সুশান্ত বণিক • আসানসোল
অর্পিতা মজুমদার • দুর্গাপুর |
শীতের রোদ গায়ে মেখে ছুটি কাটাতে বেরিয়ে পড়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। একটু নৌকাবিহার বা টয় ট্রেনে ভ্রমণ, অথবা জলাশয়ের ধারে চড়ুইভাতির আসর বসিয়ে দিনভর পরিযায়ীর মেলা দেখা— রাত পোহালেই বড়দিনে এ সব আনন্দ নিতে বেরিয়ে পড়বেন শিল্পাঞ্চলবাসী। আর তাঁদের মনোরঞ্জনের জন্য সেজেগুজে তৈরি আসানসোল ও দুর্গাপুরদুই মহকুমার নানা পার্ক ও পর্যটন কেন্দ্র।
আসানসোলে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলির একাধিক পার্ক রয়েছে। শীতের মরসুমে সেগুলি সাজিয়ে তোলা হয়। দুর্গাপুরের পার্কেও বড়দিনের মরসুমের আগে নতুন বিনোদনমূলক ‘রাইড’-এর ব্যবস্থা করা হয়েছে। কাল, বুধবার মানুষের ঢল নামার আশা নিয়ে প্রস্তুত পর্যটন কেন্দ্রগুলিও। |
বার্নপুরের পার্কে নৌকাবিহার। |
আসানসোল থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে চিত্তরঞ্জনের জলাশয়ে এই সময়ে পরিযায়ী পাখির মেলা বসে। বড়দিনের সকালে সেখানে এই সব পাখিই আকর্ষণ পর্যটকদের কাছে। চিত্তরঞ্জন রেল ইঞ্জিন কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক মন্তার সিংহ জানান, এ বার জলাশয়ের চারপাশ পরিচ্ছন্ন করে সাজানো হয়েছে। ন্যূনতম পরিষেবার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। জলাশয়টি সাজানোর ফলে এ বছর পরিযায়ী পাখির সংখ্যা অনেক বেড়েছে বলে তাঁর দাবি। চিত্তরঞ্জনের অন্যতম আকর্ষণ ‘চিলড্রেন্স পার্ক’। কচিকাঁচাদের বিনোদনের জন্য সেখানে একটি কয়লাচালিত বাষ্প ইঞ্জিনে টানা টয় ট্রেন আছে। কারখানার জনসংযোগ আধিকারিক জানান, কিছু কারিগরি সমস্যার জন্য টয়ট্রেনটি কয়েক দিন চালানো হচ্ছে না। তবে বড়দিনের ছুটিতে সেটি চালানোর চেষ্টা চলছে।
দামোদরের পাড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে ইস্কো স্টিল প্ল্যান্টের নেহরু বিনোদন পার্ক। দলবল নিয়ে চড়ুইভাতিও করা যায় সেখানে। সে জন্য শুধু আগে থেকে নির্দিষ্ট জায়গা ভাড়া নিতে হয়। যাঁরা বাড়ি থেকে খাবারদাবার নিয়ে গিয়ে সময় কাটাতে চান, সে রকম ব্যবস্থাও রয়েছে। কচিকাঁচাদের জন্য আস্ত একটা উড়োজাহাজ আছে এখানে। ইস্কো কারখানার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যয়ায়ের ব্যক্তিগত উড়োজাহাজ সেটি। বছর কয়েক আগে পর্যন্ত তা উড়েছে। এখন পার্কে সাজিয়ে রাখা এই উড়োজাহাজের গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে এবং চেপে আনন্দ পায় খুদেরা। ইস্কোর জনসংযোগ আধিকারিক ভাস্কর কুমার জানান, শহরবাসীর বিনোদনের কথা ভেবে সাজিয়ে তোলা হয়েছে পার্কটি। সেল গ্রোথ ডিভিশনের কুলটির বিনোদন পার্কগুলিও সাজিয়ে তোলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংস্থার ডিজিএম কৃষ্ণকান্ত তিওয়ারি। |
দুর্গাপুর সিটি সেন্টারের পার্কে ‘ওয়াটার রাইড’। |
আসানসোল শহরের মাঝে শতাব্দী শিশু উদ্যানের দেখভাল ও পরিচর্যা করে পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন। পার্ক লাগোয়া বিশাল জলাশয়ে নৌকাবিহার করা যায়। বড়দিনের ছুটিতে শিশুদের জন্য সেখানে প্রবেশমূল্য নেই। আসানসোল ডিভিশনের জনসংযোগ আধিকারিক বিশ্বনাথ মুর্মু জানান, প্রতি বছর শীতে উৎসবের দিনগুলিতে এই পার্কে ভ্রমণার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। তাঁদের আশা, এ বারও প্রচুর মানুষের ভিড় হবে। মাইথনে পর্যটকের ঢল নামবে ধরে নিয়ে প্রস্তুত ডিভিসি কর্তৃপক্ষও। জলাধার লাগোয়া এলাকাটি সাজানোর পাশাপাশি পার্কগুলিও ঝকঝকে করা হয়েছে বলে জানান সংস্থার জনসংযোগ আধিকারিক বিজয় কুমার।
দুর্গাপুরে সিটিসেন্টারের পার্কে পর্যটকদের কাছে অন্যতম প্রধান আকর্ষণ টয় ট্রেন। এ ছাড়া এই পার্কে বেশ কিছু ‘ওয়াটার রাইড’ চালু হয়েছে। দিন কয়েক আগে আরও কয়েকটি সংযোজন হয়েছে বলে জানান পার্ক কর্তৃপক্ষ। শিশুদের কাছে অন্যতম আকর্ষণ ‘কিডস পার্ক’টিও নতুন সাজে তৈরি। ইস্পাত কলোনির কুমারমঙ্গলম পার্ক আকারে সিটি সেন্টারের পার্কটির তুলনায় অনেক বড়। প্রচুর গাছ, ফুলের বাগান, বিশাল জলাশয় সেখানে। টয় ট্রেন, নৌকাবিহার-সহ বিভিন্ন ধরনের রাইড রয়েছে। এখানকার অন্যতম আকর্ষণ ‘মিউজিক্যাল ফাউন্টেন’।
কাঁকসার দেউল পার্কে শুধু বর্ধমান নয়, ভিন্ জেলা থেকেও বছর শেষের দিনগুলিতে অনেকে চড়ুইভাতি করতে আসেন। সেই ধারায় খামতি নেই এ বারও। আউশগ্রামে জঙ্গলের মাঝে ভাল্কি মাচানে বছরের প্রথম দিনে আদিবাসীদের নিয়ে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকেন কর্তৃপক্ষ। দুর্গাপুর-ফরিদপুর ব্লকের নাচন জলাশয়কে ঘিরে আগেই গড়ে উঠেছিল ‘নাচন থিম পার্ক’। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা জৌলুস হারিয়েছিল। পঞ্চায়েত সমিতির তরফে সেটিকে নতুন রূপ দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
সব কিছুই তৈরি। অপেক্ষা শুধু বেরিয়ে পড়ার।
|