বাতাসে ঠান্ডা হাওয়ার কামড় সহ্য করেই বড়দিনের সকালে চড়ুইভাতি করতে বেড়িয়ে পড়েছিল দুই জেলা। বিষ্ণুপুর, মুকুটমণিপুর, শুশুনিয়া, বিহারীনাথ, কোরোপাহাড় থেকে অযোধ্যা পাহাড়, জয়চণ্ডী পাহাড়, গড়পঞ্চকোট, দোলাডাঙা, পুঁটিয়ারি জলাধার, কয়রাবেড়া, মুরগুমা, বড়ন্তি, তেলকূপি, দুয়ারসিনি-সহ বিভিন্ন জায়গায় মানুষের ভিড় যেন আছড়ে পড়ল। উচ্ছ্বসিত স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। কিন্তু কিছু এলাকায় বেহাল রাস্তার ধকলে কাহিল হয়ে পড়েন কিছু পর্যটক। পানীয় জল নিয়েও ক্ষোভের কথা শোনা গিয়েছে তাঁদের মুখে।
এ দিন মুকুটমণিপুর জলাধারের পাড় এবং লাগোয়া এলাকায় রান্না, খাওয়া ও গান-নাচ চলতে থাকে। মুকুটমণিপুর হোটেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সঞ্জীব দত্ত বলেন, “প্রচুর পর্যটক এ দিন এসেছেন। সব হোটেল ভর্তি।” নৌকাচালক বিশ্বজিৎ দাসের উচ্ছ্বাস, “জলাধারে প্রচুর জল রয়েছে। সবাই নৌকায় চেপে ঘুরেছেন। এক দিনেই পাঁচ হাজার টাকা রোজগার হয়েছে।” |
শুশুনিয়ায় আসা পর্যটকেরা রাস্তা খারাপ নিয়ে ক্ষোভ জানান। যাদবপুরের বাসিন্দা পার্থপ্রতিম চক্রবর্তী বলেন, “শুশুনিয়া মন ভরিয়ে দিলেও রাস্তার খারাপ অবস্থায় প্রচণ্ড ধকল হয়েছে।” বিষ্ণুপুরে আসা পর্যটকদের কাছে বিষ্ণুপুর মেলা এ সময়ে কার্যত বাড়তি পাওনা। কলকাতার বাগবাজারের সুজিত দাস, লেকটাউনের প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুরের তনিমা চৌধুরি বলেন, “মন্দির দেখে, মেলায় কেনাকাটি করে মন ভরে গেল।”
পুরুলিয়ায় এ দিন তাপমাত্রা নেমেছিল ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। টুপি, মাফলার, সোয়াটারে দেহ মুড়ে, গাড়িতে হাড়ি-কড়াই চাপিয়ে সাত সকালেই লোকজন বেড়িয়ে পড়েন। পর্যটন কেন্দ্রগুলিতে রওনা হয়। কিন্তু শিরকাবাদ হয়ে অযোধ্যা পাহাড়ের হিলটপে ওঠার রাস্তা খারাপ থাকায় পর্যটকদের বাঘমুণ্ডি হয়ে ঘুরপথে যেতে হয়েছে। মেজিয়া থেকে পাহাড়ে এসেছিলেন বিদ্যুৎ দাস, শুভ্রা দাস, সীমা ঘোষেরা। তাঁরা বলেন, “শিরকাবাদ হয়ে রাস্তা ভাল নয় বলে আমরা বাঘমুণ্ডি হয়ে উঠলাম।” পাহাড়ের গাইড বেণু সেন বলেন, “এ দিন অনেক বেশি মানুষ এসেছেন।”
হীরক রাজার দেশ সিনেমার ছবি তোলা হয়েছিল জয়চণ্ডী পাহাড়ে। কলকাতার বেলঘরিয়া থেকে এখানে ঘুরতে এসেছিলেন প্রশান্ত মণ্ডল। তিনি বললেন, “নানা কথা শুনেছিলাম পুরুলিয়া নিয়ে। বেড়াতে এসে অভিজ্ঞতা বদলে গেল।” শান্তিনিকেতন থেকে এসেছিলেন প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “জয়চণ্ডী পাহাড়ের কথা শুনেছিলাম। কিছু দিন পরেই এখানে পযর্টন উৎসব শুরু হচ্ছে। থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু এখানে তো থাকার জায়গাও নেই।” তবে পর্যটকদের সুবিধার্থে পুলিশ আধিকারিকদের ফোন নম্বর বোর্ডে লিখে দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন রঘুনাথপুরের এসডিপিও কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায়।
মানবাজারের দোলদেড়িয়ায় পিকনিকে এসেছিলেন ঝাড়খণ্ডের বনকুচিয়ার বাসিন্দা মাহাদেব সিং ও অনিল মাহাতো। তাঁরা পরিকাঠামো আরও ভাল করার দাবি জানিয়েছেন। পুঁটিয়ারিতেও জলের অভাব রয়েছে বলে অভিযোগ। অতিরিক্ত জেলাশাসক প্রবালকান্তি মাইতি বলেন, “ধাপে ধাপে পর্যটনকেন্দ্রের পরিকাঠামোর উন্নতি করা হচ্ছে।” |