দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত প্রিয় মাষ্টারমশাইয়ের চিকিৎসার খরচ জোগার করতে পথে নামল ছাত্রছাত্রীরা। ওদের সঙ্গে পা মেলালেন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা ও এলাকাবাসী। মঙ্গলবার ছাতনায় তারা ঘুরে ঘুরে অর্থ সংগ্রহ করলেন।
ছাতনা চণ্ডীদাস বিদ্যাপীঠের রসায়নের শিক্ষক রঞ্জিত খাঁ প্রায় দেড় বছর ধরে ব্লাড ক্যানসারে ভুগছেন।
গত নভেম্বর মাসে তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি রেখে চিকিৎসা করানো হচ্ছে। রঞ্জিতবাবুর স্ত্রী বর্ণালীদেবী বলেন “স্বামীর ‘বোনম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট’ করানো হয়েছে। |
ছাতনায় মিছিল। মঙ্গলবার তোলা নিজস্ব চিত্র। |
ইতিমধ্যেই চিকিৎসা করাতে গিয়ে বেশ কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয় হয়ে গিয়েছে। জমি বিক্রি করে ও সঞ্চয়ের টাকায় এত দিন চিকিৎসা করানো গেলেও এর পর কী ভাবে চিকিৎসা করাবো জানি না।” তাই রঞ্জিতবাবুর চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের দায়িত্ব নিয়েছে তাঁর পড়ুয়া ও সহকর্মীরা। নভেম্বর মাস থেকে বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে তাঁরা অর্থ সংগ্রহ করতে যান। মঙ্গলবার শতাধিক ছাত্রছাত্রী, স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী-সহ বাসিন্দারা ছাতনায় মিছিল করে টাকা সংগ্রহ করেন। মিছিলে ছিলেন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরাও। তৃণমূলের ছাতনা ব্লক সহ-সভাপতি মাধব বন্দ্যোপাধ্যায়, সিপিএমের ছাতনা লোকাল কমিটির সম্পাদক মধুসূদন মণ্ডল, জেলা বিজেপি-র সহ-সভাপতি জীবন চক্রবর্তী ছিলেন ওই মিছিলে। সকলের মুখে একটাই কথা, “খুব কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে মাস্টারমশাইয়ের পরিবার। এই সময় আমরা সবাই মিলে এই পরিবারের পাশে দাঁড়াতে চাই।”
স্কুলের একাদশ শ্রেণির ছাত্র অয়ন কর্মকার, সপ্তম শ্রেণির ছাত্র জয়দীপ টুডু, নবম শ্রেণির ছাত্র ইন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়রা বলে, “স্যারের অসুখ সারাতে অনেক টাকার প্রয়োজন। তাই সবাই মিলে টাকা জোগাড় করতে নেমেছি। যে ভাবেই হোক স্যারকে সুস্থ করে তুলতে হবে।” স্কুলের পদার্থবিদ্যার শিক্ষক সৌগত কাঞ্জিলাল বলেন, “ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা সংগ্রহ করে রঞ্জিতবাবুর পরিবারকে দিয়েছি। মঙ্গলবার প্রায় ২২ হাজার টাকা উঠেছে। আরও টাকা জোগাড় করার চেষ্টা করছি।” বিষয়টি তাঁরা ফেসবুকেও তুলে ধরেছেন। সেখান থেকেও সাড়া পাচ্ছেন বলে তাঁরা জানিয়েছেন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিজয় কর বলেন, “ছাতনা ব্লকের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই আমরা সাহায্য চেয়েছি।” তাঁদের এই হাত বাড়িয়ে দেওয়ায় ভরসা পেয়েছেন বর্ণালীদেবী। তিনি বলেন, “যে ভাবে ওঁরা সবাই আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে, মনে হচ্ছে আমরা একটা পরিবার।” |