রাস্তার এক ধারে মেয়েদের স্কুল, একাধিক সরকারি দফতর, অন্য ধারে ভিড়ে ঠাসা দোকান-বাজার ও আদালত। তার উপর রাস্তা জুড়ে সার বেঁধে দাঁড়িয়ে অটো রিকশা, সাইকেল রিকশা, মোটরবাইক। এখানেই শেষ নয়। ওই রাস্তায় রয়েছে একটি লেভেল ক্রসিং। ফলে দিনরাত যানজটে নাজেহাল এলাকাবাসী। ট্রেন যাওয়ার আগে খানিকক্ষণ রেল গেট বন্ধ থাকলে তো রীতিমতো নাভিশ্বাস ওঠে বাসিন্দাদের।
নিত্যদিনের এই চালচিত্র আসানসোলের এসবি গড়াই রোডের কোর্ট বাজার লাগোয়া এলাকায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বছরের পর বছর ধরে একই হাল শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তার। অথচ সমাধান হচ্ছে না। জিটি রোডের বিকল্প হিসাবেও এই রাস্তাটি শহরকে বিভিন্ন প্রান্তের সঙ্গে জুড়ে রেখেছে। বাসিন্দাদের দাবি, দিনের ব্যস্ত সময়ে এই রাস্তায় যানজট হয় সবচেয়ে বেশি। পুলিশ কর্মীরাও যানজট ছাড়াতে হিমসিম খান। তাছাড়া এই রাস্তার দু’পাশে একাধিক বড় ছোট স্কুল আছে। রয়েছে একাধিক সরকারি দফতর। |
এসবি গড়াই রোডে। —নিজস্ব চিত্র। |
ফলে স্বাভাবিক ভাবেই সকালে এই সব দফতরের কর্মী ও ছাত্রছাত্রীদের ভিড় লেগে থাকে রাস্তায়। তখন রেল গেট বন্ধ থাকলে যানজট আরও বেড়ে যায়। কার্যত কিছুক্ষণের জন্য স্তব্ধ হয়ে যায় জনজীবন। আবার এই রাস্তা দিয়েই আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে যেতে হয়। ফলে অনেক সময়েই রোগী নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সও যানজটে আটকে যায়। এলাকার বাসিন্দা চিকিৎসক দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, মাঝেমধ্যেই যানজটে আটকে পড়ে মনে হয় এ রাস্তায় আর আসব না। কিন্তু উপায় নেই। তিনি বলেন, “শহরকে সচল রাখতে একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করুক প্রশাসন।” এই পথ ধরেই রোজ অফিসে যান কেন্দ্রীয় সংস্থার কর্মী উদয়ন চট্টোপাধ্যায়। তিনিও বলেন, “প্রতিদিন যানজটে পড়ি। রাস্তা যানজট মুক্ত রাখতে প্রশাসনের কোনও হেলদোল নেই।”
সংশ্লিষ্ট দফতরের পুরসভার মেয়র পারিষদ অভিজিৎ ঘটক জানান, ওই এলাকায় দক্ষিণ পূর্ব রেলের গেট ম্যানের একটি কেবিন আছে। সেটি একেবারে রাস্তার গা ঘেঁষে। আশপাশের রেলের ফাঁকা জায়গাতেও অবৈধ দখলদার রয়েছে। ফলে প্রবল যানজট হচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে আর কতদিন? অভিজিৎবাবর দাবি, গেটম্যানের কেবিনটি আরও পিছনে সরিয়ে নেওয়া গেলে রাস্তার পাশের অংশ অনেকটাই ফাঁকা হবে। কেবিনটির দু’দিকের অবৈধ ভাবে দখল করে রাখা রেলের জমিও ফাঁকা করতে হবে। তারপরে পুরসভার এক্তিয়ার ভুক্ত রাস্তার দু’পাশের জমি দখলমুক্ত করে রাস্তাটি চওড়া করা গেলেই যানজট থেকে রেহাই মিলবে। কিন্তু এ তো গেল আশ্বাসের কথা, কাজ হয়েছে কত দূর? অভিজিৎবাবু বলেন, “আমরা রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি লিখেছি কেবিনটা পিছনের দিকে খানিকটা সরিয়ে নিতে। রেলের জমিতে অবৈধ দখলদার তুলে দেওয়ারও আবেদন করেছি। রেল কর্তৃপক্ষ কাজটা করলে তারপরে আমাদের দায়িত্ব শুরু হবে।” তিনি জানান, রেলের তরফে প্রস্তাব বিবেচনার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
বাসিন্দাদের আক্ষেপ, দীর্ঘ কয়েক বছর পুরসভার ক্ষমতায় থেকেও এই সমস্যা থেকে নাগরিকদের রেহাই দিতে পারেনি বামফ্রন্ট। তাঁদের আমলেও একাধিকবার এই অভিযোগ উঠেছে। সমস্যার মেটাতে বামফ্রন্টের পুরবোর্ড একাধিক পরিকল্পনা করেছে। কিন্তু তা কার্যকরী হয়নি। সে সময় বিরোধী আসনে থাকা কংগ্রেস তৃণমূল জোট এই সমস্যাটিকে ভোটের হাতিয়ারও করেছে। তারপর পুরবোর্ডের ক্ষমতা বদল হল। কিন্তু নতুন বোর্ডও এখনও সমস্যার সমাধান করতে পারেনি। তবুও আশা, বুঝি বা যানজটের জট কাটবে। |