নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
‘স্যার’ যখন অবসর নিলেন, মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল পড়ুয়াদের অনেকেরই। স্কুলে গণিতের শিক্ষকেরও অভাব ছিল তখন। ফলে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছিল স্কুলের বাকি শিক্ষকদেরও। কিন্তু হঠাৎ-ই সকলের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে এলেন দুর্গাপুর অঙ্গদপুর হাইস্কুলের সদ্য অবসসরপ্রাপ্ত ওই গণিতের শিক্ষক সুভাষবরণ দত্ত নিজেই। ২০১০ সালে অবসর নেওয়ার পর থেকে এখনও বিনা বেতনে ক্লাস নিয়ে চলেছেন তিনি। হাসিমুখে মেটাচ্ছেন ছাত্রছাত্রীদের আবদারও।
স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৯৭৩ সালের ৩১ জানুয়ারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন সুভাষবরণবাবু। অবসর নেন ২০১০ সালের ১৩ মে। সেই সময়ে স্কুলে গণিতের শিক্ষকের অভাব ছিল। কিন্তু সমস্যা মেটাতে সুভাষবরণবাবু অবসরের পরের দিন থেকেই আগের মতো স্কুলে আসতে শুরু করেন। কয়েক মাস পর শূন্য পদে নতুন শিক্ষক যোগ দেন। কিন্তু সুভাষবাবুর ক্লাস নেওয়া চলছেই। স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক সুখেশ্বর দাস বৈরাগ্য বলেন, “স্যারের অনেক অভিজ্ঞতা। অমায়িক ব্যবহার। পড়ুয়াদেরও খুবই কাছের উনি। স্যারকে সাম্মানিক হিসেবে আমরা কিছু দিতে চেয়েছিলাম। উনি রাজি হননি। বলেছেন, তাহলে আর আসব না।” |
ক্লাসে ব্যস্ত সুভাষবাবু। —নিজস্ব চিত্র। |
ছাত্রছাত্রীরাও বলে, কোনও কিছু একবার বুঝতে না পারলেও স্যার বারবার বুঝিয়ে দেন। শেখানোর ধরণও খুব সহজ। ডিটিপিএস কলোনি থেকে আসা নবম শ্রেণির পড়ুয়া শুভাশিস আঢ্য বলে, “স্যারের পড়ানোর ধরণ খুব সহজ। পড়া বুঝতে চাইলে স্যার কখনও বিরক্ত হন না।” থার্ড ইউনিট এলাকার প্রিয়াঙ্কা বিশ্বাসের কথায়, “স্যার এত সহজ করে বুঝিয়ে দেন যে আমাদের অঙ্কে ভয় কেটে গিয়েছে।”
সুভাষবরণবাবুকে নিয়ে গর্বিত এলাকাবাসীও। স্থানীয় অর্জুনপুর সবুজ সঙ্ঘের অন্যতম কর্মকর্তা মৃগেন বাউরি বলেন, “অবসরের পর বিনা বেতনে ক্লাস নেওয়ার বিষয়টি জানার পর এলাকায় সুভাষবরণবাবুর সম্মান আরও বেড়েছে।” সম্প্রতি ক্লাবের তরফে সুভাষবরণবাবুকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।
কিন্তু যাঁকে নিয়ে এত উচ্ছ্বাস তিনি নিজে কী বলছেন? সুভাষবাবুর কথায়, “স্কুল থেকে আমি অনেক কিছু পেয়েছি। অবসরের পর পেনশনও পাচ্ছি। ওতেই চলে যায়। আর কি চাই!” |