পার্ক স্ট্রিটে গাড়িতে কিশোরীকে ধর্ষণের ঘটনায় আরও এক অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ। ধৃতের নাম আখতার হোসেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে ইলিয়ট লেন থেকে স্থানীয় বাসিন্দা আখতারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযুক্তকে আজ, শুক্রবার আদালতে তোলা হবে। যে গাড়িতে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে বলে অভিযোগ, বুধবার রাতে সেটিকেও আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, জেরায় মেয়েটি দাবি করেছিল ট্যাক্সিতে তুলে তাকে ধর্ষণ করা হয়েছে। কিন্তু তদন্তে জানা গিয়েছে, ওই কিশোরীকে তোলা হয়েছিল লাল রঙের একটি গাড়িতে।
পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে রিপন স্ট্রিটের ফুটপাথবাসী এক মহিলা পার্ক স্ট্রিট থানায় অভিযোগ করেন, রবিবার রাতে তাঁর ১৩ বছরের মেয়েকে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে একটি ট্যাক্সিতে তুলে গণধর্ষণ করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত তিন ব্যক্তির মধ্যে পরিচিত এক যুবকও রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। পুলিশ ওই নাবালিকাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে সোমবারই মহম্মদ আনোয়ার নামে ওই পরিচিত যুবককে গ্রেফতার করে।
কী ঘটেছিল রবিবার রাতে?
তদন্তের পরে পুলিশের দাবি, রবিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ওই কিশোরী ওয়েলেসলি সেকেন্ড লেনে তার এক আত্মীয়ের বাড়িতে থাকতে যায়। ওই আত্মীয়ের স্বামী এ নিয়ে আপত্তি করলে মেয়েটি সেখান থেকে বেরিয়ে যায়। পুলিশ জানায়, এর পরেই ওই কিশোরী রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে একটি হোটেলের সামনে যায়। রাত ৯টা নাগাদ হোটেলটি বন্ধ হয়ে গেলে ওই কিশোরী ওই রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোয় আশ্রয় নেয়। রাত ২টো পর্যন্ত মেয়েটি তার ভিতরেই বসে ছিল বলে তদন্তকারীরা জানিয়েছেন।
পুলিশ জানায়, এই ঘটনায় প্রথম ধৃত আনোয়ার পুরো বিষয়টি অস্বীকার করেছিল। বুধবার বিকেলে লাগাতার জেরার মুখে ভেঙে পড়ে সে। পুলিশের দাবি, তদন্তকারীদের কাছে ঘটনাটি স্বীকার করে আনোয়ার জানায়, সে রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডের একটি হোটেলে কাজ করে। ঘটনার দিন রাত দেড়টার পরে ওই হোটেলটি বন্ধ হয়ে যায়। হোটেল থেকে বেরিয়ে সে ওই কিশোরীকে একা একটি অটোয় বসে থাকতে দেখে। তখনই মেয়েটিকে লোভ দেখিয়ে কিছুটা দূরে ডেকে নিয়ে যায় সে।
তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, আনোয়ার জানিয়েছে, মেয়েটিকে ওই রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি লাল রঙের গাড়িতে তুলে দেয় সে। ওই গাড়িটিরই চালক এ দিন গ্রেফতার হওয়া আখতার। সেই সময়ে গাড়িটিতে উপস্থিত ছিল সে-ও। এর পরে রাত সাড়ে ৩টে পর্যন্ত দু’জনে মিলে ওই কিশোরীকে ধর্ষণ করে রাস্তায় নামিয়ে দিলে মেয়েটি নিজের মায়ের কাছে ফিরে যায় বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশের দাবি, জেরায় আনোয়ার দাবি করেছে, মেয়েটির সম্মতি নিয়েই সব কিছু হয়েছে। তদন্তকারীরা অবশ্য জানিয়েছেন, নাবালিকার সম্মতি নিয়ে সহবাস করলেও আইনের চোখে তা ধর্ষণেরই নামান্তর।
পুলিশ জানায়, জেরায় আনোয়ার স্বীকার করে সে আখতারকে আগে থেকেই চিনত। আনোয়ারের বয়ানের উপরে ভিত্তি করে বুধবার রাতেই পুলিশ লাল গাড়িটির খোঁজে ওই চত্বরে তল্লাশি চালায়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, রফি আহমেদ কিদোয়াই রোডে ঘটনাস্থলের কাছে রোজ রাতে একটিই লাল রঙের গাড়ি দাঁড় করানো থাকে। সেই সূত্র ধরেই বৃহস্পতিবার রাতে পুলিশ আখতারকে গ্রেফতার করে। বাজেয়াপ্ত করা হয় গাড়িটিও। পুলিশ জানায়, ইলিয়ট লেনে ওই গাড়িটির মালিকের বাড়ি। তাঁকেও জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ।
তবে, পুলিশ জানিয়েছে মেয়েটির বয়ানের সঙ্গে অভিযুক্তদের বয়ানের কিছুটা অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে। ঘটনায় আরও কেউ জড়িত ছিল কি না, অভিযুক্তদের জেরা করে তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ।
|