সিপিএমের এক পঞ্চায়েত সদস্যকে তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠল ভাতারে। ওই সদস্যের অভিযোগ, এলাকায় উন্নয়নের কোনও কাজই করতে দেওয়া হচ্ছে না তাঁকে। বিষয়টি নিয়ে বিডিও থেকে জেলাশাসক সকলের কাছেই অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। তবে তৃণমূলের দাবি, উন্নয়নের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না এমন অভিযোগ মিথ্যে।
ভাতারের মাহাতা পঞ্চায়েতের একমাত্র সিপিএম সদস্য যতীন মুর্মু। বাকি ১৬টি আসনের সবকটিই তৃণমূলের। গত ২০ ডিসেম্বর জেলাশাসক সৌমিত্র মোহনের কাছে পাঠানো চিঠিতে যতীনবাবু অভিযোগ করেন, ওই পঞ্চায়েতের উপপ্রধান কোনও আইনই মানছেন না। তাঁকে বিরোধী দলনেতা হিসেবেও মানা হচ্ছে না। পঞ্চায়েত আইন অনুযায়ী বিরোধী সদস্যদের স্থায়ী কমিটি-সহ অন্যান্য কমিটিতে রাখতে হয়। কিন্তু এখানে তা হচ্ছে না বলেও তাঁর অভিযোগ। যতীনবাবু বলেন, “আগে আমাকে পঞ্চায়েতের বিভিন্ন বৈঠকে যোগ দিতে দেওয়া হচ্ছিল না। পরে নানা জায়গায় চিঠি লেখার পরে বৈঠকে যোগ দিতে দিলেও, কোনও উন্নয়নের কাজের শরিক করা হচ্ছে না। হাজিরা খাতায় সই করে চলে আসতে হচ্ছে তৃণমূলের চাপে।”
ওই চিঠিতে যতীনবাবুর আরও অভিযোগ, যে এলাকা থেকে তিনি ভোটে জিতেছেন, সেই ১৭ নম্বর সংসদের মানুষকে তিনি কোনও পরিষেবাই দিতে পারছেন না। এমনকী আয় সংক্রান্ত শংসাপত্রও দিতে পারছেনা। এছাড়া ওই এলাকায় গত ৯ নভেম্বর ফলের চারা বিলি করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তৃণমূলের প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্যকে। যতীনবাবুর দাবি, এ ধরণের নানা অভিযোগ জানিয়ে স্থানীয় প্রশাসনকে একাধিকবার তিনি চিঠি পাঠিয়েছেন। কিন্তু তারা উদাসীন। জেলাশাসককে লেখা চিঠিতে যতীনবাবু আরও জানান, পঞ্চায়েতের নানা কাজে তাঁকে যোগ দিতে না দেওয়ার অভিযোগ জানাতে মাহাতা পঞ্চায়েতের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে প্রধান কমলা মাঝি (উপপ্রধান নিখিলেশ্বর মাঝির স্ত্রী) অনুপস্থিত থাকায় বাধ্য হয়ে উপপ্রধানের কাছে অভিযোগ জানান। উপপ্রধান তাঁকে পঞ্চায়েত ভবনে বসেই সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসার প্রস্তাব দেন। যতীনবাবুর দাবি, “আমাকে উপপ্রধান বলেন, একা আপনি আমাদের ১৬ জনের বিরুদ্ধে কী করতে পারবেন? কিছু করতে গেলে সমস্যায় পড়বেন। তার চেয়ে নিজেকে বাঁচাতে হলে আমাদের সঙ্গে যোগ দিন।”
উপপ্রধান নিখিলেশ্বরবাবু অবশ্য অভিযোগগুলি এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধানকাটার কাজ চলছিল বলে যতীনবাবুর গ্রামে ১০০ দিনের কাজ-সহ নানা প্রকল্প আটকে ছিল। সেগুলি শুরু হলে তাঁকে কাজের দায়িত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু উনি ধৈর্য্যচ্যুত হয়ে মিথ্যে অভিযোগ করছেন। আর বিরোধী দলনেতার মর্যাদা পেতে গেলে তো কয়েকজন বিরোধী সদস্যও থাকতে হয়। উনি তো একমাত্র বিরোধী সদস্য। তাহলে দল কোথায়!” আর তৃণমূলের যোগ দিতে চাপ দেওয়ার প্রসঙ্গে উপপ্রধানের সাফ জবাব, “এখন কাউকে আর তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ দিতে হয় না। সবাই তো আমাদের দলে আসতে লাইন দিয়ে রয়েছেন। দেখলেন না, হাওড়া, আসানসোল পুরসভায় কি হল? ওখানে যাঁরা এলেন, তাঁদের কী আমরা ডাকতে গিয়েছিলাম?”
ভাতারের বিডিও প্রলয় মণ্ডল বলেন, “যতীনবাবু আমার কাছে অভিযোগ করেছিলেন যে ওঁকে পঞ্চায়েতের কাজে সামিল করা হচ্ছে না। সেই ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি। তবে ওঁকে সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে চাপ দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ পাইনি।” জেলাশাসক সৌমিত্র মোহন বলেন, “আমি যতীনবাবুর অভিযোগ পেয়েছি। অতিরিক্ত জেলাশাসক জেলা পরিষদকে ঘটনার তদন্ত করে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলেছি। রিপোর্ট পাওয়ার পরে দেখব, কী করা যায়।” |