খাস কলকাতায় বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর নেতৃত্বাধীন মিছিলে হামলার ঘটনার পরে শাসক ও বিরোধী, দু’দিক থেকেই তোপের মুখে পড়ল পুলিশ! ঘটনার সময়ে এবং তার পরে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগে আজ, মঙ্গলবার লালবাজার অভিযানের ডাক দিয়েছে কলকাতা জেলা বামফ্রন্ট। আবার রবিবারের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে প্রদীপ পূততুণ্ড ওরফে পল্টু নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে তৃণমূলের রোষের মুখে পড়েছে কাশীপুর থানার পুলিশ। গ্রেফতারির প্রতিবাদে বেশ কিছু তৃণমূল সমর্থক থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শিয়ালদহ আদালত সোমবারই ধৃত পল্টুর জামিনও মঞ্জুর করেছে।
কলকাতা পুরসভার ১ ও ২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের ‘সন্ত্রাসে’র প্রতিবাদে এবং সারদা-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের দাবিতে রবিবার বামেদের মিছিল চিড়িয়া মোড় ও দমদম রোডে দফায় দফায় হামলার মুখে পড়েছিল। মিছিলে আসা অটো ভাঙচুর হয়েছিল, চালক প্রহৃত হয়েছিলেন। মিছিলের দিকে উড়ে এসেছিল ইট, জুতো, ঝাঁটা। বিমানবাবু অল্পের জন্য রক্ষা পেলেও ইটের আঘাতে জখম হন লোপামুদ্রা চট্টোপাধায়, কমল সরকার-সহ ৮ জন বাম সমর্থক। ওই হামলাকারীদের শাস্তির দাবিতেই আজ লালবাজার অভিযান করবে বামেরা। কলকাতা জেলা বামফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপ সেন এ দিন বলেন, “যে ভাবে তৃণমূল কাউন্সিলর শান্তনু সেনের নেতৃত্বে পুলিশের সামনেই মিছিলে হামলা হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শান্তনুবাবু-সহ একাধিক ব্যক্তির নামে এফআইআর করা সত্ত্বেও এক জন অভিযুক্তকেও গ্রেফতার করা হয়নি। প্রতিবাদেই লালবাজার অভিযান।” শান্তনুবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। পুলিশ জানিয়েছে, রবিবার বাম বা তৃণমূল, কোনও পক্ষেরই মিছিলের অনুমতি ছিল না।
রাজা সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে আজ বিকাল ৫টায় মিছিল নিয়ে আরএন মুখার্জি রোড দিয়ে লালবাজারের দিকে অভিযান করবে বামেরা। যেখানে মিছিল বাধা পাবে, সেখানেই বাম কর্মীরা বসে পড়বেন বলে দিলীপবাবু জানান। তাঁর কথায়, “পর দিন, বুধবার বড়দিন। তা মাথায় রেখেই মিছিলের রুট ছোট করা হয়েছে। দোষী তৃণমূল কর্মী ও পুলিশ-কর্মীদের শাস্তির দাবিতে পুলিশ কমিশনারকে দাবিপত্র দেওয়া হবে।”
দোষীদের গ্রেফতার নিয়েই অবশ্য এক প্রস্ত বিতর্ক বেধেছে। মিছিলে হামলার অভিযোগেই কাশীপুর থানার পুলিশ রবিবার রাতে দমদম রোডের বাসিন্দা পল্টুকে গ্রেফতার করে। পুলিশের বক্তব্য, তিনি এলাকায় তৃণমূল কর্মী বলেই পরিচিত। আহত বাম সমর্থক কমলবাবু রবিবার বেশ কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থকের বিরুদ্ধে কাশীপুর থানায় যে অভিযোগ দায়ের করেন, তার ভিত্তিতেই পল্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশের বক্তব্য। কিন্তু থানার সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে তৃণমূল সমর্থকেরা দাবি করেছেন, ধৃতের সঙ্গে হামলার ঘটনার কোনও যোগ নেই। এই ব্যাপারে কলকাতা জেলা ফ্রন্টের আহ্বায়ক দিলীপবাবুও বলেছেন, “শুনেছি, জামিনযোগ্য ধারায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু মূল হামলাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে! তাদের গ্রেফতার না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।” মিছিলে হামলার ঘটনায় পৃথক একটি অভিযোগ দায়ের হয়েছে সিঁথি থানায়। তবে সেই অভিযোগে সোমবার রাত পর্যন্ত কেউ গ্রেফতার হয়নি বলেই জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ-প্রশাসনের উপরে চাপসৃষ্টির চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বামেরা। কাশীপুরে মিছিলে ‘তৃণমূলের হামলা’র নিন্দা করেন এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক দেবজ্যোতি দাস। সিপিএমের ছাত্র সংগঠনও অবাধ ও সুষ্ঠু ছাত্র-ভোটের দাবিতে আগামী ৬ জানুয়ারি শিয়ালদহ থেকে কলেজ স্ট্রিট মিছিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। হামলায় আহতদের এ দিন দেখতে গিয়েছিল বামফ্রন্টের একটি প্রতিনিধিদল। |