বাবা -মায়ের দেখভালের ব্যাপারে বিবাহিত ছেলের উপরে যদি নির্ভর করা যায়, বিবাহিতা মেয়ের উপরে তা করা যাবে না কেন, প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাইকোর্ট। তাদের আরও প্রশ্ন, বাবার মৃত্যুতে তাঁর সংসার দেখবেন এই আশ্বাসে বিবাহিত ছেলেকে যদি চাকরি দেওয়া যায়, সমান আস্থা রেখে বিবাহিতা মেয়েকে চাকরি দেওয়া হবে না কেন?
বাবার পরিবারের ভরণপোষণের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েতে বিভেদ করার যুক্তি কী, রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে তা জানানোর জন্য সোমবার নির্দেশ দেন বিচারপতি বিশ্বনাথ সমাদ্দার। উচ্চ আদালতের বক্তব্য, সমাজ ধরে নেয়, বিয়ের পরে মেয়েরা বাপের বাড়ির সদস্য থাকেন না। এই দৃষ্টিভঙ্গি বদলের সময় এসেছে।
বীরভূম জেলার বড়া দু’নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতে চৌকিদার ছিলেন হারুচন্দ্র দাস। ২০১১ সালের ১১ মার্চ তিনি কর্মরত অবস্থায় মারা যান। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে হারুবাবুর বিবাহিতা মেয়ে পূর্ণিমা দাস বাবার পরিবারকে বাঁচানোর জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতরে চাকরির আবেদন করেন। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে পঞ্চায়েত দফতর তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়ে বলে, কর্মরত অবস্থায় কারও মৃত্যু হলে তাঁর বিবাহিতা মেয়েকে চাকরি দেওয়া যায় না। কারণ, বিবাহিতা কন্যার উপার্জিত টাকা শ্বশুরবাড়িতেই খরচ হয়ে যাবে। তিনি চাকরি পেলে আখেরে মৃতের পরিবারের কোনও সুরাহাই হবে না।
সরকার চাকরির আবেদন খারিজ করে দেওয়ায় পূর্ণিমাদেবী হাইকোর্টে মামলা করেন। আবেদনকারিণীর আইনজীবী অঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, “একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচিত সরকার যদি বিবাহিত ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়ের মধ্যে এমন বিভাজন করে, তা হলে নারীমুক্তির যে -স্বপ্ন আমরা দেখছি, তা কোনও দিনই সফল হবে না। সরকারের এই সিদ্ধান্ত থেকে বোঝা যায়, বিবাহিত ছেলেকে তারা যে -মূল্য দিচ্ছে, তাঁর উপরে যে -নির্ভরতা দেখাচ্ছে, বিবাহিতা মেয়েদের তারা সেই মূল্য দিতে রাজি নয়।”
তার পরেই সরকারের এই ধরনের সিদ্ধান্তের সারবত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন বিচারপতি সমাদ্দার। তিনি বলেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে তিনি কোনও গ্রহণযোগ্য যুক্তি দেখতে পাচ্ছেন না। বাবার পরিবারের দেখভালের ক্ষেত্রে বিবাহিতা মেয়ের সঙ্গে বিবাহিত ছেলের কোনও ফারাক আছে বলে মনে করে না হাইকোর্ট। বিচারপতি সমাদ্দারের প্রশ্ন, বিবাহিত ছেলে যদি বাবা -মায়ের সংসার দেখতে পারেন, বিবাহিতা মেয়ে পারবেন না কেন? বিবাহিতা মেয়ে যদি অর্থনৈতিক ভাবে স্বাধীন হন, তা হলে তিনি কেন বিবাহিত ছেলের মতো বাপের বাড়ির সংসার দেখতে পারবেন না? পিতৃ -পরিবারের দেখভালের যুক্তিতে সমাজ ছেলে ও মেয়ের মধ্যে যে -ফারাক করে আসছে, সেটার অবলুপ্তি দরকার। এবং যে -যুক্তি থেকে এই ফারাকের বিষয়টি চলে আসছে, তারও পরিবর্তন দরকার বলে মনে করে হাইকোর্ট। |