কাঁটার জায়গা বদল করে ফের চলছে লোহা পাচার
পুলিশ কমিশনারেট গঠনের পরে বেআইনি কয়লা ও লোহা কারবারে ভাটা পড়েছিল বলে দাবি করে এসেছে পুলিশ। আসানসোল-দুর্গাপুরে কয়লা পাচারে টানা রাশ এখনও অনেকটা বহাল আছে বলে মনে করেন শিল্পাঞ্চলবাসীর একাংশ। কিন্তু অবৈধ লোহার কারবার ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে, মানছে পুলিশ।
দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলে বন্ধ পড়ে থাকা নানা কারখানা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ চুরি যাওয়ার অভিযোগ উঠছিল বেশ কিছু দিন ধরেই। সম্প্রতি কাঁকসা ও দুর্গাপুরের মায়াবাজার থেকে লোহা কারবারে যুক্ত অভিযোগে দু’জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাদের জেরা করেই জানা গিয়েছে, লোহা মাফিয়াদের দাপট ছড়াচ্ছে মহকুমার নানা এলাকায়, দাবি পুলিশের একটি সূত্রের। পাচারকারীরা চোরাই লোহা যেখানে কারবারিদের কাছে বিক্রি করে, সেখানে ওজন করে লোহার দাম মেটানো হয়। সেগুলিকে ‘কাঁটা’ বলা হয়। আগে যে সব জায়গায় কাঁটা ছিল, পুলিশি অভিযানের পরে তার অধিকাংশই অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে গিয়ে ফের কাঁটা চালু করা হয়েছে বলেও পুলিশের কাছে খবর।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৪ নভেম্বর দুর্গাপুরে মুচিপাড়ার কাছে খাটপুকুর এলাকায় উদ্ধার হয় বেআইনি লোহার কারবারি দিলীপ তিওয়ারির গুলিবিদ্ধ দেহ। পুলিশ তিন জনকে ধরে জেরা করে খুনের পিছনে বরুণ চট্টরাজ নামে গোপালপুরের এক ছাঁট লোহার কারবারির হাত রয়েছে বলে খবর পায়। পুলিশের দাবি, বেআইনি লোহার পুরো কারবার নিজের হাতে নেওয়ার জন্যই বরুণ দিলীপকে খুন করে বলে জেরায় জানা গিয়েছে। পুলিশের দাবি, বেশ কয়েক মাস ধরেই তাদের কাছে খবর ছিল, বরুণ গোপালপুরে লোহার কারবার চালাচ্ছে। কিন্তু এলাকার মানুষজনের কাছে তাঁর ভাল ভাবমূর্তি থাকায় প্রত্যক্ষ প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছিল বলে জানায় পুলিশ। শেষ পর্যন্ত খুনের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত হিসেবে গত ১৮ ডিসেম্বর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে। হেফাজতে নিয়ে তাকে জেরা করে কাঁকসা থানার পুলিশ।
এরই মধ্যে গত ২০ ডিসেম্বর ডিপিএলের কিছু যন্ত্রাংশ চুরি যায়। পুলিশ কোকওভেন থানার মায়াবাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে বিনোদ চৌধুরী নামে এক বেআইনি লোহা কারবারিকে। পুলিশের দাবি, ধৃতকে জেরা করে জানা গিয়েছে, দুর্গাপুরের ডিটিপিএস ফাঁড়ি এলাকার পদ্মপুকুর, নয়াবাজার প্রভৃতি এলাকায় লোহার রমরমা কারবার চলছে। তাতে জড়িত রয়েছে এমন অন্তত সাত জনের নাম জেনেছে পুলিশ। তার মধ্যে রয়েছে মেনগেট এলাকার লোহা মাফিয়া গোপাল জায়সবাল। পুলিশ সূত্রে খবর, তদন্তে জানা গিয়েছে, বাকিরা গোপাল ও গোপালপুর থেকে ধৃত বরুণের কাঁটায় লোহা সরবরাহ করত।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, দুর্গাপুরে বন্ধ পড়ে থাকা বিভিন্ন কারখানা থেকে লোহার যন্ত্রাংশ চুরি করে এই পাচারকারীরা। ২০০৭ সালে বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরে লিক্যুইডেটরের অধীনে চলে যাওয়া ভারত অপথ্যালমিক গ্লাস লিমিটেড (বিওজিএল) কারখানার যন্ত্রাংশ সাফ করছে দুষ্কৃতীরা। আর এক বন্ধ রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানা এমএএমসি থেকে সিআইএসএফ পাহারা উঠে যাওয়ার পরেই লোহা চোরেদের লাইন পড়ে যায়। পরে পুলিশি প্রহরা বাড়ায় চোরেদের রমরমা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ছাড়া রয়েছে ডিএসপি-র স্ল্যাগ ব্যাঙ্ক। ডিএসপি থেকে বর্জ্য এবং ছাই ওয়ারিয়ায় রেললাইনের পাশে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ফেলা হয়। সেই বর্জ্যের সঙ্গে প্রচুর ছাঁট লোহা থাকে। বর্জ্য থেকে সেই লোহা বের করে পাচার করে অনেকে। ২০০৪ সালে কাঁকসার গোপালপুরের এমনই তিন জন স্ল্যাগ ব্যাঙ্কে লোহা পাচারের সময়ে ছাই এবং বর্জ্যের তলায় চাপা পড়ে মারা যান।
পুলিশ জানায়, লোহা পাচারের কাজ করে সামান্য আয়াসে যত টাকা আয় হয়, অন্য কাজে তা সম্ভব নয়। তাই মহকুমা জুড়ে লোহা মাফিয়াদের দাপট বাড়ছে। এই তালিকায় বিশেষ ভাবে রয়েছে দুর্গাপুরের মেনগেট, মায়াবাজার, কাদা রোড, কাঁকসার গোপালপুর এলাকা। এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদবের দাবি, লোহা মাফিয়াদের বাড়বাড়ন্ত রোধে তাঁরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট সব থানাকে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। এলাকায় যারা লোহার কাজ-কারবার চালায় তাদের সম্পর্কে বিশদে তথ্য জোগাড় করে অভিযানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু লোহা মাফিয়ারাই নয়, যে সমস্ত কল-কারখানা মাফিয়াদের কাছ থেকে লোহা কেনে, তাদের উপরেও নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা হয়েছে বলে এডিসিপি (পূর্ব) জানান।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.