নিজস্ব সংবাদদাতা • উত্তরপাড়া |
প্রস্তাবিত উত্তরপাড়া ফিল্মসিটির জমি থেকে ইটভাটা সরানোর প্রক্রিয়া হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিত। বড়দিনের আগের রাতে তেমনই একটি ইটভাটার মালিক-সহ পাঁচ জনের বাড়িতে হামলার অভিযোগে তৃণমূলের এক কাউন্সিলর-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হল। হামলার প্রতিবাদে বুধবার স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বিক্ষোভ দেখান। পুলিশ অবশ্য ইটভাটা-প্রসঙ্গ এড়িয়ে গিয়ে দাবি করছে, ব্যক্তিগত আক্রোশের বশেই এই হামলা।
কলকাতার কাশীপুর থেকে বাঁকুড়ার পাত্রসায়র, শাসকদলের লোকজনের বিরুদ্ধে সম্প্রতি বারবার গা-জোয়ারির অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার রাতে হুগলির উত্তরপাড়ায় ফের তারই পুনরাবৃত্তি ঘটায় অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলের জেলা সভাপতি তপন দাশগুপ্ত বলেন, “উত্তরপাড়া-কোতরং পুরসভার ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সন্দীপ দাসকে পুলিশ ধরেছে শুনেছি। তিনি ঘটনায় জড়িত কি না দেখছি। তাঁকে শো-কজ করা হচ্ছে।” শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “এমন ঘটনা আমরা প্রশ্রয় দেব না।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোতরংয়ের এক ইটভাটার ম্যানেজার আফতাব আলম মল্লিক ওরফে লাল্টুর বাড়ি ধারসা দরগাতলা রোডে। তাঁর অভিযোগ, “রাত পৌনে ১টা নাগাদ সন্দীপ দাসের নেতৃত্বে জনা পনেরো লোক মোটরবাইকে এসে চড়াও হয়। আমার ও পাশে দাদার বাড়িতে ইট-পাটকেল ছুড়ে জানলার কাচ ভাঙে। পাঁচিল টপকে আমার বাড়ির চৌহদ্দিতেও ঢুকে পড়েছিল। ভয় পেয়ে থানায় ফোন করি।” ইতিমধ্যে বাবলু মণ্ডল এবং অশোক ঘোষ নামে দুই ভাটা-মালিক এবং প্রাক্তন ভাটা-কারবারি ভানু বসুর বাড়িতেও চড়াও হয় হামলাকারীরা। বাবলুবাবুর ইটভাটা প্রস্তাবিত ফিল্মসিটির জমির মধ্যেই পড়েছে, অশোকবাবুর ভাটা বাইরে।
কোতরং বৈদিকপাড়ার বাসিন্দা বাবলুবাবু বলেন, “ওরা গ্রিলের গেট ভাঙার চেষ্টা করছিল। ইট ছুড়ে জানলার কাচ ভেঙে দেয়। গালিগালাজ করছিল। বেরোনোর সাহস পাইনি। আমরা যাতে ইটভাটায় আর না যাই, সেই হুমকিও দেওয়া হয়েছে।” তাঁদের আশঙ্কা, ইটভাটা সরানোর ব্যাপারে স্থগিতাদেশ জারি হওয়াতেই এ ভাবে হামলা হল। পরে পুলিশের টহলদার ভ্যান ঘটনাস্থলে চলে আসে। ভানুবাবুর স্ত্রী ববিতা বসুর অভিযোগের ভিত্তিতে কাউন্সিলর-সহ চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের খোঁজ চলছে। সন্দীপবাবুর দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ।” এ দিন শ্রীরামপুর আদালতে তোলা হলে তাঁদের ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দলের একাংশের মতে, হামলার পিছনে দুই গোষ্ঠীর সংঘাত। ধৃতেরা পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল তথা জেলা যুব তৃণমূলের সভাপতি দিলীপ যাদবের ঘনিষ্ঠ। ফিল্মসিটির কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি তৎপর। আবার পুরসভার ভাইস-চেয়ারম্যান পিনাকী ধামালি ভাটা মালিকদের ঘনিষ্ঠ। তাঁকে ও ভাটা মালিকদের বার্তা দিতেই দিলীপের বাহিনী হামলা চালায়। দিলীপ অবশ্য বলেন, “অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। যথাযথ জায়গায় জানিয়েছি। সংবাদমাধ্যমকে কিছু বলব না।” পিনাকীবাবুর বক্তব্য, “কারা হামলা চালিয়েছে, জানি না।” গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কথা উড়িয়ে তাঁর দাবি, “ইটভাটা মালিকদের সঙ্গে আমার কোনও বন্ধুত্বও নেই, শত্রুতাও নেই। ফিল্মসিটি আমিও চাই।”
|