সিঙ্গুরের জমি-যুদ্ধের নেতাই মন্ত্রী অধিগ্রহণের
গোড়ায় জুটমিলের শ্রমিক। তার পরে সিপিএম ছাড়া ইস্তক তৃণমূলের তৃণমূল স্তরের নেতা। সিঙ্গুরে জমি আন্দোলনের জেরে সেই বেচারাম মান্নাই এখন রাজ্যের মন্ত্রিসভায় অন্যতম উদীয়মান তারকা।
ছিলেন কৃষি দফতরের প্রতিমন্ত্রী। সে তো রইলই, এক লাফে রাজ্যের তামাম ভূমির প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বেও চলে এলেন সিঙ্গুরের ভূমিপুত্র।
সেই সিঙ্গুর, মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উড়ানে যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ডানা দিয়েছিল। যেখানে আজও জমি ফেরত না-পেয়ে দিন গুনে চলেছেন ‘অনিচ্ছুক’ চাষিরা। বেচারামের সামনে এখন তাঁদের সেই প্রতীক্ষা আর মাথার উপরে ‘বটগাছ’ (বেচারামের ভাষায়) অর্থাৎ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মজার কথা, রাজ্য যদি এখন জমি অধিগ্রহণ করতে চায়, দফতরের মন্ত্রী হিসেবে বেচারামকেই ‘হাত ময়লা’ করতে হবে। বাঁচোয়া একটাই, ভূমি দফতর যাঁর পূর্ণ দায়িত্বে সেই মুখ্যমন্ত্রীই শিল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণের ঘোর বিরোধী। যদি তিনি পরে মত পাল্টান? বেচারামের কথায়, “কোনও প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে দিদির ঘোষিত নীতি হল, গায়ের জোরে নয়, প্রয়োজনে একের জায়গায় একশো বার বোঝানো। আমারও সেটাই মূল মন্ত্র হবে।” আসলে বেচারামের সুবিধা হল, তিনি এলাকাটাকে হাতের তালুর মতো চেনেন। কৃষিজীবী মানুষের আবেগও বোঝেন অনেকের চেয়ে বেশি। সেটাই তাঁর জোরের জায়গা।
ঘরের ছেলে বেচারামকে জার্সি বদলে নেতা হতে সিঙ্গুর আগেই দেখেছিল। এখন ভূমি দফতরের মন্ত্রী হতে দেখে কেমন লাগছে?
নতুন ভূমি প্রতিমন্ত্রী। ছবি: দীপঙ্কর দে।
ন্যানো কারখানার জন্য নিজে এগিয়ে এসে জমি দিয়েছিলেন গোপালনগর সাহানাপাড়ার বিফল বাঙাল। এখন তিনি দোকান চালান। তাঁর কটাক্ষ, “উনি তো মুকুট পরে নিয়েছেন। এ বার জমি-জট খুলুন না। আমরা আমাদের জমিতে শিল্প হতে দেখি। নইলে জমি ফিরিয়ে দিন।”
সাহানাপাড়ার অনিচ্ছুক চাষি, বেচারামের গুণমুগ্ধ বলে পরিচিত লোকনাথ শী কিন্তু সাবধানী: “সবে তো কয়েক ঘণ্টা হল। বেচাদা যোগ্য বলেই নিশ্চয়ই দিদি এই নতুন দায়িত্ব দিয়েছেন। জমি তো ওঁর হাতে নেই যে ফিরিয়ে দেবেন! সে তো কোর্টের হাতে রয়েছে।”
গোপালনগরের পলিটেকনিক ছাত্র, জমিদাতা পরিবারের অমিত সাহানার পাল্টা টিপ্পনী, “কী কাণ্ড! ছিলেন উনি জমি আন্দোলনের নেতা, হলেন অধিগ্রহণের মন্ত্রী। আর রাজ্যের শিল্পের তো এমন হাল, যে শিল্পমন্ত্রীই পাল্টে ফেলতে হল!” সিঙ্গুর স্টেশন লাগোয়া কেক-পেস্ট্রির দোকানে দাঁড়িয়ে গোপালনগর ঘোষপাড়ার এক অনিচ্ছুক চাষি (নাম প্রকাশেও অনিচ্ছুক) যোগ করেন, “বেচারাম তো আগেই মন্ত্রী হয়েছে। আমাদের হাল কি একটুও বদলেছে? বরং আরও খারাপ হয়েছে, হচ্ছে। বেল পাকলে কাকের কী?” রতনপুরে বেচারামের বাড়িতে বসে তাঁর গিন্নি, হুগলি জেলা পরিষদের সদস্য করবী মান্না কিন্তু বলছেন, “ও যে কী অসম্ভব পরিশ্রমী, আমি জানি। নাওয়া নেই, খাওয়া নেই, খেটে চলে। আমি জানি, ও ঠিক কাজের কাজ করবে।” আর বেচারাম নিজে? “সিঙ্গুরের চাষিদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকব। দিদি তাঁদের জন্য কত চেষ্টা করছেন, সেটা কে না দেখছে?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.