বড়দিনের সন্ধ্যায় জমজমাট এক্সাইড মোড়। এক কিশোরীর হাত ধরে টানছে চলন্ত ম্যাটাডরের খালাসি। তা দেখে চিৎকার জুড়েছেন ওই কিশোরীর সঙ্গে থাকা মহিলারা। বিপদ আঁচ করে এক ধাক্কায় কিশোরীটিকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে চম্পট দিল ম্যাটাডরটি। পুলিশ জানিয়েছে, পালানোর চেষ্টা করলেও ট্রাফিক পুলিশের তৎপরতায় পাকড়াও করা হয় ম্যাটাডরটিকে। গ্রেফতার করা হয় কার্তিক দলুই নামে ওই গাড়ির চালক এবং খালাসি বাবাই বড়ুয়াকে। দু’জনেই বেহালার বাসিন্দা। তবে ওই গাড়িতে থাকা আর এক যুবক পলাতক। ধৃতদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানি ও অপহরণের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় ওই কিশোরীও আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানায়।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারিণী দশম শ্রেণির ছাত্রী। বাড়ি টালিগঞ্জ থানা এলাকায়। বুধবার পরিবারের কয়েক জনের সঙ্গে সে ভিক্টোরিয়া ও ময়দানে বেড়াতে যায়। ফেরার পথে সন্ধ্যা পৌনে সাতটা নাগাদ এক্সাইড মোড়ে দাঁড়িয়েছিল তাঁরা। তখনই সিগন্যালে আটকে একটি ম্যাটাডর সেখানে এসে দাঁড়ায়। সেটি থেকে তিন যুবক ওই কিশোরী ও বাকি মহিলাদের কটূক্তি করলে প্রতিবাদ করেন ওই কিশোরীর পরিবার। অভিযোগ, সিগন্যাল সবুজ হলে ওই ম্যাটাডর থেকে এক যুবক কিশোরীর হাত টেনে ধরে। কয়েক মিটার টেনে নিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর মেয়েটিকে ধাক্কা দিয়ে রাস্তায় ফেলে এসপ্ল্যানেডের দিকে পালায় ম্যাটাডরটি। বৃহস্পতিবার ওই কিশোরীর দিদি বলেন, “ছেলেগুলো আমাদের নোংরা কথা বলছিল। তা শুনেই প্রতিবাদ করি।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই কিশোরী রাস্তায় ছিটকে পড়লে ছুটে আসেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী। ওয়্যারলেস মারফত খবর ছড়িয়ে পড়ে। জওহরলাল নেহরু রোডে ট্রাফিক পুলিশই গাড়িটি আটকায়। পরে অভিযোগকারিণী ও অভিযুক্ত, দু’পক্ষকেই শেক্সপিয়র সরণি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। ওই কিশোরীর দিদি জানান, পড়ে গিয়ে মাথায় চোট পেয়েছে তাঁর বোন। চিকিৎসককেও দেখানো হয়েছে। শেক্সপিয়র সরণি থানার পুলিশ সব ঘটনা শোনার পরে ঘটনাস্থল ভবানীপুর থানা এলাকায় হওয়ায় অভিযুক্তদের সেখানে পাঠায়। নিয়ে যাওয়া হয় অভিযোগকারিণী ও তার পরিজনদেরও। অভিযোগ নথিভুক্ত করে দু’জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সম্প্রতি শহরে মহিলাদের উপরে নানা আক্রমণের ঘটনায় বাড়তি সতর্ক হয়েছে কলকাতা পুলিশ। উৎসবের মরসুমে বেড়েছে নিরাপত্তাও। সেই নিরাপত্তার কড়াকড়িতেই বুধবারের এই ঘটনায় অভিযুক্তদের সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার করা গিয়েছে বলে পুলিশকর্তাদের দাবি। বস্তুত, বড়দিনের আগের রাত থেকেই শহরের নানা প্রান্তে পুলিশের সক্রিয় চেহারা নজরে এসেছে। বুধবার দিনভর চিড়িয়াখানা-গঙ্গাতীর-ময়দানের মতো দর্শনীয় স্থানে উর্দিপরা ও সাদা পোশাকের পুলিশ মোতায়েন ছিল। রাতে পার্ক স্ট্রিট-ধর্মতলা চত্বর ছিল পুলিশে ছয়লাপ।
পুলিশ জানায়, বড়দিনের সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিট কার্যত মেলার চেহারা নিয়েছিল। রেস্তোরাঁয় খানাপিনা করা ছাড়াও রাস্তায় প্রচুর লোক জড়ো হন। আলো, খাবারের দোকান, ভিড় মিলিয়ে প্রায় অষ্টমীর সন্ধ্যার চেহারা নেয় পার্ক স্ট্রিট। লালবাজারের এক শীর্ষকর্তা জানান, এই প্রথম পার্ক স্ট্রিটে ১০টি পুলিশ বুথ খোলা হয়েছিল। উড়ুক্কু যান দিয়েও চলেছে নজরদারি। পুলিশ জানিয়েছে, ট্যাংরার চিনেপাড়া কিংবা গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ-সহ দক্ষিণের গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল। বড়দিনে বিভিন্ন ঘটনায় ধৃত দেড়শোর বেশি। |