শীত জাঁকিয়ে পড়েনি তাতে কী? বড়দিনের মেজাজে খামতি ছিল না সামান্যও। শুধু ময়দান, চিড়িয়াখানা বা পার্ক স্ট্রিট নয়, বড়দিনের ভিড় উপচে পড়তে দেখা গেল শহরতলির পার্কগুলোতেও। এমনকী ভিড়ে ময়দান বা চিড়িয়াখানাকে রীতিমতো চ্যালেঞ্জ জানাল শহরতলির বিভিন্ন পার্ক।
বুধবার সল্টলেকের নিকো পার্কে গিয়ে দেখা গেল বরফের বল বানিয়ে ছোড়াছুড়ি করছে এক দল খুদে। নিউ টাউনের ইকো পার্কেও দিনভর ওয়াটার বেলুনে চড়ে আনন্দে মেতেছেন অনেকে। কেউ কেউ আবার স্রেফ ঘাসের উপরে সতরঞ্চি পেতে বাড়ি থেকে আনা লুচি-আলুর দম খেয়ে কাটিয়ে দিলেন বড়দিন।
কাল, শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিউ টাউনের ইকো পার্কে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প উদ্বোধন করবেন। গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ইকো পার্ক উদ্বোধনের সময়েই তিনি বলেছিলেন, শহরের সৌন্দর্যায়নের জন্য নতুন পার্কগুলিকে আরও আকর্ষণীয় হতে হবে। তবেই উৎসবের দিনে শহর আরও বর্ণময় হয়ে উঠবে। মানুষ জনও অনেক বেশি জায়গায় ঘোরার সুযোগ পাবেন। এ দিনের ভিড় বুঝিয়ে দিল এক বছরের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর এই ইচ্ছাই কার্যত ফলে গিয়েছে। ইকো পার্ক, নিকো পার্ক, রবীন্দ্র তীর্থের মতো জায়গাগুলো আরও বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। |
হাতে হাতে রোবট। বুধবার, নিকো পার্কে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক। |
বড়দিনের সকাল থেকেই ইকো পার্কের টিকিট কাউন্টারের সামনে ছিল লম্বা লাইন। গাড়ি পার্কিং করার জায়গা পাচ্ছিলেন না শ্যামবাজার থেকে আসা রাহুল বসু। তিনি বললেন, “প্রতি বছরই এই দিন ময়দান বা চিড়িয়াখানায় যাই। স্বাদ বদলের জন্য ইকো পার্কে এসেছি। এত ভিড় হবে ভাবিনি।” ইকো পার্কের ওয়াটার বেলুনে চেপে রীতিমতো উত্তেজিত দশম শ্রেণির ছাত্রী বিদিশা রায়। সে বলল, “যখন ঠিক হল এ বার ময়দান না গিয়ে ইকো পার্ক যাব তখন মনখারাপ হয়েছিল। কিন্তু এসে মনখারাপ উধাও। দারুণ মজা করলাম।” কেউ আবার সাইকেল ভাড়া করে পার্কটি ঘুরে দেখেছেন দিনভর। বিরাটি থেকে পরিবার-সহ এসেছিলেন পুলকেশ হাজরা। তিনি বললেন, “বাড়ির কাছে এত সুন্দর একটা পার্ক থাকতে কেন ময়দানে যাব?” ইকো পার্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, নববর্ষের সময় এখানে আরও ভিড় হওয়ার সম্ভাবনা। কারণ শুক্রবার মুখ্যমন্ত্রী আরও প্রকল্প উদ্বোধনের পরে পার্কটি আরও সুন্দর ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলেই তাঁদের আশা।
হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন বলেন, “গত বছরের তুলনায় এ বছর ইকো পার্কে ভিড় অনেক বেশি।” ইকো পার্কের কাছে রবীন্দ্রতীর্থেও এ দিন ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
অন্য দিকে, নিকো পার্কেও সকাল থেকেই সান্তার টুপি পড়ে শেরুকে ঘিরে নাচে মেতে উঠেছিল খুদেরা। ভিড় উপচে পড়েছে মিলিটারি ব্যান্ড প্যারেড দেখতে। কর্তৃপক্ষ জানালেন, ওয়াটার রাইডগুলিতে অন্য বারের মতোই ভিড় ছিল। তবে এ বছর নতুন সংযোজন স্নো-বল আর কাউবয়দের স্টান্ট দেখার উৎসাহ ছিল খুব বেশি। বাগুইআটির রত্না দে এসেছিলেন পরিবারের সঙ্গে। তিনি বললেন, “এ বার নিকো পার্কে বেশি মজা হল। এই প্রথম বরফের বল নিয়ে খেললাম।”
নিকো পার্কের বিভিন্ন রাইড রোপওয়ের সামনেও ছিল লম্বা লাইন। ইকো পার্ক ভ্রমণ সেরে নিকো পার্কে এসেছিলেন কাঁকুড়গাছির এক যুবক। ভিড় ঠেলতে ঠেলতে তিনি বলে উঠলেন, “দুর্গাপুজোর মতো বড়দিনের ভিড়ে কোন পার্ক প্রথম হল, সে বিচারও এ বার শুরু হলেই পারে।”
|