নীলোৎপল রায়চৌধুরী • আসানসোল |
পরিকল্পনা হয়েছে বারবার। কিন্তু সব রয়ে গিয়েছে খাতায়-কলমেই। আর তার ফলে যানজটমুক্ত আসানসোল শহরের স্বপ্ন রয়ে গিয়েছে অধরাই।
এক সময়ে আসানসোলের প্রধান বাসস্ট্যান্ড ছিল টেলিফোন ভবনের পাশে। ১৯৮২ সালে সেটি স্থানান্তর হয় রেল হাসপাতালের পাশে। কিন্তু যাত্রী স্বাচ্ছন্দ্যের কোনও পরিকাঠামো না থাকায় রোদ-বৃষ্টিতে সেখানে নাকাল হন যাত্রীরা। ২০১১ সালে হটন রোডের কাছে তৈরি করা হয় আসানসোল সিটি বাসস্ট্যান্ড। সেটিরও এখন বেহাল দশা। একটি যাত্রী প্রতীক্ষালয় রয়েছে। কিন্তু সেখানে জায়গা বেশি না থাকায় বাস বে-এর তলায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যাত্রীদের। পানীয় জলের যে কল রয়েছে সেখান থেকে নোংরা জল পড়ে বলে অভিযোগ। জল কিনে খেতে বাধ্য হন যাত্রীরা। নর্দমা গভীর না হওয়ায় অল্প বৃষ্টিতেই উপচে আসে আবর্জনা-সহ জল। বাসস্ট্যান্ডে আলো থাকলেও তা জ্বলে না। বাসস্ট্যান্ডে ঢোকার তিনটে দরজার প্রায় সব ক’টি ভেঙে পড়ে আছে। |
রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে বাস। |
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিটি বাসস্ট্যান্ডে বর্তমানে ২৮টি বাস বে রয়েছে। অথচ এখানে দাঁড়িয়ে থাকা বড় ও মিনি বাসের মোট সংখ্যা প্রায় ৬০০। ফলে দুরপাল্লার বেশির ভাগ বাসই বাসস্ট্যান্ডের বাইরে জিটি রোডের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে। এই সমস্যা মেটাবার জন্য চার বছর আগে শহর থেকে প্রায় তিন কিমি দূরে তৈরি করা হয় নিবেদিতা বাস টার্মিনাস। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, দুরপাল্লার সব বাস ছাড়বে নিবাদিতা বাস টার্মিনাস থেকে। সেখান থেকে সিটি বাসস্ট্যান্ড ছুঁয়ে চলে যাবে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রায় ৯০ শতাংশ বাস মালিকই নিবেদিতা বাস টার্মিনাসে বাস নিয়ে যাননি। বাস মালিকদের যুক্তি, সিটি বাসস্ট্যান্ডে যখন তাঁদের আসতেই হবে তখন কোনও যাত্রীই নতুন টার্মিনাসে গিয়ে বাসে চাপবেন না। ফলে, বিনা কারণে প্রায় ৬ কিমি যাতায়াতে তাঁদের তেল করচ বেড়ে যাবে। এর ফলে আসানসোল পুরসভা ২০১২ সালে নিবেদিতা টার্মিনাসটি দক্ষিণবঙ্গ রাস্ট্রীয় পরিবহণ দফতরের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু এখনও সেখানে তেমন কোনও কাজ শুরু হয়নি। |
বাসস্ট্যান্ড বদল করে শহরকে যানজট মুক্ত রাখার চেষ্টা অবশ্য এর আগেও হয়েছিল। আশির দশকে দুরপাল্লার বাস দাঁড়ানোর জন্য শহরের পূর্ব দিকে উষাগ্রাম এবং পশ্চিম দিকে কুমারপুরে দুটি বাস স্টপেজ তৈরি করা হয়। কথা ছিল, সেখান থেকে ওই বাসগুলি প্রধান বাসস্ট্যান্ডে আসবে। কিন্তু সেই সময়েও একই ভাবে তেল খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে কোনও বাস মালিকই সেখানে বাস নিয়ে যেতে দেননি। উষাগ্রামের স্টপেজ দক্ষিণবঙ্গের ডিপোয় পরিণত হয় এবং কুমারপুর স্টপেজ পরিণত হয় ট্র্যাক স্ট্যান্ডে। তবে, শুধু বাস দাঁড়িয়ে থাকার সমস্যাই নয়, শহরে যানজট বাড়ার পিছনে রয়েছে আরও কারণ। শহরের প্রধান রাস্তাগুলির দু’ধারে ফুটপাত দখল করে রয়েছে অসংখ্য গ্যারেজ। রয়েছে হরেক জিনিসের দোকান। বার্নপুরের স্কব গেট পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে দাঁড়িয়ে থাকে ইস্কোর পণ্য পরিবহণে ব্যবহৃত বেসরকারি লরি। |
২০০৭ সালে বাস মালিক সংগঠন, পুর কর্তৃপক্ষ, পরিবহণ দফতর এবং প্রশাসনের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল রাস্তার দু’পাশ থেকে অবৈধ গ্যারেজ ও দোকান তুলে দেওয়া হবে। দাঁড়িয়ে বাসে যাত্রী তোলাও বন্ধ করা হবে। আরও সিদ্ধান্ত হয় যে, দূরপাল্লার সব বাসকেই নিবেদিতা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দাঁড়াতে হবে। কিন্তু কাজ হয়নি। ২০১২ সালের ৭ নভেম্বর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার অজয় নন্দা একটি বৈঠকে ১৪ দফা পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ঠিক হয়, হটন রোড থেকে ফুটপাত দখলমুক্ত করে কংক্রিটের বাস বে নির্মাণ করা হবে। এ ছাড়াও দখলমুক্ত করা হবে শহরের সমস্ত জায়গা। শহরের সব বাস স্টপেজ সংস্কার করে তৈরি করা হবে ‘বাস বে’। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত শুধু বিএনআর মোড়ে রাস্তার দখলদারদের সরিয়ে দিয়ে রাস্তাটিকে বড়ো করা হয়েছে ও বাস-বে নির্মাণের কাজ চলছে।
মহকুমা মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় বলেন, “রাস্তা ছোট হয়ে যাওয়ার কারণে যাত্রী নামাতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে যানজটও বাড়ছে। রাস্তার পাশের বাস বে গুলি পরিষ্কার করে বাস, মিনিবাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করলে জিটি রোডের প্রধান বাজার এলাকা যানজট মুক্ত হবে।” আসানসোল পুরসভার ডেপুটি মেয়র অমর চট্টোপাধ্যায় বলেন, “শহরকে যানজট মুক্ত করার জন্য ইতিমধ্যেই বিএনআর মোড়ের কাছের রাস্তা বাড়ানো হয়েছে। আস্তে আস্তে গোটা শহরেই রাস্তা বাড়ানো হবে।” |