বালির ট্রাক্টর আটকানোর ঘটনায় ভূমি সংস্কার দফতরের দুই আধিকারিক এবং পুলিশ কর্মীদের মারধরের ঘটনার ২৪ ঘণ্টা পরেও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। আটক করা যায়নি ওই ট্রাক্টরটিও। সোমবার সকালে পাত্রসায়রের ওই ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত তৃণমূলের স্থানীয় উপপ্রধান-সহ দু’জন এখনও অধরা। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপেশ কুমারের দাবি, “ঘটনার পরেই অভিযুক্তেরা পালিয়ে গিয়েছে। তাদের খোঁজ চলছে।” জেলাশাসক বিজয় ভারতী বলেন, “অভিযুক্তদের ধরার জন্য পুলিশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জেলা পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে। পুরো ঘটনার উপর আমরা নজর রাখছি।”
পাত্রসায়রের দত্তবাড়ি গ্রামের কাছে সোমবার বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় বালিভর্তি একটি ট্রাক্টর আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হন বিষ্ণুপুরের মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক রবীন্দ্রনাথ সরকার এবং তাঁর সঙ্গে থাকা দুই পুলিশকর্মী। বাস থেকে নামিয়ে মারধর করা হয় পাত্রসায়রের ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবদাস নস্করকে। রবীন্দ্রনাথবাবু অভিযোগ করেছেন, বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের বকুল মিদ্যার নেতৃত্বে জনা ৫০ লোক লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে তাঁদের ঘিরে ধরে মারধর করে। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক বকুল মিদ্যা ও ডালিম মিদ্যা-সহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে পাত্রসায়র থানায় অভিযোগ করেন। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব ওই দুই তৃণমূল নেতার জড়িত থাকা সম্পর্কে সোমবার সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন।
মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক মঙ্গলবার বাঁকুড়া সদরে গিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক (ভূমি ও ভূমি সংস্কার) পার্থ ঘোষকে পুরো বিষয়টি জানান। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “দু’জনের নাম দিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছি। পুলিশের অবিলম্বে অভিযুক্তদের ধরা উচিত।” জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ওই ট্রাক্টরটির নম্বর দিতে পারেননি অভিযোগকারী। তাই ট্রাক্টরটি চিহ্নিত করতে অসুবিধা হচ্ছে। সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামীর টিপ্পনী, “হাজার দোষ করলেও পুলিশ যে তৃণমূল নেতা কর্মীদের সহজে ধরতে পারবে না, এটা তো সবাই জানেন।” পুলিশ সূত্রের খবর, সোমবার রাতে এসডিপিও (বিষ্ণুপুর) পরাগ ঘোষের নেতৃত্বে পুলিশ পাত্রসায়রের ফকিরডাঙা, খয়েরবুনি, বরকতচক, কাঁটাদিঘি, ইদিলচক-সহ কয়েকটি জায়গায় তল্লাশি চালিয়েও অভিযুক্তদের খোঁজ পাননি। তবে মঙ্গলবার সকালে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত বেলুট-রসুলপুর কৃষি সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান ডালিম মিদ্যা মোবাইলে দাবি করেন, “বৈধ কাগজ নিয়েই ট্রাক্টরটি তেলুড়ে কিষাণ মান্ডির ভবন তৈরির জন্য বালি দিতে যাচ্ছিল। তা সত্ত্বেও ট্রাক্টর চালককে অযথা হয়রানির চেষ্টা করেন মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক। তা নিয়েই গণ্ডগোল।” বকুল মিদ্যা ও ডালিম মিদ্যা দাবি করেন, তাঁরা ঘটনার সময় ওই এলাকায় ছিলেন না। কিছু লোকের প্ররোচনায় তাঁদের নামে মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। একই দাবি করেছেন তৃণমূলের ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ও।
|