাতে হবে। শুধু তা-ই নয়, নতুন ট্রান্সফর্মার কিংবা আরও উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রান্সফর্মার বসানোর খরচও চাষিদের বহন করতে হবে। কিন্তু আমাদের সেই সামর্থ্য না থাকায় বিদ্যুত্ সংযোগের অভাবে বন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে সেচ প্রকল্পটি।” তাঁর দাবি, প্রশাসনের সকল স্তরে জানিয়েও ওই প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে কোনও অগ্রগতি হয়নি। বড় ডিবুরের চাষি দিলীপ মণ্ডল, গুনুরের ধনপতি সাহা-রা বলছেন, “ওই সেচ প্রকল্প চালু থাকলে আমরা অল্প খরচে চাষের জন্য সারা বছর জল পেতাম। এখন তার বদলে অন্যের থেকে চড়া মূল্যে জল কিনে চাষ করতে হচ্ছে।”
সেচ প্রকল্প বন্ধ থাকায় চাষিদের দুরবস্থার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ষাটপলশা পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান নন্দদুলাল দাস। যদিও এ ব্যাপারে তিনি পঞ্চায়েতের আগের বাম বোর্ডকেই দুষেছেন। তিনি বলেন, “এক সময় ওই সেচ প্রকল্পই এলাকার গরিব চাষিদের বাঁচিয়ে রেখেছিল। অবিলম্বে বন্ধ সেচ প্রকল্প চালুর ব্যাপারে বিডিও-র কাছে আমরা প্রস্তাব পাঠাব।” ঘটনার কথা জানা না থাকলেও সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত এবং বিদ্যুত্ দফতরের সঙ্গে কথা বলে সেচ প্রকল্প চালু করার ব্যাপারে পদক্ষেপ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ময়ূরেশ্বর ২ বিডিও মাসুদুর রহমানও। এ দিকে, ময়ূরেশ্বর গ্রুপ ইলেকট্রিক সাপ্লাইয়ের স্টেশন ম্যানেজার তথা অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার গঙ্গাধর মালির বক্তব্য, “ওই সেচ প্রকল্পের ব্যাপারে আমার কিছু জানা নেই। প্রশাসন অথবা চাষিরা যোগাযোগ করলে বিদ্যুত্ সংযোগের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।” |