নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
মুখ ঢেকে আসা দুষ্কৃতীদের ধারাল অস্ত্রের কোপে খনি চত্বরেই নিহত হলেন ইসিএলের এক কর্মী। রবিবার গভীর রাতে ফরিদপুর (লাউদোহা) ব্লকের ঝাঁঝড়া ১ ও ২ ইনক্লাইন খনিতে। খনি চত্বরে এমন ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খনিকর্মীরা।
পুলিশ জানায়, নিহত খনিকর্মীর নাম আনন্দগোপাল মণ্ডল (৪৬)। বাড়ি বীরভূমের আমোদপুরে। তবে তিনি সপরিবারে পাণ্ডবেশ্বরে থাকতেন। খনিতে বিদ্যুৎকর্মীর কাজ করতেন তিনি। খনি সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার রাত ১১টা নাগাদ এক সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে খনি চত্বরে সাবস্টেশনে কাজ করতে যান আনন্দগোপালবাবু।
পুলিশ তদন্তে নেমে জেনেছে, রাত ১টা নাগাদ চার দুষ্কৃতী খনির পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকে। সামনের গেটে থাকা নিরাপত্তারক্ষীরা টের পাননি। দুষ্কৃতীরা সাবস্টেশনে গিয়ে সহকর্মী কার্তিক রায়ের কাছে জানতে চান, তিনিই আনন্দগোপালবাবু কি না। তিনি আনন্দগোপালবাবুকে দেখিয়ে দিতেই দুষ্কৃতীরা ওই কার্তিকবাবুকে ঠেলে ফেলে সঙ্গে আনা কম্বল দিয়ে তাঁকে মুড়ে চেপে ধরে। ভয়ে চুপ করে যান তিনি। পুলিশের কাছে কার্তিকবাবু জানিয়েছেন, কম্বল চাপা থাকার সময়ে বাইরে ধস্তাধস্তির আওয়াজ পান তিনি। এর পরে কিছুক্ষণ কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে বুঝতে পারেন, দুষ্কৃতীরা পালিয়েছে। কম্বল সরিয়ে উঠে দেখেন, আনন্দগোপালবাবু পড়ে রয়েছেন। আশপাশ ভেসে যাচ্ছে রক্তে। তিনি গিয়ে খনির অফিসে খবর দিলে অন্য কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছন। খবর পেয়ে পুলিশ যায়।
পুলিশ জানায়, দুষ্কৃতীরা মুখ ঢেকে এসেছিল। তারা ধারাল অস্ত্র দিয়ে আনন্দগোপালবাবুর গলার নলি কেটে দেয়। পরে অস্ত্র দিয়ে তাঁর মুখেও আঘাত করে। পারিবারিক কোনও বিবাদ থেকে এই ঘটনা ঘটেছে কি না, তা আনন্দগোপালবাবুর আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে কথা বলে জানার চেষ্টা হচ্ছে বলে পুলিশ জানায়। আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) সুনীল যাদব বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে পারিবারিক বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটেছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনায় জড়িত সন্দেহে মৃতের ছেলের শ্বশুরকে আটক করা হয়েছে।
খুনের ঘটনার খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থলে যান খনির বিভিন্ন আধিকারিকেরা। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁদের কাছে মৃতের পরিবারকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ এবং পরিবারের এক সদস্যকে চাকরি দেওয়ার দাবি জানানো হয়। আধিকারিকেরা ইসিএলের এই সংক্রান্ত নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। সকাল ৬টা নাগাদ পুলিশ আনন্দগোপালবাবুর দেহ ময়না-তদন্তে পাঠায়।
খনির ভিতরে খুনের ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে খনিকর্মীদের মধ্যে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক খনি কর্মী বলেন, “খবর পেয়ে রাত ২টো নাগাদ গিয়ে দেখি, আনন্দগোপালবাবুর রক্তাক্ত দেহ পড়ে রয়েছে। আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।” খনিকর্মীরা জানিয়েছেন, রাতবিরেতে পালা করে তাঁদের সবাইকেই কাজ করতে হয়। এ ভাবে দুষ্কৃতীদের অবাধে খনি চত্বরে ঢুকে খুন করে যাওয়ার ঘটনায় তাঁরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন বলে জানান। খনিকর্মীদের দাবি, নিরাপত্তারক্ষী আরও বাড়ানো প্রয়োজন। পলাশ পাণ্ডে নামে এক কর্মীর কথায়, “অবিলম্বে নিরাপত্তারক্ষী বাড়ানোর দাবি জানানো হয়েছে।”
আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খনিগুলিতে নিরাপত্তার দিকটি বরাবরই উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে। আমাদের তরফে দাবি তোলা হয়েছে, দ্রুত কেন্দ্রীয় সরকার এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করুক।” সিটুর জেলা সভাপতি বিনয়েন্দ্রকিশোর চক্রবর্তী বলেন, “খনির নিরাপত্তার দিকটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত। এ ভাবে খনি চত্বরের ভিতরে কর্মী খুনের ঘটনা অত্যন্ত দুশ্চিন্তার।” ঝাঁঝরা খনির তরফে জানানো হয়, নিরাপত্তা সংক্রান্ত দাবি-দাওয়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।
|