বন্যা-বিধ্বস্তদের কথা ভুলে লন্ডন মজল উৎসবে
২৬ ডিসেম্বর
ভোর ছ’টাতেই পসরা সাজিয়ে বসেছেন বহু দোকানি। সে ছোটখাটো স্থানীয় দোকান কী ব্রান্ডেড জামাকাপড়ের সুবিশাল শো-রুম। এক দিকে যখন জলবন্দি কেন্ট-সাসেক্স-সারের মতো অঞ্চল, খাস লন্ডনে তখন উৎসবের মেজাজ। এ মাথা-ও মাথা, যত দূর চোখ যায়, রাজপথে গিজগিজ করছে কালো-সোনালী-বাদামি মাথার ভিড়। প্রিয়জনের জন্য উপহারের ডালি সাজিয়ে পালন হচ্ছে ‘বক্সিং ডে’।
২৬ ডিসেম্বর দিনটা উপহার দেওয়ার। ‘বক্সিং’ কথাটা আসলে বাক্সভর্তি উপহার অর্থে। আর তাই লন্ডন জুড়ে এখন সেল-সেল-সেল। জামাকাপড়, জুতো, ব্যাগপত্তর সবেতে লম্বা ছাড়। ছবিটা অনেকটা চৈত্র সেলে হাতিবাগান কী গড়িয়াহাটের মতোই। কোথাও কোথাও আবার তার থেকেও ভয়াবহ ভিড়। কনকনে ঠান্ডা উপেক্ষা করেই দীর্ঘ লাইন। কাউকে কাউকে আবার দেখা গেল গায়ে কম্বল জড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে। কার্ডিফে একটি দোকানের সামনে প্রায় ২০০০ লোকের লম্বা লাইন। দেখা গেল দোকানের সামনে সাঁটা কাগজে লেখা “যে কোনও জিনিস ক্রয়ে ৫০শতাংশ ছাড়।”
সারা বছরের তুলনায় বেশ কম দামে মিলছে ডিজাইনার পোশাকও। তাই নামীদামি দোকানেও শ’য়ে শ’য়ে লোকের ভিড়। ঘণ্টাখানেক সময় ব্যয় না করতে পারলে দোকানের ভিতরে পা ফেলা অসম্ভব। ঠান্ডার মধ্যে এত ক্ষণ অপেক্ষা করা। তা-ও আবার ভিড়ে ঠেলাঠেলি। খদ্দেরদের কষ্ট লাঘব করতে তাই জিভে জল আনা খাবারের ব্যবস্থা করেছেন দোকান মালিকরাই। লাইনে ঘুরে ঘুরেই খাবার পরিবেশন করছেন কর্মীরা। মেনুতে রয়েছে হট চকলেট থেকে ধোঁয়া ওঠা সলোমন ক্যানাপিস। শরীর গরম রাখতে কোনও কোনও দোকান থেকে দেওয়া হচ্ছে কম্বলও।
‘বক্সিং ডে’-তে কেনাকাটা করতে লন্ডনের রাস্তায় মানুষের ঢল। ছবি: এএফপি
ইয়াল কেডেন ইজরায়েলের বাসিন্দা। লন্ডন ঘুরতে এসে এই প্রথম বক্সিং ডে-র অভিজ্ঞতা। ব্যাগ আর জুতো কিনতে সকাল সাড়ে ছ’টা থেকে লাইন দিয়েছেন। বললেন, “অসাধারণ ব্যাপার। আমাদের ইজরায়েলে এমন হয় না।”
চিনের ওয়াং তিয়ানই পড়াশোনা করতে ব্রিটেনে আসেন। থাকেন লিভারপুলে। এ বছর ছুটি কাটাতে তাঁর বান্ধবীও এসেছেন লন্ডনে। কেনাকাটার দৌড়ে ইয়ালের থেকেও এগিয়ে ওয়াং। দিনের আলো ফোটার আগেই ভোর সাড়ে ৪টে থেকে লাইন দেন রাস্তায়। ৯টায় যখন দোকান খোলে, বাইরে তখন পেল্লাই লম্বা লাইন। কী বলছেন দোকান মালিকরা?
“এমনটাই আশা করেছিলাম”, বললেন এক নামজাদা দোকানের কর্তা। জানালেন, অন্তত লাখ খানেক মানুষের জমায়েতের সম্ভাবনা দেখছেন তাঁরা। আগামী কয়েক দিনে এ ভিড়ের রাশ কাটবে না বলেও মনে করছেন তাঁরা। একই কথা শোনা গেল অন্য এক দোকান মালিকের মুখে। দেড় থেকে দু’লক্ষ মানুষের চাপ সামলাতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাঁরা।
ঠান্ডা আর ভিড় এড়িয়ে কেনাকাটার ব্যবস্থাও রয়েছে। গত কাল বাড়িতে বসেই অন-লাইনে পছন্দের জিনিস কিনে ফেলেছেন কয়েক কোটি লোক। ওয়েবসাইট বলছে সংখ্যাটা প্রায় ১২ কোটি। আজ দিনের শেষে সে রেকর্ডও ভাঙবে, দাবি অনেকেরই।
কেনাকাটা, ভিড়-হই-হট্টগোল, আলোর রোশনাই থেকে হট চকলেটের ধোঁয়ায় চাপা পড়েছে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বাসিন্দাদের হাহুতাশ। সেখানে বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জলের অভাব। জলমগ্ন পথঘাট। বাড়ি থেকে এক পা বেরনোর উপায় নেই, উপহারের আশা করা তো বাড়াবাড়ি। নতুন বছরের শুরুটা অন্তত ভাল কাটুট, আশায় বুক বেঁধেছেন তারা।

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.