বেলা দু’টোয় চিড়িয়াখানার উল্টো দিকে দড়ি ফেলেও ভিড় সামলাতে পারছে না পুলিশ।
বিকেল তিনটেয় এ জে সি বসু রোড দিয়ে ভিক্টোরিয়ার জনস্রোত দেখে মনে হতেই পারে যেন কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিল।
দিনভর তারামণ্ডল-মোহর কুঞ্জের সামনে হাতে-হাতে বিকোলো সান্তাক্লজের টুপি।
সব মিলিয়ে বড়দিনে জমজমাট মহানগর। পুলিশ সূত্রের খবর, বুধবার সকাল থেকেই লোক জমতে শুরু করেছিল শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় জায়গাগুলিতে। বেলা যত গড়িয়েছে, ততই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ভিড়। এ দিক-ও দিক ঘোরার পাশাপাশি সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালে, গঙ্গাতীরের পার্কেও গিয়েছেন অনেকে। তবে চিড়িয়াখানা-ভিক্টোরিয়া-সায়েন্স সিটির পাশাপাশি এ দিন ভিড় টেনেছে কিশোর পরিবেশ মেলাও। মঙ্গলবার থেকেই মোহর কুঞ্জে শুরু হয়েছে মেলা। বেলা আড়াইটেতে ওই মেলার মঞ্চে যখন গান ধরেছেন এক বাউল, তখন সেখানে চোখে পড়ল কচিকাঁচাদের পাশাপাশি যুবক-যুবতী-মাঝবয়সীদের ভিড়ও। মেলা চত্বরে স্কুল পড়ুয়াদের পাশাপাশি স্টল দিয়েছে নামী রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি সংস্থাও। সেখানেও ভিড় জমিয়েছেন উৎসুক লোকজন। কোল ইন্ডিয়ার স্টলে হাঁ করে কয়লা উত্তোলনের ছবি দেখছিল বছর দশেকের সৌরভ দাস। হাতে জৈব সারের স্টল থেকে নিয়ে আসা চারা গাছ-সারের প্যাকেট। মোহর কুঞ্জে দেখা মিলেছে সবুজ রঙের জামা-প্যান্ট পরা এক সান্তারও। আজ, বৃহস্পতিবার মেলার শেষ দিনেও মানুষের ঢল নামবে বলে আশা করছেন কিশোর পরিবেশ মেলার উদ্যোক্তারা। |
জনারণ্য পার্ক স্ট্রিট। বড়দিনের সন্ধ্যায়। ছবি: সুদীপ্ত ভৌমিক। |
বস্তুত, শহরে বড়দিনের এই মেজাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল শুক্রবার থেকেই। ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যালের উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার রাতে সেন্ট পলস ক্যাথিড্রাল থেকে বেরিয়ে ফের পার্ক স্ট্রিট ঘুরে দেখেন মুখ্যমন্ত্রী। তার পর মধ্যরাতে ঘুরে দেখেন চন্দননগরের আলোয় সাজানো পার্ক স্ট্রিটও।
বুধবার বড়দিনের মেজাজের সুর আরও চড়িয়েছে আবহাওয়া। সকাল থেকে শহরে বইতে শুরু করে হিমেল হাওয়া। সব মিলিয়ে বড়দিনের গন্ধটাও যেন ছড়িয়ে পড়ে কলকাতার আনাচে-কানাচে। সেই গন্ধ নিয়েই এ দিন শহরে চড়ুইভাতির আসর জমিয়েছিলেন অনেকে। ময়দানের পাশাপাশি প্রিন্সেপ ঘাটেও চাদর বিছিয়ে বসে দিব্যি খাওয়াদাওয়া চলেছে। কচিকাঁচারা মেতেছে ব্যাডমিন্টনে।
বিকেল চারটে। প্রিন্সেপ ঘাটের রেল লাইন পেরিয়ে দলে দলে গঙ্গাতীরের পার্কের দিকে চলেছেন লোক জন। প্রিন্সেপ ঘাট থেকে টানা বাবুঘাট পর্যন্ত সার দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অনেকে। কেউ ব্যস্ত সূর্যাস্ত দেখতে, কেউ বা মেতেছেন গল্পে।
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। ভিড় এ বার রওনা দিল পার্ক স্ট্রিটের দিকে। ভিড় সামাল দিতে অবশ্য বিকেল পাঁচটা থেকেই পার্ক স্ট্রিটে গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দিয়েছিল পুলিশ। ছিল অতিরিক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। পুলিশ সূত্রের খবর, দিনে-রাতে অনেকেই পার্ক স্ট্রিটের রেস্তোরাঁগুলিতে উঁকি দিয়েছেন। কিন্তু ভিড়ের দাপটে অনেকে আবার ভিতরে ঢুকতেই পারেননি। স্ট্রিট ফুডের দোকান, ক্রিসমাস ফেস্টিভ্যাল মিলিয়ে গোটা পার্ক স্ট্রিটেই এখন কার্নিভালের মেজাজ। সন্ধের ভিড়ে প্রায় অষ্টমীর চেহারা। ভিড় হয়েছে ট্যাংরার চিনে পাড়াতেও। কেউ কেউ আবার রাতে বাড়ি ফেরার পথে উঁকি মেরেছেন বৌবাজারের বো ব্যারাকেও।
শুধু পার্ক স্ট্রিটই নয়, দিনভরই দর্শনীয় সব জায়গাতেই পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিল। ছিল সাদা পোশাকে নজরদারিও। জোর দেওয়া হয়েছিল ট্র্যাফিকেও। উৎসবের কারণে এ দিন নন্দন-ভিক্টোরিয়া-এজেসি বসু রোডে অল্প যানজট হয়েছে। অনেক বাসেই যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড় নজরে এসেছে।
উৎসবের ভিড়ে নজরে এসেছে কিছু বিশৃঙ্খলাও। দুপুরে চিড়িয়াখানায় সিংহের নয়া এনক্লোজারের পিছন দিকে টিন খুলে দিয়েছে লোকজন। দলে দলে লোকের হাত থেকে আইসক্রিম খেয়েছে জিরাফ! মোহরকুঞ্জে চারাগাছও মাড়িয়েছেন অনেকে। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার রাত পর্যন্ত শহরে ধৃত ২৯৩ জন।
|