রাজ্যে ক্ষমতার বাইরে যাওয়ার পরে এ বারই প্রথম লোকসভা ভোটের লড়াই। এবং সেই কঠিন ভোটে আলিমুদ্দিনের উপরে ক্রমেই চাপ বাড়াচ্ছে বাম শরিকেরা!
ফরওয়ার্ড ব্লকের পরে আর এক বাম শরিক সিপিআই-ও এ বার রাজ্যে একটি বাড়তি লোকসভা আসন চেয়ে দরবার করতে চলেছে আলিমুদ্দিনে। ফরওয়ার্ড ব্লকের মতো সিপিআইয়েরও পরম্পরাগত ভাবে বরাদ্দ মাত্র তিনটি লোকসভা আসন। কিন্তু
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এ বার তারা আরও একটি আসনে লড়াই করতে চাইবে।
বাড়তি আসনের দাবি জানাতে খুব শীঘ্রই বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর দ্বারস্থ হতে চলেছেন সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদার। সিপিএম নেতৃত্ব দাবি মানার ব্যাপারে নীতিগত আশ্বাস দিলে তার পরে বাড়তি আসন চিহ্নিত করে দেওয়া হবে বলে সিপিআইয়ের রাজ্য নেতৃত্ব ঠিক করেছেন।
দলের অন্দরে বাড়তি আসনের ব্যাপারে প্রাথমিক আলোচনা অবশ্য সেরে রেখেছেন মঞ্জুবাবুরা। তাঁদের লক্ষ্য পূর্ব মেদিনীপুর অথবা বর্ধমান শিল্পাঞ্চলের কোনও একটি আসন। সিপিআইয়ের বক্তব্য, দুই মেদিনীপুর এবং বর্ধমান জেলার কিছু অংশে
দীর্ঘ দিন ধরেই তাদের কিছু সংগঠন আছে। তা ছাড়া, যে আসনই নেওয়া হোক, তাতে বামফ্রন্টের অংশ হিসাবে বড় শরিকের সমর্থন লাগবে। সিপিআই এখন লড়াই করে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দু’টি এবং উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট আসনে। এরই সঙ্গে আরও একটি আসন চাইছে তারা। ঠিক যে ভাবে ফরওয়ার্ড ব্লক তাদের তিনটির সঙ্গে আরও একটি আসন বেশি চেয়েছে।
কিন্তু দীর্ঘ দিনের আসন বণ্টনের ছক ভেঙে এ বারের লোকসভায় বাড়তি আসনের দাবি কেন তুলছে শরিকেরা? সিপিএম এখন সঙ্কটে। তা বুঝেই কি?
সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, “এত দিন ধরে যে সব আসনে লড়ে আসা হচ্ছে, তা-ই লড়তে হবে, তার কি কোনও মানে আছে? আর যে আসনই লড়া হোক, বামফ্রন্ট হিসাবে মিলেমিশেই তো লড়তে হবে!” সিপিএম অবশ্য এই ব্যাপারে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে লোকসভার প্রস্তুতির ব্যাপারে কিছু আলাপ-আলোচনা হবে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের কথায়, “এ বার পঞ্চায়েত নির্বাচনে বামফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে অন্য বারের চেয়ে অনেক ভাল সমঝোতা হয়েছিল। পঞ্চায়েতের মতো স্থানীয় নির্বাচনে যখন আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে সব রকম সমস্যা মিটে গিয়েছে, লোকসভা নির্বাচনে কোনও রকম সমস্যা হবে না বলেই মনে হয়।”
সিপিএমের অন্দরমহলে একাংশের মত, রাজ্যের সাম্প্রতিক নানা নির্বাচনের ধারা মাথায় রাখলে লোকসভা নির্বাচনে বামফ্রন্টের বিরাট কোনও সাফল্যের আশা নেই বললেই চলে। তাই দলের এই রকম সঙ্কটের পরিস্থিতিতে শরিকদের লোকসভা নির্বাচনে কয়েকটি
বাড়তি আসন দিয়ে যদি বামফ্রন্টের সংসারে সুখশান্তি বজায় রাখা যায়, তা হলে শরিকদের দাবি মেনে নিতে কোনও ভাবেই অসুবিধা হওয়া উচিত নয়। তবে সব কিছুই নির্ভর করছে শরিকরা লোকাসভা নির্বাচনের জন্য কোন কোন আসনে লড়াই করতে চাইবে, তার উপরেই।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দু’টি লোকসভা আসনে এখন সিপিআইয়ের সাংসদ রয়েছেন। ওই দু’টির তুলনায় বসিরহাট এ বার অবশ্য ‘ইতিবাচক’ বলে বামফ্রন্ট নেতৃত্ব মনে করছেন। আর সেই নিরিখে দেখলে পূর্ব মেদিনীপুর বা বর্ধমান জেলার কোনও আসনই তেমন ‘ইতিবাচক’ নয়। কাজেই সিপিএম সেখানে ‘উদারতা’ দেখাতে পারে বলে সিপিআই নেতৃত্ব আশা করছেন। ফরওয়ার্ড ব্লক যেমন সাংসদ জেতাতে না-পারলে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় কার্যালয় রাখতে মুশকিলে পড়ে যাবে। সিপিআইয়ের অবশ্য সে রকম কোনও সমস্যা নেই।
সিপিআই-ফরওয়ার্ড ব্লকের দাবি নিয়ে খোলা মনে ভাবতে রাজি থাকলেও কিরণময় নন্দের সমাজবাদী পার্টিকে নিয়ে অবশ্য আলিমুদ্দিনে সংশয় অনেক বেশি। লোকসভায় এ বার একটি আসনে (পারতপক্ষে উত্তরবঙ্গে) লড়তে মরিয়া হয়ে রয়েছে সমাজবাদী পার্টি। সদ্যই তাদের একমাত্র বিধায়ক দল ছেড়ে তৃণমূলে চলে গিয়েছেন। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের অভিমত, “সমাজবাদী পার্টিকে সামনে রেখে পিছন থেকে তৃণমূল সমর্থন দিলে বাম ভোট ভাঙতে সুবিধা হবে! এ ব্যাপারে তাই অনেক দিক ভেবেচিন্তেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।” |