ক্যালেন্ডারের হিসেবে মাত্র দু’দিন। তার মধ্যেই মহানগরে পারদ নেমে গেল প্রায় পাঁচ ডিগ্রি! প্রতিবেশী বিহার-ঝাড়খণ্ড তো বটেই, বাংলারও কয়েকটি জেলায় রাতের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে নেমে গিয়েছে। আবহবিদেরা বলছেন, উচ্চচাপের বাধা কাটতেই উত্তুরে হাওয়ার হাত ধরে দক্ষিণবঙ্গে স্বমূর্তি দেখাতে শুরু করেছে শীত। আপাতত কয়েক দিন শীতের মেজাজ এমনটাই থাকবে বলে আবহবিদেরা মনে করছেন।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের হিসেব, বৃহস্পতিবার কলকাতায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, চলতি সময়ের স্বাভাবিকের থেকে এক ডিগ্রি কম। মঙ্গলবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল প্রায় ১৮ ডিগ্রি। সেখান থেকে পারদের হঠাৎ এতটা পতন কী ভাবে? আবহবিজ্ঞানীরা জানান, উত্তর ভারতে কনকনে ঠান্ডা পড়েছে। কোথাও কোথাও চলছে শৈত্যপ্রবাহও। সেই ঠান্ডাই বয়ে আসছে পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে।
সম্প্রতি ঘূর্ণাবর্ত ও উচ্চচাপের জোড়া বাধায় রাজ্যে শীত প্রায় গতি হারিয়ে ফেলেছিল। তবে বড়দিন আসতেই ফের ঠান্ডা পড়তে শুরু করে। বুধবার রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের থেকে দু’ডিগ্রি বেশি থাকলেও শীতের বড় ইনিংসের ইঙ্গিত মিলেছিল। তার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না-কাটতেই এ দিন তাপমাত্রা এক লাফে স্বাভাবিকের নীচে নেমে গিয়েছে। তা দেখেই ফের শীত স্বমেজাজে ফেরার কথা জানিয়েছেন আবহবিদেরা। তা হলে কি এত দিন শীত ছিল না?
আবহবিদদের ব্যাখ্যা, চলতি সময়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের (১৪ ডিগ্রি) নীচে না-নামলে শীত বলা যায় না। বড়দিনের আগের এক সপ্তাহে ক্যালেন্ডারে পৌষ ছিল ঠিকই। কিন্তু শীত সে-ভাবে মালুম হয়নি।
হাওয়া অফিসের খবর, রাতের তাপমাত্রা কলকাতায় স্বাভাবিকের থেকে মাত্র এক ডিগ্রি নীচে নেমেছে। কিন্তু বিভিন্ন জেলায় পারদ নেমে গিয়েছে স্বাভাবিকের অনেকটা নীচে। এ দিন বাঁকুড়া, বর্ধমান, বীরভূম, মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার বেশির ভাগ এলাকাতেই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি বা তার নীচে ছিল। বড়দিনের রাত রীতিমতো কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছে শ্রীনিকেতনে। সেখানে এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮.৭ ডিগ্রি। পারদ পতনের দৌড়ে শ্রীনিকেতনের গায়ে গায়েই রয়েছে কৃষ্ণনগর। সেখানে রাতের তাপমাত্রা নয় ডিগ্রিতে নেমে গিয়েছে। রাঁচি-পটনাতেও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা আট ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে বলে আবহাওয়া দফতরের খবর।
উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতেও তাপমাত্রা কমছে বলে আবহবিদেরা জানান। জলপাইগুড়ি, কোচবিহারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকে নেমে এসেছে। বড়দিনে দার্জিলিঙের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল শূন্যের কাছাকাছি। এ দিন তার থেকে কিছুটা উঠে এক ডিগ্রিতে পৌঁছেছে। “রাজ্যে শীতের পরিস্থিতি আপাতত কয়েক দিন এমনটাই থাকবে। তাপমাত্রার খুব একটা উত্থান-পতন হবে না,” বললেন আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ।
উত্তর ভারতের কোনও কোনও এলাকায় শীত বাড়তে পারে বলে আবহবিদদের ধারণা। দিল্লির মৌসম ভবন সূত্রের খবর, উত্তর ভারতে কনকনে ঠান্ডা তো ছিলই। তার উপরে এ দিন শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে হরিয়ানায়। রাজস্থানের চুরুতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছে ০.৯ ডিগ্রিতে। দেশের সমতল এলাকার মধ্যে এটাই সব থেকে কম তাপমাত্রা বলে মৌসম ভবনের খবর।
|