আড়াই বছর ধরেই বন দফতরের বিভিন্ন ব্যর্থতায় মুখ্যমন্ত্রীর মেজাজের পারদ চড়ছিল। বনকর্মীদের বিশেষ ভাতা দেওয়া নিয়ে ‘গড়িমসি’ শেষমেশ পেরেকটা পুঁতেই দিল কফিনে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্ত্রীদের কাজকর্মের যে মার্কশিট তৈরি করেছিলেন, বনমন্ত্রী হিতেন বর্মন তাতে পাশ করতে পারেননি। সরকারি সূত্রের খবর, গত শনিবার সেই মার্কশিট প্রকাশের আগে টাউন হলে মন্ত্রী-সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে তাঁর সম্পর্কে ঠোঁট উল্টে মুখ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন, “বিগ জিরো পেয়েছেন আপনি!”
কেন এই রসগোল্লা?
ঢিলেঢালা মনোভাব, দফতরে প্রলম্বিত গরহাজিরা, দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে অক্ষমতা এটাই নাকি মুখ্যমন্ত্রীর চটে যাওয়ার কারণ। সচিব ছাড়া বনমন্ত্রী যে কার্যত ‘অক্ষম’, ঘনিষ্ঠদের কাছে সেই ক্ষোভও জানিয়েছিলেন মমতা। দীর্ঘ অপছন্দের তালিকায় শেষ সংযোজনটি ঘটে দিন কয়েক আগে।
গত ১৬ ডিসেম্বর সায়েন্স সিটি-তে বন দফতরের এক অনুষ্ঠানে প্রত্যন্ত এলাকায় বন সংরক্ষণের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের বিশেষ ভাতা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। মঞ্চে বসে থাকা বনমন্ত্রী এবং সচিবের দিকে তাকিয়ে তিনি বলেন, “দু’এক দিনের মধ্যেই এ ব্যাপারে নির্দেশিকা ঘোষণা করা হবে। কি, হবে তো?” মঞ্চের অন্য প্রান্ত থেকে মাথা নেড়ে সায় দেন হিতেনবাবু ও তাঁর বিভাগীয় সচিব।
কিন্তু সপ্তাহ ঘুরে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি কার্যকর করার ক্ষেত্রে বন দফতরের কোনও উদ্যোগই চোখে পড়েনি। সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, গত মঙ্গলবার বন দফতরের এক শীর্ষ কর্তার কাছে মুখ্যমন্ত্রী জানতে চান, ওই নির্দেশিকা তৈরির কাজ কতটা এগোল। স্পষ্ট উত্তর মেলেনি। এক বনকর্তার মতে, “সেই সন্ধেতেই হিতেনবাবুর বিদায়ঘণ্টা বেজে ছিল।”
বন দফতর সূত্রের খবর, বছরখানেক আগে ট্রেজারি বিধি চালু হওয়া ইস্তক বিভিন্ন তহবিলের টাকা খরচ করা আগের চেয়ে কঠিন হয়ে গিয়েছে। খোদ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্ত্বেও হিতেনবাবু ওই আইন ‘সহজ’ করার চেষ্টা করেননি বলে অভিযোগ। ফলে বরাদ্দের বহু টাকাই ফিরে গিয়েছে। যা নিয়ে হিতেনবাবুকে বার কয়েক সতর্কও করেছিলেন মমতা। তা ছাড়া, বনকর্মীদের প্রায় সাড়ে চার হাজার শূন্যপদে নিয়োগ নিয়ে ক্যাবিনেট বৈঠকে এক বারও সরব হতে দেখা যায়নি মন্ত্রীকে। কর্মীদের বিভিন্ন সংগঠন এই নিয়ে একাধিক বার স্মারকলিপি দিলেও সাড়া মেলেনি বলে অভিযোগ। মাস কয়েক আগে উদ্যান বিভাগ তুলে দেন মন্ত্রী, বিলোপ করা হয় অন্তত ৯টি বনপালের পদ। দফতরের আমলাদের একাংশ এ নিয়েও মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে নালিশ জানিয়েছিলেন।
এর পরেও অবশ্য হিতেনবাবুর হেলদোল দেখা যায়নি বলে বন বিভাগের কর্তারা জানিয়েছেন। সম্প্রতি বন দফতরের শীর্ষকর্তা ‘হেড অব ফরেস্ট’ কে হবেন, সেই দায়ও সচিবের উপরে ছেড়ে দেন তিনি। এক বনকর্তার মতে, “সমস্যা মেটানোর বদলে বরং বিভাগীয় সচিব ও আমলাদের দায়িত্ব দিয়ে উত্তরবঙ্গে নিজের নিবার্চনী এলাকায় সময় কাটাতেই মন্ত্রী বেশি পছন্দ করতেন।” মহাকরণ সূত্রের খবর, হিতেনবাবুর কাছে বার্তা গিয়েছিল, ‘অসুস্থতার কারণে’ সরে যাওয়াই ভাল। এ দিন সেই নির্দেশই পালন করলেন তিনি।
|