সরকারি প্রকল্পে বাধা, অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাই
রাজ্য পূর্ত দফতরের প্রকল্পে বাধা দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসক দলেরই এক পূর্ত কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। রবিবার দক্ষিণ দিনাজপুরের হরিরামপুরে জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ শুভাশিস পাল দলবল নিয়ে তাদের এক ইঞ্জিনিয়ার ও এক ম্যানেজারকে মারধর করেন বলে অভিযোগ সরকারি ঠিকাদার সংস্থার। ওই রাতেই জেলার এসপি-র কাছে ই-মেলে অভিযোগ জানানো হয়েছে বলেও তাদের দাবি। কিন্তু প্রশাসনের সাড়া না মেলায় বৃহস্পতিবারেও তারা কাজ শুরু করেনি। কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে, কাজ শুরু করার ঝুঁকি নিতে নারাজ ঠিকাদার সংস্থার কর্তারা।
শুভাশিস পাল।
— নিজস্ব চিত্র।
বৃহস্পতিবারই পূর্ত দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “কলকাতা থেকে ফিরে বিষয়টা দেখব।” তবে জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর বক্তব্য, “ওই ঠিকাদার সংস্থা এসপি-র কাছে অভিযোগ জানিয়েছে বলে শুনেছি। দ্রুত যাতে ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়, সেটা দেখছি।” এসপি প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় প্রথমে বলেন, “এমন অভিযোগ পাইনি।” পরে ঠিকাদার সংস্থার মেল-এর কথা শুনে বক্তব্য, “মেলটা আগে দেখি। তার পরে ব্যবস্থা নেব।” অভিযুক্ত তৃণমূল নেতার দাবি, ঘটনার সময় তিনি হাজির ছিলেন না। হরিরামপুরে বাসস্ট্যান্ডের দাবি দীর্ঘ দিনের। মাস ছ’য়েক আগে পূর্ত দফতরের উদ্যোগে স্থানীয় তিন মাথার মোড়ে প্রায় তিন বিঘা জমির উপরে বাসস্ট্যান্ড ও মার্কেট কমপ্লেক্স প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ব্যয় ধরা হয় ৪ কোটি ৬০ লক্ষ। বরাত পায় রাজ্য সরকার অধিগৃহীত কলকাতার সংস্থা ‘ওয়েস্টিং হাউস স্যাক্সবি ফার্মার’। সংস্থার প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর সুবীর দত্ত জানান, রবিবার বিকেল ৪টে নাগাদ থামের রড বাঁধার কাজ চলছিল। কাজ করছিলেন ইঞ্জিনিয়ার অসীম দাস এবং ম্যানেজার মহম্মদ ইয়াসিন। সেই সময় ‘হামলা’ হয় তাঁদের উপরে।মহম্মদ ইয়াসিনের দাবি, আচমকা শুভাশিসবাবুর নেতৃত্বে এক দল লোক দরজা ভেঙে ঢুকে বলতে থাকে, ‘বাসস্ট্যান্ডের কাজে দেরি হচ্ছে কেন? চারদিক টিন দিয়ে ঘিরে কী এত কাজ হচ্ছে?’ ইয়াসিনের অভিযোগ, “জবাবের অপেক্ষা না করে শুভাশিসবাবু বাঁশ দিয়ে পেটান অসীমবাবুকে। আমারও হাতে লাগে। কিছু ক্ষণ তাণ্ডব চালিয়ে কাজ বন্ধ রাখার হুমকি দিয়ে চলে যান ওঁরা।” হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ওই দু’জনের চিকিৎসার পরে রাতে এসপি-র কাছে মেল করা হয় বলে জানান সুবীরবাবু। তাঁর দাবি, “যে ভাবে হামলা হয়েছে, তার পরে আর কর্মীরা অভিযোগ জানাতে থানায় যেতে ভরসা পাননি।” ঠিকাদার সংস্থা সূত্রের খবর, প্রথম দিকে প্রকল্পের ‘ড্রয়িং’ একাধিক বার বদল হয় এবং শ্রমিক-সমস্যায় তাদের কাজে প্রত্যাশিত গতি আসেনি।
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেল, প্রকল্প এলাকা ফাঁকা। হাত দশেক দূরে রাস্তার অন্য পারে তৃণমূলের ব্লক কার্যালয়। সেখানে বসে যুব তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সাজিদ আলম চৌধুরীর দাবি, ঠিকাদার সংস্থার অভিযোগ ভিত্তিহীন। তাঁর বক্তব্য, “৬ মাস আগে হরিরামপুর বাসস্ট্যান্ড তৈরি শুরু হলেও কাজের অগ্রগতি নেই। দু’জন কর্মী নিয়ে টিন দিয়ে ঘিরে ভিতরে কী কাজ হচ্ছে, তা জানতে গিয়েছিলেন স্থানীয়রা। কারণ, বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া সরু রাস্তায় নিত্য যানজট ও দুর্ঘটনা হয়। তাই জনতাই খেপে গিয়ে এটা করেছে।” তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বহু বাসিন্দা জানান, রবিবার বিকেলে হরিরামপুরের ওই প্রকল্প এলাকায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে দেখা গিয়েছে। তৃণমূলের অন্দরেরও খবর, পছন্দের ঠিকাদার প্রকল্পের দায়িত্ব না পাওয়ায় খুশি হননি জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ। যদিও শুভাশিসবাবু বলেন, “এ সব মনগড়া কথা। এমন ঘটনার কথা জানি না। রবিবার ওখানে ছিলামও না।”
কাজ বন্ধ। হরিরামপুরের নির্মীয়মাণ বাসস্ট্যান্ডে। ছবি: অমিত মোহান্ত।
এমনিতেই জেলায় জেলায় শাসক দলের নেতা-কর্মী বা জনপ্রতিনিধিদের বিরুদ্ধে এমন ঘটনায় জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ আসছে। ক’দিন আগে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ায় দলীয় উপপ্রধানের নাম জড়ানোয় বিড়ম্বনায় পড়েন তৃণমূল নেতৃত্ব। এই অবস্থায় আমজনতার অশান্তির কারণ ঘটানো বা দলের ভাবমূর্তির ক্ষতি যে বরদাস্ত করা হবে না, সেই বার্তা দিতে শুরু করেছেন রাজ্য স্তরের নেতারা। তবে দক্ষিণ দিনাজপুরের তৃণমূলের সভাপতি তথা আইন ও বিচার বিভাগের পরিষদীয় সচিব বিপ্লব মিত্র বলেন, “হরিরামপুর বাসস্ট্যান্ডের কাজ বন্ধ! কই, আমি তো জানি না। জেলায় ফিরে দেখছি।”
ঠিকাদার সংস্থার কর্তাদের আক্ষেপ, “মুখ্যমন্ত্রী সরকারি কাজ ফেলে না রাখতে বলছেন। আমরা কাজে গতিও আনছিলাম। কিন্তু ওই ঘটনার পরে আর ওই এলাকায় গিয়ে কাজ চালু করার সাহস হচ্ছে না।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.