পাচার রোখায় মার, তৃণমূল নেতা-সহ ৫০ জন অভিযুক্ত
বালি, পাথর পাচার রুখতে সম্প্রতি কড়াকড়ি করছে তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকার। অথচ, সেই নির্দেশ ভঙ্গকারীদের গাড়ি আটকানোর ‘অপরাধে’ সোমবার দুই সরকারি আধিকারিক এবং পুলিশ কর্মীদের পেটানোর অভিযোগ উঠল শাসক দলেরই এক উপপ্রধানের বিরুদ্ধে। রয়েছে সরকারি ভাবে আটক করা গাড়ি ছিনতাইয়ের অভিযোগও। সোমবার এমনই ঘটেছে বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে।
ঘটনায় বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান, তৃণমূলের বকুল মিদ্যা-সহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। বাঁকুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রূপেশ কুমার বলেন, “ঘটনার পর থেকেই উপপ্রধান-সহ অন্য অভিযুক্তেরা পলাতক। তাদের ধরার চেষ্টা চলছে।” তবে পাত্রসায়র ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের দাবি, “যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ হয়েছে, তাঁরা এ দিনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত বলে আমি মনে করি না।”
রবীন্দ্রনাথ সরকার।
চার দিন আগে বাঁকুড়াতেই অবৈধ পাথর ব্যবসায়ীদের হুমকি শুনে তাদের গাড়ি ধাওয়া ধরে পাঁচ জনকে পাকড়াও করেছিলেন খোদ জেলাশাসক বিজয় ভারতী। এ দিন তিনি বলেন, “অভিযুক্তদের দ্রুত ধরার জন্য পুলিশকে বলা হয়েছে। ওদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এই বেআইনি কারবারের বিরুদ্ধে সরকারি অভিযানও চলবে।” এ দিনও মেজিয়া থানা এলাকায় বেআইনি ভাবে কয়লা ও পাথর নিয়ে যাওয়ার সময় চারটি ট্রাককে আটক করে জরিমানা করা হয়েছে।
পাথর এবং বালি পাচার রুখতে সম্প্রতি রাজ্য প্রশাসন জেলাগুলিকে কিছু বিষয়ে কড়াকড়ি করতে বলেছে। তার অন্যতম হলদশ চাকার ট্রাকে সর্বোচ্চ ১০ টন, ছ’চাকার ট্রাকে সর্বোচ্চ ৬ টন মাল নিয়ে যাওয়া যাবে। সেই সঙ্গে মাল বহনকারী গাড়িতে বৈধ চালান, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ছাড়পত্র, কোথা থেকে কোথায় মাল যাচ্ছে, তার কাগজ রাখতে হবে।
পাত্রসায়র থানায় কাঁটাদিঘি ও ফকিরডাঙা গ্রামের মাঝে বাঁকুড়া-বর্ধমান রাস্তায় এ দিন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি-অভিযান চালাচ্ছিলেন মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক (বিষ্ণুপুর) রবীন্দ্রনাথ সরকার। সকাল ৯টা নাগাদ এলাকার দত্তবাড়ি গ্রামের কাছে একটি বালিভর্তি ট্রাক্টরকে আটকান তিনি। ট্রাক্টরচালক বালির জন্য চালান, ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের ছাড়পত্র দেখাতে পারেনি। রবীন্দ্রনাথবাবুর অভিযোগ, “হঠাৎ ফকিরডাঙার দিক থেকে কয়েকটি মোটরবাইকে করে জনা ৫০ লোক লাঠি, আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে এসে আমাকে ঘিরে ধরে। তাদের নেতৃত্বে ছিলেন বেলুট-রসুলপুর পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বকুল মিদ্যা। কিছু বলার আগেই ওরা আমাকে চড়, ঘুষি মারে। আমার সঙ্গে থাকা দুই পুলিশকর্মীকেও মারধর করে।”
সেই সময় বর্ধমান থেকে ওই রাস্তা দিয়েই বাসে করে পাত্রসায়রে ফিরছিলেন ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক দেবদাস নস্কর। দেবদাসবাবুর দাবি, “দত্তবাড়ির কাছে বাস হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়ে। দেখি, রাস্তায় মহকুমা ভূমি সংস্কার আধিকারিককে মারধর করা হচ্ছে। আমি চিৎকার করে উঠতেই, রাস্তা থেকে কিছু বাসে উঠে আমাকে টেনে নামিয়ে মারধর করে।”
ইতিমধ্যে ঘটনাস্থলে থাকা পুলিশকর্মীরা ফোনে খবর দেন পাত্রসায়র থানায়। তবে থানার পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছনোর আগেই চম্পট দেয় হামলাকারীরা। দুই সরকারি আধিকারিককে নিয়ে যাওয়া হয় পাত্রসায়র স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রের খবর, সরকারি কর্মীদের উপরে ‘হামলা’য় অভিযুক্তদের অন্যতম বকুল মিদ্যা এলাকায় ব্লক তৃণমূল সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। স্নেহেশবাবুর বক্তব্য, “দলকে বদনাম করতে অন্য কেউ এই কাজ করে থাকতে পারে।” পক্ষান্তরে সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল কমিটির সম্পাদক লালমোহন গোস্বামীর কটাক্ষ, “তৃণমূল সরকার যতই বেআইনি কারবার বন্ধ করতে উদ্যোগী হোক না কেন, ওদেরই নেতা-কর্মীরা এই সব কাজে জড়িত। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.