নবান্ন নয়। নয়াদিল্লি।
পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে রাজ্য নয়, এ বার কেন্দ্রীয় সরকারের উপরেই চাপ বাড়াবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। বৃহস্পতিবার রাজভবনে জিটিএ প্রধানের পদে শপথ নেওয়ার পরেই মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ জানিয়ে দিলেন, রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাঁদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে। রাজ্যের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘এক পরিবারের সদস্যদের মতো’। কিন্তু পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিতে কেন্দ্রের উপরে চাপ বাড়িয়ে আন্দোলন চলবে। প্রায় সারা বছরই কিন্তু মোর্চার অবস্থান ছিল ঠিক উল্টো। রাজ্য সরকারের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হওয়ার পরে গুরুঙ্গ নয়াদিল্লির উপরেই আস্থা রেখেছিলেন। সম্প্রতি পরিস্থিতি বদলায়।
এখন যে নবান্নই তাঁর প্রধান ভরসার জায়গা, তা রাজভবনে শপথ নেওয়ার পরে পরিষ্কার বুঝিয়ে দিয়েছেন গুরুঙ্গ। গুরুঙ্গ বলেন, “পরিবারে এক সঙ্গে থাকলে মাঝেমধ্যে কখনও গোলমাল বিবাদ হয়ে থাকে, কিন্তু সে সব ভুলেই সবাই যেমন পরিবার চালায়, আমরাও তেমনই জিটিএ চালাব। আমাদের একমাত্র কাজ এখন পাহাড়ের উন্নয়ন।” খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথাতেও ছিল একই সুর। তিনি বলেন, “বিমলও আজ শপথ নিলেন। আজকের দিনের শপথ, পশ্চিমবঙ্গের উন্নয়নের পথে, দাজির্লিং শান্তির পথে। রাজ্যের মন্ত্রীদের সঙ্গে গুরুঙ্গও শপথ নিলেন। আমরা সকলে এক সঙ্গেই থাকব, একটাই পরিবারের মতো।” |
তবে জিটিএ চিফের পদে এ দিন দুপুরে শপথ নেওয়ার পরেই, ফের পৃথক রাজ্যের দাবির কথা তোলেন ঘরে-বাইরে বিব্রত গুরুঙ্গ।
বিকেলে সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুকে নিজের ‘পেজে’ গুরুঙ্গ লেখেন, ‘পাহাড়ের যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের জন্য জিটিএ প্রয়োজনীয়। জিটিএ-র মাধ্যমেই এলাকার পরিকাঠামোর উন্নতিরও প্রয়োজন রয়েছে। না হলে, প্রস্তাবিত গোর্খাল্যান্ড রাজ্য অনুন্নতই থেকে যাবে। পৃথক রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে জিটিএ কাজ করবে। পাশাপাশি পৃথক রাজ্যের দাবিতে কেন্দ্রীয় সরকারের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরি করা হবে।”
কলকাতায় গিয়ে শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় গুরুঙ্গকে পাহাড়ে অবশ্য রীতিমতো সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। অখিল ভারতীয় গোর্খা লিগের সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ খাতি বলেন, “গুরুঙ্গ সকলকে বোকা বানাতে চাইছেন। পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে তিনি আবার মিথ্যে কথা বললেন।” সিপিআরএমের মুখপাত্র গোবিন্দ ছেত্রীও জানান, মোর্চা নেতৃত্ব আগে বলেছিল, জিটিএ ভাল ভাবে চলছে না। অথচ এখন সেই জিটিএ-তেই ফিরে গিয়ে তাঁরা প্রমাণ করলেন যে রাজ্য সরকার যা বলবে মোর্চা সেটাই শুনবে। তাঁর বক্তব্য, পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবি নিয়ে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে গুরুঙ্গ পাহাড়ের বাসিন্দাদের বিভ্রান্ত করতে চাইছেন।
তবে এ দিন মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি কলকাতা থেকে টেলিফোনে দাবি করেন, “পৃথক গোর্খাল্যান্ডের দাবিই আমাদের মূল দাবি। মোর্চার সভাপতি দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছেন।”
পাহাড়ের সাধারণ বাসিন্দারা অবশ্য আশা করছেন, গুরুঙ্গ ফের জিটিএ চিফের দায়িত্ব নেওয়ায় পাহাড়ে শান্তি ফিরবে। মোর্চা সূত্রে জানান হয়েছে, শপথ নিয়ে ফিরে আসার দিন গুরুঙ্গকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। মোর্চার সহ সম্পাদক তথা জিটিএ সদস্য বিনয় তামাঙ্গ জানান, ২৯ ডিসেম্বর গুরুঙ্গ দার্জিলিং ফিরবেন। সে দিন অন্তত ৬০টি গাড়ি নিয়ে মিছিল করে তাঁকে স্বাগত জানানো হবে। |
কী বলছে দার্জিলিং |
বৃহস্পতিবার রাজভবনে জিটিএ প্রধানের পদে শপথ নিলেন মোর্চা সভাপতি বিমল গুরুঙ্গ।
এই ঘটনাকে কী ভাবে দেখছেন পাহাড়ের একাধিক বাসিন্দা, ব্যবসায়ীরা? কী তাঁদের প্রত্যাশা? |
|
|
বিমল গুরুঙ্গ উন্নয়ন নিয়ে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তা পূরণ হবে হলেই আশা করছি। সড়ক এবং পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে অগ্রাধিকার দিলে ভাল হয়।
বিশ্বজিৎ সাহা, হোটেল ম্যানেজার। |
|
|
জিটিএ যখন প্রথম কাজ শুরু করে, তখন বেশ কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি চোখে পড়ে। ফের জিটিএ কাজ শুরু করায়, পাহাড়ের দীর্ঘ দিনের সমস্যাগুলির সমাধান হবে।
কমল বন্দ্যোপাধ্যায়, হোটেল মালিক |
|
|
পাহাড়ে পর্যটন বিকাশের প্রধান শর্ত হল শান্তি। বিমল গুরুঙ্গ জানিয়েছেন পর্যটনের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। তবে এ জন্য রাজ্য সরকারকেও উদ্যোগী হতে হবে।
প্রদীপ লামা, ট্যুর অপারেটর |
|
|
উন্নয়নের আশায় আছি। বিমল গুরুঙ্গ শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দেওয়ায় শিক্ষানুরাগীরা খুশি। জিটিএ শিক্ষা নিয়ে উৎসাহী হওয়ায় পাহাড়ের মানব সম্পদের উন্নতি হবে।
নরবাহাদুর সুব্বা, স্কুল শিক্ষক |
|
|
বিমল গুরুঙ্গ বেশি করে পাহাড়ের উন্নয়নের কথা বলায় আমরা আশ্বস্ত। এ বার পাহাড়ের নতুন পথ চলা শুরুর আশা রাখতেই পারি।
সঞ্জয় মণ্ডল, ওষুধের দোকানের কর্মী |
|
|
বিমল গুরুঙ্গ জিটিএ শীর্ষ পদে বসায় খুশি। এ বার উন্নয়নের জোয়ার আসবে বলেই পাহাড়ের সকলেই মনে করছেন।
সুবল সরকার, দোকান কর্মী |
|
|