আশঙ্কা ছিলই। সেটা সত্যি করে গত কাল রাতে ফের নতুন ঝড় আছড়ে পড়ল ব্রিটেনে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টি। ফলে নতুন করে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ইংল্যান্ডের বেশ কিছু জায়গায়। পরিবেশ দফতর জানাচ্ছে, গোটা ব্রিটেনে প্রায় ১৩ হাজার বাড়ি এখনও বিদ্যুৎহীন। ঝড়-বৃষ্টির দাপটে বিভিন্ন এলাকায় ইতিমধ্যেই ছ’জনের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর এরই মধ্যে জানিয়েছে, কাল যে ঝড়টি আছড়ে পড়েছিল, তা ক্রমশ গোটা ইংল্যান্ডে ছড়িয়ে পড়ছে। ওয়েলসের কিছু জায়গায় ঘণ্টায় ১০০ মাইল বেগে হাওয়া বইছে। ইংল্যান্ডে তার দাপট খানিকটা কম। আবহাওয়া অফিসের খবর অনুযায়ী, সেখানে ঘণ্টায় প্রায় ৮০ মাইল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইছে। সেই সঙ্গেই হু হু করে নামছে তাপমাত্রা। বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরে ঘরে বন্ধ রুম হিটার। ফলে প্রবল ঠান্ডায় কার্যত অসহায় ব্রিটেনবাসী। এরই মধ্যে ব্রিটেনের প্রায় এক লক্ষ বাড়িতে যোগাযোগ করে আগাম সতর্ক করা হয়েছে বাসিন্দাদের। পরিবেশ দফতরের তরফে মেল, এসএমএস বা ফোনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার বাসিন্দাদের আগাম সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। বিশেষ করে যে বাড়িতে বয়স্করা রয়েছেন, প্রয়োজন ছাড়া তাঁরা যেন বাড়ি থেকে না বেরোন, সে বিষয়েও পরমর্শ দেওয়া হয়েছে।
সুখবর দিচ্ছে না আবহাওয়া দফতরও। কারণ ঝোড়ো হাওয়ার দাপট কিছুটা কমলেও বৃষ্টি থামার কোনও সম্ভাবনা নেই। উল্টে তা বাড়তে পারে। ফলে যে নদীগুলি ইতিমধ্যেই ফুলেফেঁপে উঠেছে, সেগুলি আরও ভয়াবহ রূপ নেবে বলে আশঙ্কা। ইতিমধ্যেই ৫০ জায়গায় বন্যা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ডরসেট, বর্নমাউথ, সাসেক্স, সারে, কেন্ট কার্যত ভাসছে। টেমস, সেভার্ন, আউজের মতো নদীগুলি বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে বলেও জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। দক্ষিণ ইংল্যান্ডের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। আবহাওয়া দফতরে কাজ করেন জন গ্রিফিথস। তাঁর কথায়, “বিভিন্ন এলাকায় ঝোড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ঝড়ের দাপট আজ থেকে বাড়বে। উত্তর ইংল্যান্ড আর উত্তর ওয়েলসের পরিস্থিতি আরও শোচনীয় হতে পারে।”
গত কয়েক দিনেই ভেঙে পড়েছিল গোটা ব্রিটেনের যোগাযোগ ব্যবস্থা। তবে কালকের ঝড়ের পরে পরিস্থিতি আরও ভয়ঙ্কর হয়েছে। সড়ক আর রেল পরিষেবা ব্যাহত। মধ্য লন্ডনের ব্যস্ততম রেল স্টেশন ভিক্টোরিয়াও আজ কার্যত মরুভূমির চেহারা নিয়েছে। সেখানকার আপ-ডাউন প্রতিটি ট্রেন আজ বাতিল হয়েছে। যদিও উড়ান পরিষেবা কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়েছে। গ্যাটউইক বিমানবন্দর আজ থেকে ফের সচল। তবে গোটা দেশেই বিমান চলছে বিস্তর দেরিতে।
বস্তুত বড়দিনের পরে কাজে ফিরতে গিয়ে অনেককেই গৃহবন্দি থাকতে হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় উপড়ে পড়েছে গাছ। যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে রাস্তা সারানোর কাজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। দমকলের তরফে জানানো হয়েছে, বড়দিনের ছুটি বাতিল করে তাদের কর্মীরা কাজ করে চলেছেন।
এরই মধ্যে মৃত্যুর খবর এসেছে ব্রিটেনের বিভিন্ন এলাকা থেকে। নিউটন অ্যাবটে দশ বছরের এক বালিকার চোখের সামনে ভেসে গিয়েছেন তার সৎ বাবা। লেমন নদীতে পড়ে যাওয়া পোষা কুকুরকে বাঁচাতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয়েছে ওই ব্যক্তির। বড়দিনের কেনাকাটা করতে গিয়ে পা হড়কে জলে ভেসে গিয়েছেন নিক মাটন নামে এক শিক্ষক। কাম্ব্রিতে রোথিসে নদী থেকে উদ্ধার হয়েছে এক ব্যক্তির দেহ। উত্তর ওয়েলসেও ভেসে গিয়েছেন এক মহিলা।
বড়দিন মাটি হওয়ার পরে বর্ষবরণ নিয়ে আশায় বুক বাঁধছিলেন ব্রিটেনবাসী। কিন্তু সে আশায় কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতি। আশার বাণী শোনাতে ব্যর্থ আবহাওয়া দফতরও।
|