সম্পাদকীয় ২...
আধুনিক অন্ধকার
০১১ সালের জুলাই মাসে দক্ষিণ সুদান সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে জন্ম লইয়াছিল। প্রেসিডেন্ট মহম্মদ বশিরের নেতৃত্বাধীন সুদানের শাসকরা তাহাকে স্বাধীনতা দিতে নারাজ ছিলেন। দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘ সংগ্রাম এবং আন্তর্জাতিক চাপ শেষ অবধি ইতিহাসের চাকা ঘোরায়। সুদানের অঙ্গ হইয়াই থাকিব, না স্বাধীন দেশ গড়িব এই দুই বিকল্পের ভিত্তিতে গণভোট অনুষ্ঠিত হইলে দক্ষিণ সুদানের প্রায় একশো শতাংশ মানুষ স্বাধীনতা বাছিয়া লন। রাষ্ট্রপুঞ্জ নূতন সদস্য লাভ করে। নূতন রাষ্ট্রের পথ সুগম হইবে না, জানা ছিল। তীব্র দারিদ্র ও অনগ্রসরতা, সমস্ত ধরনের পরিকাঠামোর প্রায় সম্পূর্ণ অনুপস্থিতি, (উত্তর) সুদানের অসহযোগ এবং বৈরিতা, প্রায় তিন দশকের গৃহযুদ্ধের উত্তরাধিকার এই সমস্ত সমস্যার সহিত যুক্ত রহিয়াছে দেশটির অভ্যন্তরীণ জাতিগোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব। দিন্কা ও নুয়ের দুইটি প্রধান জাতিগোষ্ঠীর পারস্পরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস পুরানো। স্বাধীনতা অর্জনের তাগিদে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা অংশত প্রশমিত ছিল, কিন্তু অন্তর্হিত হয় নাই। স্বাধীন দেশের রাষ্ট্রক্ষমতার ভাগ কে কতটা পাইবে, তাহা বড় প্রশ্ন হইয়া দেখা দিয়াছিল। দুই তরফের মধ্যে ক্ষমতার এক ধরনের বণ্টনের মাধ্যমে একটি আপস-রফা হয়। দিন্কা জনজাতির প্রেসিডেন্ট সালভা কির এবং নুয়ের জনজাতির ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচের এই ভারসাম্যের প্রতীক হিসাবে চিহ্নিত হন। ভারসাম্য শুরু হইতেই অস্থির ছিল। সম্প্রতি তাহা বিপর্যস্ত, হয়তো অচিরেই সম্পূর্ণ ভাঙিয়া পড়িবে। ভাইস প্রেসিডেন্ট রিক মাচের আগেই পদত্যাগ করিয়াছেন। বিভিন্ন এলাকায় দুই গোষ্ঠীর মধ্যে লড়াই চলিতেছে। সামরিক বাহিনীও গোষ্ঠীগত ভাবে বিভাজিত। নিহতের সংখ্যা সহস্র ছাড়াইয়াছে, গৃহহীন লক্ষাধিক। রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধের সমস্ত উপকরণ মজুত। দক্ষিণ সুদান দুই দশক আগের রোয়ান্ডার কথা মনে করাইতেছে। দিন্কা বনাম নুয়ের লড়াইয়ে ছায়া পড়িতেছে সে দিনের হুটু বনাম টুটসি সংঘাতের। পুরানো প্রশ্ন নূতন করিয়া উঠিতেছে: এই ধরনের সমাজ তথা রাষ্ট্র কি গোষ্ঠী-সংঘাতের শিকার হইয়াই চলিবে? গণতন্ত্রের আধুনিক পথে তাহাদের উত্তরণ নাই?
প্রশ্নটি অগ্রাহ্য করিবার কোনও উপায় নাই। গোষ্ঠীগত পরিচিতি কেবল আফ্রিকা নয়, অন্য অনেক অঞ্চলেই কেমন হিংস্র এবং পৈশাচিক আকার ধারণ করিতে পারে, তাহা নূতন করিয়া বলিবার কোনও প্রয়োজন নাই। কিন্তু এই সত্য অনস্বীকার্য যে আফ্রিকার বহু দেশেই এই গোষ্ঠীগত সংঘাতের যে চেহারা দেখা গিয়াছে এবং এই মুহূর্তেও যাইতেছে, তাহা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। ইহাকে প্রাচীন গোষ্ঠী-সংঘাতের সহিত এক করিয়া ফেলিলে ভুল হইবে। যেমন রোয়ান্ডায়, তেমনই দক্ষিণ সুদানে, তেমনই অন্য নানা ক্ষেত্রেও গোষ্ঠীসত্তাকে কাজে লাগানো হইতেছে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের রেষারেষিতে, যাহার সহিত অর্থনৈতিক ক্ষমতার সংযোগ গভীর। দক্ষিণ সুদানের দৃষ্টান্তও তাহাই দেখাইয়া দেয় দেশটির পেট্রোলিয়ম ভাণ্ডার দখলে রাখিবার জন্য সুদান দীর্ঘকাল তাহাকে মুক্তি দিতে চাহে নাই, আবার আজ সেই কালো সোনার দখল লওয়াই দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাগোষ্ঠীর একটি বড় লক্ষ্য। প্রাচীন জাতিসত্তা সেই আধুনিক ক্ষমতা-সংঘাতের হাতিয়ার। ইহাকে ‘অন্ধকার আফ্রিকা’র আদিম লড়াই হিসাবে দেখিলে কেবল আফ্রিকার অপমানই হয় না, ইতিহাসের অতিসরলীকরণের ভ্রান্তিও হয়। অন্ধকার নিশ্চয়ই গভীর, কিন্তু সেই অন্ধকার যতটা প্রাচীন, তাহা অপেক্ষা অনেক বেশি আধুনিক।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.