রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবিতে রাজ্য সরকার রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের কাছে দরবার করলেও বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সিপিএম এত দিন চুপচাপ ছিল। সেই মৌনতা ভেঙে বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু কার্যত অশোকবাবুর পাশেই দাঁড়ালেন। লোকসভার প্রাক্তন স্পিকার সোমনাথ চট্টোপাধ্যায় আগেই অশোকবাবুর পক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু রাজ্য সিপিএম এত দিন সে পথে হাঁটেনি।
এ দিন আলিমুদ্দিনে বিমানবাবুকে প্রশ্ন করা হয়, নৈতিকতার কারণে মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানের পদ থেকে অশোকবাবুর কি পদত্যাগ করা উচিত? জবাবে বিমানবাবু বলেন, “বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। অশোক গঙ্গোপাধ্যায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন টু-জি স্পেকট্রাম মামলার রায় দিয়েছিলেন। রায় দিতে গিয়ে তিনি কিছু মন্তব্যও করেছিলেন। তাঁর রায় এবং মন্তব্যে কর্পোরেট মহলের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। এই ঘটনা তার অঙ্গ কি না, আমি বলতে পারব না। তবে তা দেখা উচিত।” এ কথা বলে বিমানবাবু প্রকারান্তরে অশোকেবাবুর পক্ষেই দাঁড়ালেন। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, বিমানবাবু অশোকবাবু সম্পর্কে যে কথা এ দিন বলেছেন, সেটাই দলের মত।
অশোকবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পরে এ মাসের গোড়ায় সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাট তাঁর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন, নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থেই কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে অশোকবাবুর সরে যাওয়া উচিত। কিন্তু ওই এক বার। তার পরে একাধিক বার প্রশ্ন করা হলেও বৃন্দা আর এই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেননি। বস্তুত, বিষয়টি কোন দিকে গড়ায়, সিপিএম রাজ্য নেতৃত্ব সে দিকেই নজর রাখছিলেন। আলিমুদ্দিন যে বিষয়টির পিছনে চক্রান্তের গন্ধ পাচ্ছে, এ দিন বিমানবাবুর কথায় তা পরিষ্কার। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে লেখা চিঠিতে অশোকবাবু নিজেও তাঁর বিরুদ্ধে চক্রান্ত করা হয়েছে বলেই জানিয়েছেন।
অশোকবাবুর সমর্থনে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোটের্র আইনজীবীরা একটি মিছিল বার করেছিলেন। সেই মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন মেয়র সিপিএমের বিকাশ ভট্টাচার্য, কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ, মিলন মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। ওই আইনজীবীরাও মূলত অশোকবাবুর বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগই তুলেছিলেন। এ দিন বিমানবাবু বলেন, “বিষয়টি অনেক দিন ধরে চলছিল। চলতে চলতে আজকের এই পরিণতিতে এসেছে। কোনটা সঠিক, তা ইতিহাস বলবে। তবে বিষয়টির সঙ্গে কর্পোরেট লবির ক্ষোভ যুক্ত কি না, তা-ও দেখা উচিত। কারণ, যা ঘটছে, তা খুব সহজ সমীকরণ নয়।” বিমানবাবুর কথায় পরিষ্কার, আলিমুদ্দিন কার্যত অশোকবাবুর পাশেই দাঁড়াল। বেশ কয়েক বছর আগে বামফ্রন্ট জমানায় বিচারপতি লালা সম্পর্কে মন্তব্য করার জন্য এই অশোকবাবুই বিমানবাবুকে শাস্তি দিয়েছিলেন।
তখন তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি ছিলেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, তা হলে বৃন্দা এ মাসের গোড়ায় অশোকবাবুর পদত্যাগ দাবি করেছিলেন কেন?
সিপিএমের দলের অন্দরেও কোনও রকম আলাপ-আলোচনা ছাড়াই বৃন্দা অশোকবাবুর বিরুদ্ধে ওই মন্তব্য করেছিলেন। পরবর্তী কালে যে ভাবে সংসদে তৃণমূলের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বিজেপিও অশোকবাবুর অপসারণের দাবিতে সোচ্চার হয়েছে, তাতে বিষয়টি নিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করেন। এ দিন বিমানবাবু যে মন্তব্য করেছেন, সেটিই দলের মত।
|