সারদা গোষ্ঠীর আর্থিক কেলেঙ্কারি ধরা পড়ার পরে যে-প্রশ্নটা বড় হয়ে উঠেছে, সেটা হল, বিপুল পরিমাণ অর্থ গেল কোথায়? সেই রহস্যের সমাধান হয়নি। তবে সারদার অন্যতম ডিরেক্টর দেবযানী মুখোপাধ্যায় শ্যামল সেন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছেন, সংস্থার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের দ্বিতীয় স্ত্রী পিয়ালি সেন সংস্থা থেকে প্রচুর টাকা নিয়েছেন। পুলিশের কাছেও একাধিক বার এই অভিযোগ করেছেন তিনি। কিন্তু পুলিশ পিয়ালির বিরুদ্ধে কোনও মামলাই দায়ের করেনি। এত দিনে সেই কাজটা করলেন প্রভিডেন্ট ফান্ড (পিএফ) কর্তৃপক্ষ।
সারদার অন্যতম ডিরেক্টর পিয়ালির বিরুদ্ধে বিধাননগর পুলিশের কাছে এফআইআর করেছে পিএফ দফতর। ওই সংস্থার সংবাদমাধ্যম শাখার কর্মীদের একাংশের বেতন থেকে পিএফ বাবদ টাকা কেটেও তা জমা না-দেওয়ায় পিয়ালির বিরুদ্ধে প্রতারণা ও বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে। পিএফ-কর্তৃপক্ষ একই অভিযোগ দায়ের করেছেন সুদীপ্ত এবং সাংসদ কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধেও।
পুলিশ জানায়, গত বৃহস্পতিবার প্রভিডেন্ট ফান্ডের এক এনফোর্সমেন্ট অফিসার বিধাননগরে পুলিশের কাছে বেঙ্গল মিডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের (সারদার সংবাদমাধ্যম) বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ এবং প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেন। ওই অফিসারের দায়ের করা অভিযোগে পিয়ালি ছাড়াও নাম রয়েছে সুদীপ্ত, দেবযানী, কুণাল, সোমনাথ দত্ত-সহ সাত জনের। অভিযুক্ত প্রত্যেকেই সারদা সংস্থার ডিরেক্টর ছিলেন। সুদীপ্ত, দেবযানী, কুণাল ও সোমনাথ এখন জেলে আছেন। কিন্তু পিয়ালি নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিধাননগর পুলিশ সূত্রের খবর, প্রভিডেন্ট ফান্ড কর্তৃপক্ষের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, ২০১০ সালের মে থেকে ২০১৩-র জানুয়ারি পর্যন্ত কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের প্রায় তিন লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা জমা দেননি সারদার সংবাদমাধ্যম কর্তারা। কর্মীদের পিএফ ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ দায়ের হওয়ার পরে শুক্রবার আলিপুর জেলে গিয়ে সারদার কর্ণধারকে এক দফা জেরা করা হয়। পুলিশি জেরার মুখে সুদীপ্ত অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।
২০১০-’১১ সালে সারদা সংস্থার ব্যবসা খুব ভাল ভাবে চলার সময়েও সুদীপ্ত তাঁর কর্মীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা জমা দেননি কেন?
সুদীপ্ত এই প্রশ্নের কোনও জবাব দেননি বলে গোয়েন্দারা জানান। পিএফ-কর্তৃপক্ষের অভিযোগ নিয়ে কুণালকেও জেরা করা হচ্ছে।
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে সুদীপ্তের দায়ের করা মামলার শুনানি হয়। তাঁর আইনজীবী আশিস সান্যাল বলেন, এর আগে বিচারপতি অসীম বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ বলেছিল, স্পেশ্যাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট-কে শক্তিশালী করে সারদায় তদন্তের কাজ করতে হবে। একই সঙ্গে বিশেষ আদালত গড়ে সারদা কাণ্ডের বিচার করতে বলেছিল ডিভিশন বেঞ্চ। কিন্তু এখনও তা হয়নি। এই অবস্থায় সুদীপ্তকে এক থানা থেকে অন্য থানায় টানাহ্যাঁচড়া করা হচ্ছে। সুদীপ্তবাবুর ওজন ১৮ কিলোগ্রাম কমে গিয়েছে। আবেদনে তিনি বলেছেন, তাঁকে কোনও একটি জায়গায় রেখে তদন্ত হোক। কারণ, তিনি যদি মারা যান, আমানতকারীরা একটি টাকাও ফেরত পাবেন না। বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় মামলাটি গ্রহণ করে জানান, আজ, মঙ্গলবার শুনানি হবে। আবেদনের প্রতিলিপি পৌঁছে দিতে হবে সরকারি প্রসিকিউটর (জিপি) অশোক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে।
|