উৎসবের মরসুমে স্বাদবদল হচ্ছে সংশোধনাগারের অন্দরেও। ২৫ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্দিদের নিয়ে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী ‘ফুড ফেস্টিভ্যাল’ বা খাদ্য উৎসব।
ছোলে-বাটুরা, পালং কচুরি, পরোটা-আলুরদম থেকে শুরু করে বিরিয়ানি-চিলি চিকেন-ফ্রাইডরাইস— কী নেই খাবারের তালিকায়! আছে দইবড়া, পাপড়ি চাট, দিল্লি ফুচকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের পকোড়া আর চপও। সাত দিনের উদ্যাপনে থাকছে বিভিন্ন লোভনীয় খাবারের স্টল। সেখান থেকে বন্দিরা নিজেরা কিনে খেতে পারেন ওই সব খাবার। সঙ্গে চলবে খোশগল্প।
আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের এক কর্তা বলেন, “দু’বছর ধরে আমাদের সংশোধনাগারে এই উৎসব শুরু হয়েছে। বর্ষশেষের এই ক’টা দিন বন্দিরাও একটু অন্য জীবনের স্বাদ পান।” ওই কর্তা জানান, সপ্তাহভরের এই আয়োজনে কারা দফতরের কর্তারা বিভিন্ন সময়ে জেলে এসে এই খাদ্য উৎসবে যোগ দেন। বন্দিদের সঙ্গে গল্পগুজবের সঙ্গে সঙ্গে খাওয়া-দাওয়াও চলে। উৎসবে যোগ দেন সারা বছর জেলে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মীরাও। |
বছর পাঁচেক আগে কলকাতার এক ভুজিয়া প্রস্তুতকারী সংস্থার মালিক প্রভুশঙ্কর অগ্রবালের উদ্যোগে আলিপুর কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে শুরু হয়েছিল স্বনির্ভর গোষ্ঠী। জেলের ভিতরে ওই গোষ্ঠী একটি খাবারের দোকান চালু করে। কখনও কোনও বন্দির ভাল খাবার খেতে ইচ্ছে করলে ওই দোকান থেকে কিনে খেতে পারেন। সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত বন্দিরা জেলে কাজ করে যে রোজগার করেন, তার একটি অংশ ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা হয়। জেলের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘লাল টাকা’। বন্দিরই পরিবারের বিভিন্ন প্রয়োজনে তাঁরা অনুমতি নিয়ে ওই টাকা খরচ করতে পারেন। বাকি টাকা থাকে জেলে। জেল-কর্তাদের কাছ থেকে সেই টাকা নিয়ে মাঝে মধ্যে স্বাদবদল করেন তাঁরা। ‘নতুন জীবন’ নামের ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর হাত ধরেই বুধবার থেকে আলিপুর জেলে শুরু হয়েছে খাদ্য উৎসব।
এ দিন উৎসবের সূচনা করেন কারা দফতরের আইজি রণবীর কুমার। পরে তিনি বলেন, “ছোলা-বাটুরা খেয়ে উৎসব শুরু হয়েছে। আলিপুর জেলের এই গোষ্ঠীটি খুবই সক্রিয়। তারাই উৎসাহ নিয়ে উৎসব করে। আমরা পাশে থেকে সাহায্য করি।”
এক কারা-কর্তা বলেন, “বছর পাঁচেকের মধ্যেই ‘নতুন জীবন’ নামের ওই দোকানটি বড় হয়ে উঠেছে। প্রভু অগ্রবালের মতো যাঁরা দোকানটি শুরু করেছিলেন, তাঁরা নেই। কিন্তু দোকান বেড়েই চলেছে। এখন যে দশ জন ওই গোষ্ঠীর সদস্য, তাঁরা বছরে ওই দোকান থেকে গড়ে হাজার পঞ্চাশেক টাকা রোজগার করেন।” কারা দফতর সূত্রের খবর, সর্বাণ কোড়েল, চন্দন চন্দ, আব্দুল রশিদ মোল্লা, রজত পাল, গৌরহরি মণ্ডল, দাশু প্রামাণিক, উজ্জ্বল ঘোষ, মাধব বাদ্যকার, পল্টু বিশ্বাস এবং ভূষণ হালদার— এই দশ জন বর্তমানে ওই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য।
আলিপুর মহিলা সংশোধনাগারের বন্দিদের জন্যও এ দিন ছিল কেক-কমলালেবু। এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে সাজানো হয়েছে সংশোধনাগার। তবে শুধু আলিপুরেই নয়, বড়দিনের উৎসবের ছোঁয়া লেগেছে অন্য জেলগুলিতেও।
দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে উৎসব উপলক্ষে বৈচিত্র এসেছে দৈনন্দিন খাবারের মেনুতে। এ দিন দুপুরে বন্দিরা খেয়েছেন পাঁঠার মাংস-ভাত। সঙ্গে বাঁধাকপি, কড়াইশুঁটির তরকারি আর মুসুর ডাল। প্রেসিডেন্সি কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে অবশ্য পৃথক কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি। তবে ওই জেলে বন্দি হিসেবে জনা বিশেক নাইজেরীয় রয়েছেন। জেলের এক কর্তা বলেন, “ওঁরা নিয়ম মেনে বড়দিন পালন করেছেন। ওঁদের আলাদা রান্না করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। বাকি বন্দিদের ওঁরাই কেক খাইয়েছেন।” |