বড়দিনের হাত ধরে শীত এল শিলিগুড়ি-জলপাইগুড়ি শহরে। মঙ্গলবার রাতেই কুয়াশা দেখে ঘুমোতে গিয়েছিল দুই শহর। বুধবার উৎসবের সকালে হালকা শৈত্যপ্রবাহে ঘুম ভাঙল দুই শহরের। আবহাওয়া দফতরের জানাচ্ছে, শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়িতে মরসুমে প্রথম কুয়াশা ঢাকা দিন ছিল বুধবার।
তবে উৎসবের আমেজকে দমাতে পারেনি ঠান্ডা। উল্টে শীতের আমেজে উৎসবের তাপ কয়েক গুণ বেড়েছে দুই শহরেই। তিস্তা পাড় থেকে সেবক পিকনিকে মেতেছেন বাসিন্দারা। সেই সঙ্গে শহরের গির্জাগুলিতেও ভিড় উপচে পড়েছে। দার্জিলিং পাহাড়ে অবশ্য ডিসেম্বরের শুরু থেকেই শীত হাজির। বড়দিনে উৎসবের মেজাজ দেখা গেল দার্জিলিং চৌরাস্তায় চা পর্যটন উৎসবেও। স্থানীয় শিল্পীদের লোকগান আর নাচের ছন্দে পা মেলাতে দেখা গিয়েছে পর্যটকদেরও। বড়দিনের দুপুরে শৈলশহরের দখল নিয়েছিল পশ্চিমী গানের ব্যান্ডের সুর। এ দিন দুপুরেই দার্জিলিঙের তাপমাত্রা নেমে এসেছিল ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পর্যটকদের উপস্থিতিতে তাপমাত্রার কনকনে ভাব আঁচ করাই যায়নি। |
পশ্চিমী ঝঞ্ঝার কারণে মেঘ থাকায় উত্তরবঙ্গের অন্যত্র তাপমাত্রা কমতে থাকলেও শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি শহরের তাপমাত্রা এই বছর খানিকটা বেশি ছিল। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানা যায়, পাঁচ দিন দুই শহরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২-১৫ ডিগ্রিতে ঘোরাফেরা করেছে। কোচবিহারের তাপমাত্রা ৭ ডিগ্রিতে নেমে যায়। বড়দিনের আগের সন্ধ্যায় তাপমাত্রা কমতে শুরু করে দুই শহরে। উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ভূগোল বিভাগের প্রধান সুবীর সরকার বলেন, “এই বছর শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি শহরের তাপমাত্রা কিছুটা বেশি-ই ছিল। একটি পশ্চিমী ঝঞ্ঝা আসায় আকাশে মেঘ আছে। দিনে কিছুটা তাপমাত্রা কমছে।” বুধবার দিনভর রোদের দেখা মেলেনি। উৎসবের আঁচ অবশ্য শীতের ঘাটতি মিটিয়ে দিয়েছে। বড়দিনে শিলিগুড়ির মাটিগাড়ার একটি শপিং মলে ঠান্ডার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়।
শীতের আমেজ ছিল উত্তরবঙ্গের সর্বত্র। সকাল থেকে মেঘলা আকাশ থেকে যেন বিন্দু হয়ে কুয়াশা ছড়িয়ে পড়ছিল বালুরঘাট শহরে। সেই সঙ্গে ঠান্ডা হাওয়া। শহরে আগুন জ্বালিয়ে বসে আড্ডার দৃশ্য দেখা গিয়েছে। দক্ষিণ দিনাজপুরের পার্ক এবং বন বিভাগের জঙ্গলগুলিতে এ দিন দেদার পিকনিকের আয়োজন দেখা গিয়েছে। বালুরঘাট রেল স্টেশনের মাঠেও দল বেধে বাসিন্দারা চড়ুইভাতিতে সামিল হয়েছিলেন। বালুরঘাটে দোগাছিতে মহিলাদের জন্য পৃথক শৌচালয়-সহ জলের ব্যবস্থা না থাকায় অভিযোগ করেন চড়ুইভাতিতে আসা মানুষজন। ৪০টির বেশি দল দোগাছিতে আসে। প্রকাশ্যে মদ্যপানের অভিযোগে বেশ কিছু বোতল বাজেয়াপ্ত করে পুলিশ।
রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাসের পাশে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহের বাসিন্দারা এ দিন পিকনিক করতে আসেন। কর্ণজোড়া সরকারি পার্ক ও পূর্ব কলেজপাড়ায় রায়গঞ্জ মিউনিসিপ্যাল পার্কে দিনভর ভিড় ছিল। রায়গঞ্জে মিশন মোড়ের গির্জায় কয়েক হাজার লোকসমাগম হয়েছিল। দুপুরে কয়েক মিনিটের জন্য রোদের দেখা মিললেও বাকি সময়টা মেঘলা ছিল কোচবিহারে। গারোপাড়ায় দুটি গির্জায় প্রার্থনার পাশাপাশি একসঙ্গে খাবারের বন্দোবস্ত হয়। কোচবিহার রাজবাড়ি, রাজবাড়ি উদ্যান, এনএন পার্কে ছিল উপচে পড়া ভিড়। রসিকবিলে ভিড়ের জন্য পুলিশ ডাকার চিন্তা করেছিলেন কর্তৃপক্ষ। চড়ুইভাতির দলে সরগরম ছিল ডুয়ার্স। গজলডোবা, মংপং থেকে শুরু করে গরুবাথান বা সামসিং, সর্বত্র ঠাসা ভিড়। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ডুয়ার্সের পিকনিক স্পটগুলিতে ছিল পুলিশি নিরাপত্তা। |