এক দিন নিখোঁজ থাকার পরে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় এক তৃণমূল নেতার বস্তাবন্দি দেহ উদ্ধার হল। ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার সকালে দেহ আটকে রেখে দীর্ঘ ক্ষণ বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। ভাঙচুর চালানো হয় এক অভিযুক্তের বাড়িতে। ঘটনাটি হরিপালের চক চণ্ডীপুরের। পুলিশ জানায়, নিহত তৃণমূল নেতার নাম শেখ নৌসাদ আলি (৪৬)। বাড়ি স্থানীয় চক শান্তিপুরে। সেখান থেকে কয়েকশো মিটার দূরত্বেই এ দিন উদ্ধার হয় তাঁর দেহ। ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। হুগলি জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শিল্পাঞ্চল) অমিতাভ বর্মা জানান, অভিযুক্ত আরও কয়েক জনের খোঁজে তল্লাশি চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তৃণমূলের স্থানীয় বুথ কমিটির সভাপতি ছিলেন নৌসাদ। হরিপালের বড়বাজারে সব্জি বিক্রি করতেন। দীর্ঘদিন ধরে জমির দালালির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। তাঁর বাড়ির লোকেরা জানান, প্রতিদিনের মতো মঙ্গলবার ভোরে শেওড়াফুলি হাঁটে সব্জি কিনতে বের হন নৌসাদ। আর ফেরেননি। সকাল ১১টা নাগাদ মেয়ে ফরমিনা খাতুন তাঁর মোবাইলে ফোন করেন। কিন্তু মোবাইল বন্ধ ছিল। দুপুর গড়িয়ে গেলেও তিনি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। রাতে থানায় গিয়ে ডায়েরি করেন ভাই শেখ দেদার আলি। বুধবার স্থানীয় মানুষ দেখেন, ধানখেতের মধ্যে মুখবাঁধা অবস্থায় একটি বস্তা পড়ে রয়েছে। বস্তার মুখ খুলতেই বেরোয় নৌসাদের দেহ। |
নিহত নেতার দেহ। —নিজস্ব চিত্র। |
তিনি নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই এলাকায় চাপা উত্তেজনা ছিল। দেহ উদ্ধারের খবর চাউর হতেই আগুনে ঘি পড়ে। দলে দলে গ্রামবাসী সেখানে ভিড় করেন। মৃতদেহ ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয়। পুলিশকে দেহ তুলতে বাধা দেওয়া হয়। দোষীদের অবিলম্বে গ্রেফতার এবং পুলিশ কুকুর আনার দাবি ওঠে। বেলা ১০টা নাগাদ রাজ্যের মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক বেচারাম মান্না ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁর আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। পুলিশ জানায়, নিহতের গলা, দেহে আঘাতের চিহ্ন আছে।
দেদার পরে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন হরিপাল থানায়। তার ভিত্তিতেই আব্দুল মান্নান মল্লিক ওরফে মানু, তাঁর ছেলে জাকির মল্লিক এবং বাসুদেব দে নামে তিন জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। মানুর বাড়িতে ভাঙচুর চালায় ক্ষিপ্ত জনতা। দেদার বলেন, “জমিজমা-সংক্রান্ত ব্যাপারে দাদার সঙ্গে ওদের বিবাদ চলছিল। তা নিয়ে দিন কয়েক আগে মানু খুনের হুমকিও দিয়েছিল দাদাকে।” তদন্তকারী পুলিশ অফিসারদের দাবি, জমি কেনাবেচা নিয়ে নৌসাদের কাছ থেকে ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকা পাওনা ছিল কয়েক জনের। তা নিয়ে দু’পক্ষের গোলমাল চলছিল। সেই আক্রোশেই ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে।
বেচারামবাবু অবশ্য দাবি করেন, “অভিযুক্তেরা বাম আমলে জমি আত্মসাৎ করে বিক্রি করত। নৌসাদ এ সবের প্রতিবাদ করত। সেই কারণেই ওকে মরতে হল। এই ঘটনার পিছনে রাজনৈতিক কারণও রয়েছে।” দেদার অবশ্য বলেন, “ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগ নেই।” |