জেলা প্রশাসনিক ভবনের ২০০ মিটারের মধ্যে সভা-সমাবেশ নৈব নৈব চ!
সম্প্রতি এমনই নির্দেশ জারি করেছে মুর্শিদাবাদ জেলাকর্তারা।
জেলা সদরের বুকে, প্রশাসনিক ভবনের প্রায় মুখোমুখি গাঁধী মূর্তি। রাজনৈতিক দলগুলি তাদের দাবি-দাওয়া কিংবা প্রচারের জন্য শহরের ওই জায়গাটিকেই সব চেয়ে ‘দামি’ বলে মনে করে এসেছেন এত দিন। কিন্তু সরকারি ওই নির্দেশিকায় দু’শো মিটারের বাধ্যকতা ঝুলিয়ে দেওয়ায় গাঁধী মূর্তির পদতল এখন হাতের বাইরে। আর তা নিয়েই সরব হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলি।
বছর খানেক আগেও মাঝারি মাপের বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ কিংবা গণসংগঠন বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলি তাদের জমায়েতের জন্য বেছে নিত শহরের ক্যান্টনমেন্ট রোডের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে পুরনো কালেক্টরেট মোড় কিংবা টেক্সটাইল মোড়কে।
কিন্তু তার ফলে, দেখা দিত তীব্র যানজট। জমায়েতের ফলে শহরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় যানজটে নাকাল হতেন শহরবাসী। দ্বিতীয়ত, জমায়েত হওয়া জনতার ঢল রাজপথ ছাপিয়ে দখল নিত ব্যারাক স্কোয়ার মাঠের। মাঠের স্বাস্থ্য নষ্ট হত। বছর খানেক আগে প্রশাসনের উদ্যোগে ডাকা সর্বদলীয় সভায় তাই সিদ্ধান্ত হয়, ওই দু’টি মোড়ে কোনও দল, বা সংস্থা সভা সমাবেশ করবে না। বদলে সমাবেশ করা হবে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে গাঁধীমূর্তির পাদদেশে। আর বড় মাপের জনসভা হবে ওয়াই এম এ অথবা এফ ইউ সি ময়দানে।
সেই সিদ্ধান্তই আচমকা বদলে গেল কেন? জেলা কার্তদের কেউই এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনও যুক্তি দেখাতে পারছেন না। মহকুমাশাসক অধীর বিশ্বাস বলেন, “নির্দেশ মেনে অন্যত্র সমাবেশ করুক না রাজনৈতিক দলগুলি। সমস্যা কোথায়?” তাঁর যুক্তি, “মাইকের আওয়াজে প্রশাসনিক ভবনের কাজে বিঘ্ন হয় বলে ওই নির্দেশ জারি করা হয়েছে।” কিন্তু শুধুই শব্দ-সমস্যার জন্যই এক বছর আগের সিদ্ধান্ত বদলে গেল? এ ব্যাপারে কোনও স্পষ্ট উত্তর মেলেনি।
প্রসঙ্গত, আগামী ৬ জানুয়ারি গাঁধীমূর্তির পাদদেশে মুর্শিদাবাদ জেলা কংগ্রেস সভা ডেকেছে। নতুন বছরের শুরুতেই জেলা যুব-তৃণমূলও সভাস্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে জেলা প্রশাসনিক ভবনের ঠিক পেছেনেই সুইমিংপুলের মাঠটি। প্রশাসনিক ভবনের পাঁচিলের গা ঘেঁষা হলেও ওই মাঠটি প্রশাসনের নির্দেশিত দু’শো মিটারের মধ্যে নয় বলেই দাবি জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি উৎপল পালের। তৃণমূলের জেলা নেতৃত্ব এর মধ্যে অন্যায় দেখছেন না। দলের কার্যকরী সভাপতি হুমায়ুন কবীর বলেন, “এই নিয়ে বিরোধীরা তিলকে তাল করছে।” বহরমপুর মহকুমাশাসকের ওই নির্দেশে খুশি নন স্থানীয় সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, “গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরতে তৃণমূল সরকার পরিচালিত প্রশাসনের পদক্ষেপ ভারতের ব্রিটিশরাজের অত্যাচারকেও হার মানাল।”
গাঁধীমূর্তির পাদদেশে ১২ ডিসেম্বর সিটুর জেলা সমাবেশের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ১১ ডিসেম্বর বিকালে মঞ্চ তৈরি যখন প্রায় শেষের পথে তখনই জেলা প্রশাসনের ওই নির্দেশ আসে। ফলে পর দিন, তড়িঘড়ি সিটুকে সভাস্থল পরিবর্তন করে এফ এউ সি মাঠে নিয়ে যেতে হয়।
জেলা কংগ্রেসের মুখপাত্র অশোক দাস বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ওই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক। তাই মানা হবে না বলে দলের পক্ষ থেকে গত শনিবার আমি মহকুমাশাসককে লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছি। পুরনো কালেক্টরেট মোড়ে, টেক্সটাল মোড়ে, বা গাঁধীমূর্তির পাদদেশে সমাবেশ করতে পারব না। সেই জায়গা ঠিক করে দিক প্রশাসন।”
সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক ভট্টাচার্য বলেন, “সভা সমাবেশের স্থান ঠিক করতে হবে সব রাজনৈতিক দলকে ডেকে সর্বদলীয় সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত অনুসারে। তা না করে প্রশাসনের পক্ষ থেকে এক তরফা খামখেয়ালি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা তার প্রতিবাদ আগেও করেছি, এখনও করছি।” |