বাউন্সার নিয়ে শর্ট স্ট্রিটে জমি দখলের হামলা এবং তার জেরে দু’জনের মৃত্যুর খবর তিনি জানতেন। তা সত্ত্বেও শেক্সপিয়র থানার সাব-ইনস্পেক্টর নুর আলি নিজের থানাকে তা জানানি বলে কলকাতার গোয়েন্দা পুলিশের অভিযোগ। তাদের বক্তব্য, ওই বিতর্কিত জমিতে আগেকার বিভিন্ন হামলার মতো শেষ পর্যন্ত ওই ঘটনার তদন্তভারও নুরকে দেওয়ায় প্রাথমিক তদন্ত অনেকটাই ব্যাহত হয়েছে।
ওই জমি-বাড়ি দখলের চক্রান্তে নুরও যুক্ত বলে অভিযোগ। বারবার হামলা সত্ত্বেও সব ঘটনার তদন্তের দায়িত্ব কেন নুরকে দেওয়া হচ্ছিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। নুর গ্রেফতার হওয়ার পরে তদন্তকারীরা জানান, ৯এ শর্ট স্ট্রিটে ১১ নভেম্বরের হামলার তদন্তে প্রাথমিক গাফিলতির জন্যই অন্যতম মূল অভিযুক্ত, বাউন্সার সরবরাহকারী সংস্থার কর্ণধার অরূপ দেবনাথকে এখনও গ্রেফতার করা যায়নি। অথচ ঘটনার দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত অরূপকে ঘটনাস্থলের আশপাশেই দেখা গিয়েছিল। তার পরে ১১ নভেম্বর রাতে তিনি গা-ঢাকা দেন।
তদন্তকারীদের দাবি, সে-দিনের হামলায় গুলি চালানো এবং মৃত্যুর খবর থানা থেকে পাওয়ার পরেই বেনিয়াপুকুরের বাড়ি থেকে শর্ট স্ট্রিটের ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন নুর। ৯এ শর্ট স্ট্রিটের জমি দখল করতে যে হামলা চালানো হবে, তিনি আগে থেকেই তা জানতেন। ১০ নভেম্বর রাত থেকে ১১ নভেম্বর ভোর পর্যন্ত ১৫০ বার কথা হয়েছিল নুর এবং আইনজীবী সামির রিয়াজের মধ্যে। রিয়াজকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। কী ভাবে দখলদারির কাজটা হবে, হামলা চালাতে কত জন আসবে, কে কোথায় থাকবে সব ব্যাপারেই নুরের স্পষ্ট ধারণা ছিল বলে গোয়েন্দাদের দাবি। তবে তদন্তকারীরা বলছেন ওই বাড়িতে যে বন্দুক রয়েছে, নুর সেই খবর রিয়াজকে দেননি।
রিয়াজের সঙ্গে একটি হোটেলে বসে নুর পুরো হামলার নকশা তৈরি করেছিলেন বলে তদন্তকারীদের অভিমত। ধৃত সম্পত্তির কারবারি পরাগ মজমুদারের হয়ে রিয়াজই যোগাযোগ রাখতেন নুরের সঙ্গে। নুরকে তার জন্য মোটা টাকাও দিতে হত। তিন দফায় নুরকে টাকা দেওয়া হলেও তাঁর কাছ থেকে এখনও কোনও টাকা উদ্ধার করতে পারেননি গোয়েন্দারা। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত নুরের একটি মাত্র ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের সন্ধান পেয়েছেন তাঁরা। সেটি তাঁর মাসিক বেতনের অ্যাকাউন্ট।
তদন্তকারীদের দাবি, ওই অ্যাকাউন্টে প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা রয়েছে। তবে টাকা থাকলেও গত এক বছরে সেই অ্যাকাউন্ট থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা তোলা হয়েছে কয়েক দফায়। এটা গোয়েন্দাদের সন্দেহ বাড়িয়েছে। তদন্তকারীররা বলছেন, কলকাতা পুলিশের এক জন সাব-ইনস্পেক্টর সারা বছরে মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করছেন, এটা বিশ্বাস করা যায় না। লালবাজারের এক গোয়েন্দাকর্তা বলেন, “নুর তাঁর অন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা লুকোতে চাইছেন। সেই অ্যাকাউন্টের হদিস পেলেই রিয়াজের মাধ্যমে নুর যে-টাকা নেছিলেন, তার খোঁজ মিলবে।”
নুর ও রিয়াজকে এ দিন ব্যাঙ্কশাল আদালতে তোলা হয়। নুরের আইনজীবী অশোক বক্সী আদালতে দাবি করেন, তাঁর মক্কেল ঘটনার সঙ্গে কোনও ভাবেই যুক্ত নন। এমনকী হাজতে থাকার সময় পুলিশ নুরের কাছ থেকে শুধু দু’টি মোবাইল এবং প্রায় ৬০০ টাকা উদ্ধার করেছে। পরে সরকারি আইনজীবী কৃষ্ণচন্দ্র দাস ধৃতদের জামিনের বিরোধিতা করতে গিয়ে দাবি করেন, ধৃতদের সকলেই সে-দিনের হামলায় যুক্ত ছিলেন।
সরকারি আইনজীবীর দাবি, ঘটনার দিন আগে এবং পরে রিয়াজের মোবাইল টাওয়ারের লোকেশন দেখেই স্পষ্ট যে, ঘটনার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ছিল। রিয়াজকে জেরা করেই হামলার সঙ্গে নুরের যোগাযোগের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেয়েছে পুলিশ। নুর ও রিয়াজকে জেল-হাজতে রাখার নির্দেশ দেন বিচারক। জেলে গিয়ে দুই অভিযুক্তকে জেরার জন্য পুলিশকে অনুমতি দিয়েছে আদালত।
|