গ্রেফতার হওয়ার পরে নিজেই গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছিলেন সারদা কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাংসদ কুণাল ঘোষ। আর কুণালবাবু যাতে ওই জবানবন্দি দিতে না-পারেন, সেই জন্য আদালতের হস্তক্ষেপ চেয়ে আসছিল সরকার পক্ষ। সোমবার হঠাৎই পাল্টে গেল পরিস্থিতি। কুণালবাবু আর গোপন জবানবন্দি দিতে চান না বলে এ দিন বিধাননগর আদালতে জানিয়ে দিলেন তাঁর আইনজীবী।
কুণালবাবুর এই আকস্মিক সিদ্ধান্ত পরিবর্তনে আইনজীবীরাও বিস্মিত। কারণ, গ্রেফতারির সময় থেকে কখনও ভিডিও ফুটেজে, কখনও বা ফেসবুকে তৃণমূল নেতানেত্রীদের নাম এনে শোরগোল তুলছিলেন কুণালবাবু। গোপন জবানবন্দি দেওয়ার জন্য অধীর হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কুণালবাবুর তরফে আইনজীবীরা বারবার অভিযোগ করে আসছিলেন, সরকার পক্ষই গোপন জবানবন্দির পথে বাধা সৃষ্টি করে চলেছে। কৌঁসুলি মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এর মধ্যে কী এমন ঘটল যে, জবানবন্দি দেওয়া থেকে পিছিয়ে এলেন ওই সাংসদ? এ দিন জবাব মেলেনি। কুণালবাবুর আইনজীবী সৌম্যজিৎ রাহা আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল গোপন জবানবন্দি দিতে চান না। বিচারক জানিয়ে দেন, এই বিষয়টি নিয়ে ২৭ ডিসেম্বর শুনানি রয়েছে। সে-দিনই ওই প্রসঙ্গ উঠবে।
সারদা কাণ্ডে গ্রেফতার হওয়ার আগেই এই কেলেঙ্কারি নিয়ে একটি ভিডিও রেকর্ডিং করেছিলেন কুণালবাবু। সেই ভিডিও ফুটেজে তৃণমূলের বেশ কিছু শীর্ষ নেতার নাম ছিল। কুণালবাবু গ্রেফতার হওয়ার পরে ফুটেজটি সংবাদমাধ্যমের হাতে আসে। পুলিশি হাজতে থাকাকালীন ফেসবুকে তাঁর নাম করে একটি পোস্ট করা হয়। তাতেও ওই নেতাদের নাম ছিল। কুণালবাবুও বারবার বলতে থাকেন, সময় এলেই তিনি সারদা কেলেঙ্কারির ব্যাপারে সব বলবেন।
কুণালবাবুর ওই ভিডিও ফুটেজ এবং ফেসবুকের পোস্টকে অবশ্য তদন্তের আওতায় আনেনি বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। তার পরেই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে গোপন জবানবন্দি দিতে চেয়ে আর্জি জানান কুণালবাবু। আইনজীবীদের বক্তব্য ছিল, সারদা মামলায় কুণালবাবুর জবানবন্দি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। কারণ, তিনি ওই জবানবন্দিতে যে-সব নাম বলবেন, সেগুলি আদালতে নথিভুক্ত হয়ে যাবে। ওই সব ব্যক্তিকে জেরা করার জন্য চাপ তৈরি হবে।
কিন্তু আদালতে কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দির বিরোধিতা করে সরকার পক্ষ। বিশেষ তদন্তকারী দলও জানায়, তদন্তের জন্য কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দির দরকার নেই। ২ ডিসেম্বর কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। তার আগেই অন্য মামলার সূত্রে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় হাওড়ায়। পরে কুণালবাবুর গোপন জবানবন্দি নিয়ে মামলার শুনানি শুরু হয়। এর মধ্যেই তিনি জবানবন্দি দেওয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছেন বলে কুণালের আইনজীবী আদালতে জানালেন।
কেন এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন? ওই সাংসদের আইনজীবী জানান, দু’টি কারণে মক্কেল উৎসাহ হারিয়েছেন। প্রধান কারণ, কুণালবাবুকে যে-মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে (বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ড জমা না-দেওয়ার মামলা), তার চার্জশিট ১৩ ডিসেম্বর জমা পড়েছে। তাই তাঁর জবানবন্দি কতটা কাজে লাগবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁর জবানবন্দির ব্যাপারে রাজ্য যে-ভাবে টালবাহানা করছে, তাতেও তিনি উৎসাহ হারিয়েছেন বলে জানান তাঁর আইনজীবী।
|