বড়দিন জলে, ফের ঝড় আসছে ব্রিটেনে
২৬ ডিসেম্বর
ড়দিনের আনন্দ বন্যার জলে ধুয়েমুছে প্রায় শেষ। এ বার আশঙ্কা, নতুন বছরের শুরুতেও হয়তো দুর্ভোগই সঙ্গী থাকবে ব্রিটেনের। অন্তত তেমনই অনুমান আবহাওয়া দফতরের। তাঁরা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাত অথবা শুক্রবার সকালে আরও একটি ঝড় আছড়ে পড়বে ব্রিটেনে। যাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে দক্ষিণ ব্রিটেনের বেশ কিছু অঞ্চল। খবর শুনে হতাশ দেশবাসীর ধন্দ, এর পরেও উৎসবের মেজাজের কিছু বাকি থাকবে কি?
অথচ প্রত্যেক বছর এ সময়েই হরেক কিসিমের আলোয় সেজে ওঠে গোটা ব্রিটেন। কেক, পুডিং, সান্টা ক্লজ, জিঙ্গল বেল কনকনে শীতে এ সব নিয়েই জমে ওঠে বড়দিনের উৎসব। আত্মীয়দের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডা, উপহার বিলি আবার প্রাপ্তিযোগ সাধে বছরে এই সময়টার দিকে তাকিয়ে থাকেন ব্রিটেনবাসী। কিন্তু এ বছর? জলবন্দি কেন্ট শহরতলির এক বাসিন্দা রিচার্ড জেফরি বললেন, “যা কিছু পেরেছি উপরে নিয়ে গিয়েছি। রান্নাঘরে, বসার ঘরে জল ঢুকে গিয়েছিল। কুকার কাজ করছিল না।” তা হলে বড়দিন কি কাটল ওভাবেই? জেফরির মা ভ্যালেরি বললেন, “না আমরা চিজ আর বিস্কুট দিয়ে দুপুরের খাবার সেরেছি।” কেক-পুডিংয়ের ক্রিসমাসে এ বছর এটাই সম্বল ছিল।
তবে দুর্ভোগের এতেই শেষ নয়। আবহবিদরা জানিয়েছেন, আসন্ন ঝড়ে ব্রিটেনের উপকূল এলাকায় ঘণ্টায় অন্তত ৭০ মাইল বেগে হাওয়া বইবে। মূল ভূখণ্ডে অবশ্য হাওয়ার বেগ থাকবে ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ মাইলের মধ্যে। সঙ্গে প্রবল বৃষ্টিপাতের আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া দফতর। তাদের বক্তব্য, অতলান্তিক মহাসাগরে বায়ুর চাপের তারতম্যই এই নয়া ঝড়ের প্রধান কারণ। আশঙ্কার এই আবহে অবশ্য আশার কথা একটাই। ভয়াবহতার নিরিখে সোমবারের ঝড়ের মতো মোটেও হবে না এটি।
জলমগ্ন পথে নৌকোয় যাতায়াত। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ ইংল্যান্ডে রয়টার্সের ছবি।
কিন্তু তাতেও কি স্বস্তিতে শহরতলির বাসিন্দারা? ব্রিটেনের পরিবেশ সংস্থার তথ্য অবশ্য সে রকম ইঙ্গিত দিচ্ছে না। তাদের দাবি, দক্ষিণ-পূর্ব এবং দক্ষিণ-পশ্চিম ইংল্যান্ডের ১০০০ বাড়ি এখনও বন্যাকবলিত। কেন্ট, সারে এবং সাসেক্স শহরতলির প্রায় তেরো হাজার বাড়ি বিদ্যুৎহীন। এমনকী, দক্ষিণ-পূর্ব ব্রিটেনের বৃহত্তম শহরতলি হ্যাম্পশায়ারেরই প্রায় ৫০০০ বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। এক বিদ্যুৎ সরবরাহকারী সংস্থার দাবি, কেন্ট, সাসেক্স এবং সারেতে প্রচুর জল জমে থাকায় মেরামতির কাজ ভীষণ রকম বিঘ্নিত। ফলে সপ্তাহান্তের মধ্যেও বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপিত হবে কি না, তা নিশ্চিত নয়। সারের এক বাসিন্দা, ৬৩ বছরের ইয়ান হ্যাল জানালেন, গত কাল বিকেল চারটে থেকে তাঁর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কবে ফিরবে তা-ও অজানা। শেষ পর্যায়ের পেটের ক্যানসারে ভুগছেন ইয়ান। যে কোনও মুহূর্তে হাসপাতালে ভর্তি করার দরকার হতে পারে তাঁকে। কিন্তু জলমগ্ন সারেতে কি করে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকবে জানা নেই। এ দিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় ঘরের ‘হিটার সিস্টেম’ও বিকল। ফলে প্রচণ্ড শীতে ঘরে কুঁকড়ে পড়ে রয়েছেন ইয়ান। সঙ্গে রয়েছে পানীয় জলের অভাব। সব মিলিয়ে আক্ষরিক অর্থেই জলে পড়ে রয়েছেন তিনি। কিন্তু সে অক্ষমতার থেকেও যেন বড় হয়ে উঠছে তাঁর বড়দিন উদ্যাপন না করতে পারার আক্ষেপ। তাঁর বয়ানে, “এটাই বোধহয় আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ ক্রিসমাস। হয়তো বা আমার শেষ ক্রিসমাসও।”
কিছুটা এ রকমই মন খারাপ ছিল গ্যাটউইক বিমানবন্দরে আটকে পড়া যাত্রীদের। আত্মীয়, কাছের মানুষদের জন্য অনেক উপহার নিয়ে রওনা দিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের নির্দেশের জেরে গত কাল উপহার নিয়ে সফর করতে পারেননি অনেকেই। আর বেশিরভাগই আটকে গিয়েছিলেন বিমানবন্দরে। বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় বহু ক্ষণ সেখানেই কাটাতে হয় তাঁদের। খাবার, পানীয় জল ছাড়াই। আরও অভিযোগ, মাত্র একটি শৌচাগার ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল যাত্রীদের। ফলে দুর্ভোগ চরমে ওঠে। এ দিন অবশ্য যাত্রীদের হয়রানির জন্য ক্ষমা চেয়েছেন গ্যাটউইক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে তদন্ত শুরু করার কথা ভাবছেন।
স্কটল্যান্ডের অবস্থাও প্রায় একই রকম। সেখানেও প্রায় সাড়ে তিন হাজার বাড়ি বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। তুলনামূলক ভাবে ওয়েলসের পরিস্থিতি আশাপ্রদ। সেখানে বন্যা-সতর্কতার সংখ্যা কমানো হয়েছে। তবে ইংল্যান্ডের মতো ওয়েলস ও স্কটল্যান্ডও আবহাওয়ার মতিগতির দিকে কড়া লক্ষ্য রাখছে।
‘হোয়াইট ক্রিসমাস’ না হোক, নববর্ষের শুরুটাও যেন সেই দুর্ভোগের আতঙ্কে না কেটে যায়, সে দিকেই লক্ষ্য তামাম ব্রিটেনবাসীর।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.