তিন মাসেও জমা পড়েনি প্রচারে খরচের হিসেব
হারুন বা জিতুন!
ভারতের নির্বাচন কমিশনের নিয়ম হল, ভোট-পর্ব চুকে যাওয়ার এক মাসের মধ্যেই সকল প্রার্থীকেই ভোট প্রচারের খরচের যাবতীয় হিসেব দাখিল করতে হবে।
কিন্তু ঘটনা হল, পুরভোটের পরে তিন মাস কেটে গেলেও দুবরাজপুরে এক জন প্রার্থীও তাঁদের ভোট-খরচের হিসেব প্রশাসনের কাছে জমা দেননি। প্রশাসন প্রত্যেক প্রার্থীকেই হিসেব জমা দিতে বারবার চিঠি দিয়েছে। রাজ্যের শাসকদলই হোক কিংবা বিরোধী সিপিএম টনক নড়েনি এক কারও। অথচ দুবরাজপুরের ১৬টি ওয়ার্ডে ভোট হয়েছে গত ২১ সেপ্টেম্বর। তৃণমূল, সিপিএম, কংগ্রেস ও বিজেপি এই চার রাজনৈতিক দলের মোট ৫৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিন দিনের দিনই ফল প্রকাশিত হয়েছে। ইতিমধ্যেই নতুন কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ, পুরপ্রধান নির্বাচনও হয়ে হিয়েছে। কিন্তু ভোট প্রচারের খরচের হিসেব দেওয়ার বেলায় তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিএম সব দলের প্রার্থীদেরই গড়িমসি করতে দেখা যাচ্ছে।
পুরভোটের রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমাশাসক (সিউড়ি সদর) চন্দ্রনাথ রায়চৌধুরী বলেন, “আগেই এ ব্যাপারে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একাধিকবার অনুরোধও করা হয়েছে। তবে এখনও কেউ-ই তা জমা দেননি”
ভোট প্রচারে খরচের উর্ধ্বসীমা রাজ্য নির্বাচন কমিশন সীমা বেঁধে দেয়। প্রার্থীদের জানানো হয়, ঠিক কত টাকা ভোটের জন্য খরচ করা যাবে। এ বারের পুরভোটে যেমন নির্দেশ ছিল, যে সব ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার বা তার কম, সেখানে প্রার্থীরা সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে পারেন। আর ৬ হাজারের পর প্রতি ভোটারপিছু ৫ টাকা খরচ করা যাবে। পুরভোটের পরে জেলা প্রশাসনকে তারই হিসেব দিতে হয়। কিন্তু তিন মাসেও সেই হিসেব আসেনি।
ভোট প্রচারের হিসেব দাখিলে এত গরিমসি বা অনিহা কেন?
রাজনৈতিক দলগুলির দাবি, অনিহা নয়। আসলে দিচ্ছি দেব করে, আর দেওয়া হয়নি। তবে ভোট প্রচারের হিসেব দাখিল করার সময়কাল যে একমাস, সেটাই বোধহয় মনে রাখতে চাননি কেউ-ই। ১৫ বছর ধরে পুরপ্রধানের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পীযূষ পাণ্ডে। কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে এসে এ বারও জিতেছেন। অথচ তিনিও বলছেন, “ভোট প্রচারের হিসেব দিতে হয় ঠিকই। কিন্তু তার জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় আছে বলে জানি না। গত বছর পুরভোটের বছর দেড়েক পরে তা জমা দেওয়া হয়েছিল। মহকুমাশাসকের কাছ থেকে নির্দিষ্ট আবেদন পত্র এ বারও সংগ্রহ করেছি। শীঘ্রই তা জমা দেব।” একই বক্তব্য পুরসভার বিরোধী দলনেতা কংগ্রেসের শেখ নাজিরউদ্দিনেরও। তিনি বলেন, “গত বার পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে প্রসাশনের কাছে খরচের হিসেব দাখিল করেছি এ বারের পুরভোটের কিছু দিন আগে। এ বারেরটাও দিয়ে দেব।” এ দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্রের আবার দাবি, “আমরা নিয়ম মেনেই চলি। যত দূর জানি, ভোটের ফল প্রকাশের পর মাস দু’য়েকের মধ্যেই তা দেওয়ার কথা।” অরুণবাবুকে মনে করানো গেল, তিন মাস হতে চলল পুরভোটের ফল প্রকাশ হয়েছে। তখন তিনি বলেন, “আমাদের সকল প্রার্থীদের খরচের হিসেবের কাগজপত্র তৈরি হচ্ছে। শীঘ্রই তাঁরা তা জমা দেবেন।” অন্য দিকে, দুবরাজপুরের বিজেপি নেতা গত পুরবোর্ডের বিজেপি কাউন্সিলর সত্যপ্রকাশ তিওয়ারির সহজ স্বীকারোক্তি, “নিয়ম আছে জানি। তবে তা মানা হয়নি। সে জন্য দুঃখিত। আমাদের প্রার্থীদের ভোট প্রচারের খরচ প্রশাসনের কাছে জমা দিতে দ্রুত চেষ্টা করছি।”
কিন্তু হিসেব জমা দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়ম কী বলছে?
চন্দ্রনাথবাবু বলেন, “ভোট প্রচারের হিসেব প্রত্যেক প্রার্থীকে জমা দিতেই হবে, এইটুকু জানি। এর বাইরে আমার কাছে এই মুহূর্তে কোনও নির্দেশিকা নেই।” ১৯৫১ সালের ‘জন প্রতিনিধিত্ব আইন’ বলছে, ভোটপ্রার্থীদের কমিশনের কাছে প্রচারের খরচ পেশ করতেই হবে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলছেন, “নির্বাচন পর্বের মধ্যে তিন বার প্রার্থীদের অর্থ বিষয়ক পর্যবেক্ষকের কাছে প্রচারের খরচ দেখাতে হয়। চুড়ান্ত ভাবে খরচের হিসেব পেশ করতে হয় ফল ঘোষণার এক মাসের মধ্যে। তার পরেও হিসেব জমা না দিলে পরবর্তী ধাপে তাঁদের ‘শো-কজ’ করা হয়। জবাব সন্তোষজনক না হলে কিংবা হিসেব জমা না পড়লে ওই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” তার নজিরও রয়েছে। মাস কয়েক আগেই বিধানসভা নির্বাচনে খরচের হিসেব পেশ করতে না পারায় রাজ্যের ২৪ জন প্রার্থীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। ১৬টি বিধানসভা কেন্দ্রের ওই প্রার্থীরা আগামী তিন বছর লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে লড়তে পারবেন না বলে গত ১৩ অগস্ট প্রকাশিত কলকাতা গেজেটের বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়ে দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের ওই কালো তালিকায় তৃণমূল, সিপিএম, বিজেপি প্রভৃতি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীই রয়েছেন।
এ দিকে, প্রচারের হিসেব দাখিল করার ক্ষেত্রে গরিমসির অন্য কারণও রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন পুরভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রার্থীরা বলছেন, “আসলে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া টাকায় প্রচার করাটা খুবই মুশকিল। ফলে তার ঢের বেশি খরচা হয়ে যায়। এখন কী ভাবে নির্বাচন কমিশনের বেঁধে দেওয়া হিসেবের মধ্যে খরচটা দেখানো হবে, সেটা ঠিক করতেই হিমশিম খাচ্ছি!” অপর একটি সূত্রের দাবি, এ বার সব রাজনৈতিক দলই নিজেদের প্রার্থীদের জেতাতে ভোট প্রচারে লাগামছাড়া খরচ করেছে। দুবরাজপুর পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের কোনওটিতেই ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার বা তার বেশি তো নয়ই, বরং ১-২ হাজারের আশপাশে। এই সীমিত সংখ্যক ভোটারদের জন্যও প্রচারে প্রার্থীরা নির্ধারিত টাকার (সর্বোচ্চ ৩০ হাজার) চেয়ে অনেক বেশি খরচ করেছেন।
নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক প্রার্থী বলেন, “শুনেছি, এ বার এক প্রার্থী না কি নিজের প্রচারে লক্ষ টাকা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। অথচ, তাঁকেও খাতায়-কলমে দেখাতে হবে যে তিনি ৩০ হাজার টাকাই খরচ করেছেন! সেই হিসেব ‘দেখাতে’ গিয়েই তো দেরি হচ্ছে।”
হিসেবের এই গরমিলের জন্যই কি, তবে তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই গড়িমসি? এ প্রশ্নে মুখে কুলুপ এঁটেছেন সব দলের নেতারা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.