ছেলেকে খুনের অভিযোগ এক মহিলা সাব ইনস্পেক্টর-সহ একাধিক পুলিশ অফিসারের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্তের আর্জি জানালেন সন্ধ্যা দাস নামে এক মহিলা। মালদহ শহরের জুবিলি রোডের বাসিন্দা সন্ধ্যাদেবী সোমবার কলকাতা হাইকোর্টে দাবি করেছেন, তাঁর ছেলে পিকি দাসকে (২৬) গত বছর ২৩ জুলাই খুন করে অভিযুক্তেরা।
পিকি দাস |
কিন্তু তারপরে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও তদন্ত এগোয়নি। সেই ঘটনার তদন্তভার যায় সিআইডি-র হাতে। কিন্তু তারপরে এক বছর চার মাস পার হয়ে গিয়েছে। সিআইডি-ও চার্জশিট দেয়নি। কাউকে গ্রেফতারও করা হয়নি। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “কেউ কিছু করেনি। এখন সিবিআই তদন্ত করলে দোষীরা শাস্তি পাবে।”
পিকির বাবা অনেক দিন আগেই তাঁদের সংসার ছেড়েছেন। সন্ধ্যাদেবীই তারপর থেকে পরিচারিকার কাজ করে ছেলেকে বড় করেছেন। মালদহ কলেজ থেকে বাণিজ্যে স্নাতক পিকি ইংরেজবাজার থানাতেই রোজ যাঁরা অভিযোগ করতে আসতেন, তাঁদের সাহায্য করে সামান্য আয় করতেন। তাই থানার পুলিশ ও কর্মীদের সঙ্গে পিকির সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। সন্ধ্যাদেবীর দাবি, এক মহিলা সাব ইন্সপেক্টরের সঙ্গে পিকির খুব ভাল সম্পর্ক ছিল। তাঁকে পিকি দিদি বলে ডাকতেন। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “পিকিকে একবার গ্যাংটকেও নিয়ে যান মহিলা। সেখানে ওই মহিলার সঙ্গে তাঁর এক আত্মীয়কে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় দেখে ফেলে পিকি। পিকি সে কথা ফাঁস করে দিতে পারে ভেবে তার উপরে নির্যাতন শুরু হয়।”
সে সময়ে পিকির বিরুদ্ধে তাঁর কোয়ার্টার থেকে দু’লক্ষাধিক টাকার সোনার গয়না চুরির অভিযোগ করেন ওই মহিলা। এরপরই ওই মহিলা ও ইংরেজবাজার থানার তৎকালীন আইসি পিকিকে থানায় নিয়ে গিয়ে মারধর করেন বলে অভিযোগ। তিনি জানান, তাঁরা পুলিশকে সে সময়ে জানিয়েছিলেন যে, অভিযোগ মিথ্যা। কিন্তু পুলিশ শোনেনি। তাঁর অভিযোগ, ‘‘এরপরে গত বছর ২৩ জুলাই ওই মহিলা সাব ইন্সপেক্টর ও ইংরেজবাজার থানার চার পুলিশকর্মী পিকিকে আবার নিয়ে যান। পরের দিন জানা যায় পিকি মারা গিয়েছে।” পুলিশ দাবি করে পিকি আত্মহত্যা করেছে।
সন্ধ্যাদেবী বলেন, “পরের দিনই ইংরেজবাজার থানায় পিকিকে খুনের অভিযোগ করি। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনকেও জানায়।” সন্ধ্যাদেবীর আইনজীবী সুস্মিতা সাহা দত্ত জানান, ৮ জানুয়ারি হাইকোর্টে শুনানির কথা। মামলায় সিআইডি, রাজ্য মানবাধিকার কমিশন, রাজ্যের মুখ্য সচিব, আইজি-সহ মূল অভিযুক্ত ওই মহিলা সাব ইন্সপেক্টরকে পার্টি করা হয়েছে।
ওই সাব ইন্সপেক্টর বলেন, “সন্ধ্যাদেবীর সব অভিযোগই মিথ্যা।” পুলিশ সূত্রে খবর, পিকি খুনে অভিযুক্ত হওয়ার পরে তাঁকে ক’দিনের জন্য ‘ক্লোজ’ করা হয়েছিল। এখন তিনি মালদহেরই একটি থানায় একই পদে কর্মরত। মালদহের এসপি কল্যাণ মুখোপাধ্যায় বলেন, “আমি এই ঘটনার পরে দায়িত্ব নিয়েছি। তদন্তের অগ্রগতি কী হয়েছে, তা দেখা হচ্ছে।” |