নয়াগ্রাম থেকে ফেরার পথে সাঁকরাইল ব্লকের একাধিক গ্রামে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি চালাল দলমার পালের বুনো হাতিরা।
বন দফতর ও স্থানীয় সূত্রের খবর, গত সোমবার নয়াগ্রাম ব্লকের জঙ্গলে থাকা দেড়শোটি হাতির মধ্যে ১৩০টি হাতি কলাইকুণ্ডা রেঞ্জের শঙ্করবনির জঙ্গলে ফিরে আসে। হাতির ওই পালে দু’টি সদ্যোজাত শাবক রয়েছে। মঙ্গলবার রাতে হাতিগুলি বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে সাঁকরাইল ব্লকের বাকড়া, কাটনিমারো, পাথরকাটি, আঙ্গারনালি ও মানিকঝাঁটিয়া গ্রামে দফায়-দফায় হামলা চালায়। ধূলিসাৎ হয়েছে ৮টি মাটির বাড়ি। আরও বেশ কিছু বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাকড়া গ্রামটি। বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, মঙ্গলবার রাত ৯টা নাগাদ অতর্কিতে ৮-৯ দলে ভাগ হয়ে হাতিরা ওই গ্রামগুলিতে হামলা চালায়। হাতিদের হামলায় বাকড়া গ্রামের বিপিন মাহাতোর একটি মুরগি খামারের একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অধিকাংশ চাষির খেতের ধান এখন ঘরের গোলায় উঠেছে। গ্রামবাসী ক্ষীরোদ মাঝি, কালিপদ মান্না, মিহির মাহাতোরা জানালেন, বাড়ির গোলায় মজুত ধানের বস্তা টেনে বের করে খেয়ে, ছড়িয়ে নষ্ট করেছে হাতিরা। এখনও কারও কারও খেতে পাকা ধান রয়েছে। কিছু চাষি সর্ষে বুনেছেন। সেগুলিও খেয়ে-মাড়িয়ে সাবাড় করে দিয়েছে হাতিরা। বাকড়া জুনিয়ার হাইস্কুলের দরজা ভেঙে মিড ডে মিলের চালের দু’টি বস্তাও লুঠ করেছে হাতিরা। রাত সাড়ে তিনটে পর্যন্ত লুঠপাট চালিয়ে ভোরের আলো ফোটার আগেই হাতিরা শঙ্করবনি জঙ্গলে ঢুকে পড়ে।
ফেরার সময় হাতিরা কেন এমন আক্রমণাত্মক আচরণ করছে?
বনকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, মাঠে এখন ধান নেই। ফলে খাবারের টানে গৃহস্থের বাড়িতে, স্কুলে হামলা চালাচ্ছে হাতিরা। ফেরার সময় হাতিরা সচরাচর বিশ্রামের জন্য এক-দু’দিনের বেশি কোথায় থাকে না। হাতিদের বড় দলটির সঙ্গে মাত্র দশ-বারো দিন বয়সী দু’টি শাবক থাকায় তারা ফিরতে গড়িমসি করছে বলেই মনে করা হচ্ছে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, আরও ২০টি হাতি নয়াগ্রামে রয়ে গিয়েছে। ওই হাতিগুলিও কয়েকদিনের মধ্যেই কলাইকুণ্ডা রেঞ্জ এলাকায় চলে আসতে পারে। সম্ভবত সেই কারণে বড় দলটি শঙ্করবনি জঙ্গলে পিছনের দলটির জন্য অপেক্ষা করছে। অভিজ্ঞ বনকর্মীদের ধারণা, হাতির পালটি এখনই দলমায় ফিরবে না। হাতির পালটি চাঁদড়া হয়ে লালগড় বা গোয়ালতোড়ের দিকে যেতে পারে। আপাতত বড় দলটি শঙ্করবনিতে ঘাঁটি গাড়ায় এলাকাবাসীর পাশাপাশি, বনকর্মীরাও চিন্তায় রয়েছেন। খড়্গপুরের ডিএফও অঞ্জন গুহ বলেন, “সঙ্গে সদ্যোজাত শাবক থাকায় জোর করে হাতির পালটিকে খেদানোর চেষ্টা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। আমরা হাতির দলটির উপর নজর রাখছি।” |