সারদা গোষ্ঠীর ভরাডুবিতে এজেন্ট, আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য কমিশন গড়েছে রাজ্য সরকার। তা হলে অন্যান্য বিপন্ন লগ্নি সংস্থার এজেন্ট-আমানতকারীদের জন্য সেই ব্যবস্থা হবে না কেন, এই প্রশ্ন উঠেছে আগেই। এ বার একই প্রশ্ন তুলে জোটবদ্ধ হলেন সারদার মতো ঝাঁপ বন্ধ যাওয়া অন্যান্য অর্থ লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা। তাঁদের বক্তব্য, আমরা কী দোষ করলাম? ‘অল বেঙ্গল ফিনান্সিয়াল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে আজ, শুক্রবার কলকাতা-সহ বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ-কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
একই দাবিতে ইতিমধ্যে কলকাতা হাইকোর্টে একটি জনস্বার্থের মামলাও দায়ের করেছেন এক আইনজীবী। সেই মামলার শুনানি শুরু হয়েছে। রাজ্যের বিরোধী দলগুলির পক্ষ থেকেও একই দাবি জানানো হয়েছে। এজেন্ট সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আমানতকারীদের টাকা ফেরত, এজেন্টদের নিরাপত্তা, লগ্নি সংস্থায় ঝাঁপ ফেলে দেওয়ার সিবিআই তদন্ত ইত্যাদি পাঁচ দফা দাবিতে সব জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। সংগঠনের রাজ্য সভাপতি প্রদীপকুমার দাস নন্দী বলেন, “কলকাতায় শিয়ালদহ থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত মিছিল করব আমরা। মিছিল শেষে পথসভাও হবে।”
সারদার মতো অনেক সংস্থাই রাজ্যের বহু আমানতকারীর কাছ থেকে টাকা তুলে ব্যবসা গুটিয়ে নিয়েছে। ওই সব সংস্থার কর্তাদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছেন আমানতকারী ও এজেন্টরা। তাঁদের অভিযোগ, সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায়, সাংসদ কুণাল ঘোষ-সহ অনেক কর্তাকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু অন্য যে-সব বেসরকারি লগ্নি সংস্থা পাততাড়ি গুটিয়েছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই সেখানকার অভিযুক্তদের ধরতে উদ্যোগী হয়নি পুলিশ। এর ফলে আমানতকারীদের পুরো চাপটাই এসে পড়েছে এজেন্টদের উপরে।
অনেক এজেন্ট এলাকায় ঢুকতে পারছেন না বলেও সংগঠনের পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হয়েছে। এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক, ‘টাওয়ার গ্রুপ’-এর এজেন্ট সুকুমার মণ্ডলের কথায়, “কী ভাবে যে আমাদের দিন কাটছে, বোঝাতে পারব না! আমানতকারীরা টাকা ফেরত চেয়ে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছেন। কিন্তু টাকা তো সংস্থার কাছে রয়েছে। এই সঙ্কট থেকে মুক্তি চাই।” রায়গঞ্জের তুলসীপাড়ার বাসিন্দা সোনা চাকি ‘ইউনিস্টার’ নামের এক সংস্থার এজেন্ট ছিলেন। সারদা কাণ্ডের পরে সেটিও বন্ধ হয়ে যায়। সোনাবাবু বলেন, “সংস্থা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার মতো বহু এজেন্ট নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। কোনও ক্রমে আমানতকারীদের ঠেকিয়ে রেখেছি আমরা।”
এই পরিস্থিতিতে স্থানীয় ভাবে অনেক জায়গাতেই সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছেন বিভিন্ন লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা। অতনু মল্লিক ঠাকুর নামে বাঁকুড়ার এক এজেন্ট বলেন, “আমরা, সব লগ্নি সংস্থার এজেন্টরা মিলে ছোটখাটো সংগঠন গড়েছি। জেলা জুড়ে সংগঠন বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে।” তবে অনেক জায়গায় সংগঠন তৈরি করতে গিয়ে ধাক্কাও খাচ্ছেন এজেন্টরা। সানমার্গ সংস্থার দুর্গাপুরের এক এজেন্ট বলেন, “আমাদের ওখানেও এজেন্ট সংগঠন গড়ার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক মতভেদে শেষ পর্যন্ত সেই সংগঠন গড়ে তোলা যায়নি।”
সংগঠন গড়ে তুলতে পারুন বা না-পারুন, সর্বত্রই এজেন্টদের দাবি, সারদার মতো তাঁদের বিষয়টিও সরকার সহানুভূতির সঙ্গে দেখুক। মুর্শিদাবাদের নিমতিতার এজেন্ট জাহাঙ্গির মোমিন বলেন, “সারদা নিয়ে হইচই হচ্ছে। টাকা ফেরতের ব্যবস্থাও হয়েছে। তা হলে অন্য লগ্নি সংস্থার ক্ষেত্রে সরকার তৎপর হবে না কেন?’’ সাহেবনগরের এজেন্ট আকবর শেখের দাবি, “সরকার কেন দু’রকম নিয়ম করবে? রাজ্যকে আমাদের টাকা ফেরতেরও ব্যবস্থা করতে হবে।’’
|
৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছি: কুণাল |
সারদা গোষ্ঠীর একটি সংবাদ চ্যানেলের কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনকে তিনি ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছিলেন বলে আদালতে জানালেন সাংসদ কুণাল ঘোষ। পার্ক স্ট্রিট থানায় ওই চ্যানেলের কর্মীদের দায়ের করা একটি মামলায় বৃহস্পতিবার কুণালবাবুকে দমদম জেল থেকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলে পুলিশ। সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস আদালতে জানান, গত বছর এপ্রিল থেকে এ বছর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কর্মীদের প্রায় আট লক্ষ টাকা প্রভিডেন্ট ফান্ড, ইএসআই এবং টিডিএস জমা পড়েনি। সংস্থার সিইও হিসেবে কুণালবাবু তার দায় এড়াতে পারেন না। সওয়াল করার অনুমতি পেয়ে কুণালবাবু বলেন, সারদা-প্রধান ফেব্রুয়ারিতে ই-মেল করে চ্যানেলের কর্মীদের জানান, সংস্থার আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। তাই বেতন দিতে দেরি হবে। সাংসদের দাবি, ওই মেল পাওয়ার পরেই তিনি কর্মীদের বেতনের জন্য সারদা-প্রধানের হাতে নিজের ৫০ লক্ষ টাকা দেন। মুখ্য মেট্রোপলিটন বিচারক বিশ্বরূপ শেঠ ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত কুণালবাবুকে পুলিশি হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
|