তদন্ত কমিটির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন অশোকের
সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থাকাকালীন বেশ কিছু মামলায় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিলেন তিনি। সেই রাগ থেকেই ওই প্রভাবশালী মহল চক্রান্ত করে তাঁর সম্মানহানির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করলেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোক গঙ্গোপাধ্যায়।
সোমবার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি পি সদাশিবমকে লেখা চিঠিতে ষড়যন্ত্রের এই অভিযোগের পাশাপাশি শীর্ষ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন অশোকবাবু। তাঁর বক্তব্য অভিযোগকারিণী নিজে সুপ্রিম কোর্টের কাছে অভিযোগ জানাননি। তিনি সুপ্রিম কোর্টের ইন্টার্ন ছিলেন না। ঘটনার সময় অশোকবাবুও বিচারপতি পদে ছিলেন না। তা হলে কেন সুপ্রিম কোর্ট তদন্ত কমিটি গড়ল, অশোকবাবুর প্রশ্ন সেটাই।
এই চিঠির প্রতিলিপি রাষ্ট্রপতির কাছেও পাঠিয়েছেন অশোকবাবু। কারণ, প্রাক্তন বিচারপতি ইন্টার্নের সঙ্গে ‘অবাঞ্ছিত আচরণ’ করেছেন বলে মনে করার প্রাথমিক কারণ আছে, মন্তব্য করে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দেওয়ার রায় দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহনবতী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সেই রায় মেনে রাষ্ট্রপতিকে পরামর্শ দিলে তিনি সুপ্রিম কোর্টকে অশোকবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেবেন। তার আগেই এ দিন নিজের অবস্থান জানিয়ে চিঠি লিখলেন অশোকবাবু। তাঁর দাবি, সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বক্তব্য শোনেনি। তাঁকে অভিযোগকারিণীর বয়ানের প্রতিলিপিও দেওয়া হয়নি। এক বার দেখতে দেওয়া হয়েছে মাত্র। অথচ তা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি, তদন্ত কমিটি গড়ার যৌক্তিকতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন অশোকবাবু। অভিযুক্ত বিচারপতি প্রাক্তন বা বর্তমান, তা খতিয়ে দেখার জন্য কমিটি গড়ার দরকার ছিল না বলে দাবি করেছেন তিনি। কারণ, অভিযোগকারিণী ব্লগে প্রাক্তন বিচারপতির কথাই লিখেছিলেন। আর প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত সুপ্রিম কোর্টের করার কথা নয়। তা ছাড়া, সুপ্রিম কোর্টের কাছে মেয়েটি কোনও অভিযোগও করেননি। তদন্ত কমিটি বলার পরেই তিনি বয়ান দিয়েছেন।
তিন বিচারপতির যে তদন্ত কমিটি গড়া হয়েছিল, তার এক্তিয়ার নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে অশোকবাবুর। তাঁর বক্তব্য, এটি একটি প্রশাসনিক (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ) কমিটি মাত্র। এক জন প্রাক্তন বিচারপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে কথা বলার অধিকারী সে নয়। অথচ সেই অভিযোগের সত্যতা খতিয়ে দেখার ভার তাকে দেওয়া হল। কমিটির রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটেও জায়গা পেল। অশোকবাবুর দাবি, “ওই রিপোর্টের কোনও আইনি ভিত্তি নেই।”
অশোকবাবুর দ্বিতীয় অভিযোগ সুপ্রিম কোর্টের অফিসারদের আচরণ নিয়ে। তিনি লিখেছেন, তদন্ত কমিটি ডেকে পাঠানোর পরে সুপ্রিম কোর্টের উপরে আস্থা রেখে তিনি হাজিরা দিয়েছিলেন। কমিটির এক্তিয়ার নিয়ে তখন প্রশ্ন তোলেননি। কিন্তু তিনি সুপ্রিম কোর্টে ঢোকামাত্রই নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁকে ঘিরে ধরে। “মনে হচ্ছিল আমি যেন এক জন বন্দি। ইওর লর্ডশিপ, আপনার নির্দেশেই কি এমন হয়েছে? আশা করি, তা নয়।”
অশোকবাবুর তৃতীয় অভিযোগ, কমিটির কর্মপদ্ধতি নিয়ে। কমিটির কাছে তিনি অভিযোগকারিণীর বিবৃতির একটি কপি চেয়েছিলেন। “আমাকে হতভম্ব করে দিয়ে রুক্ষ স্বরে বলা হল, গোপন বিবৃতির কপি আমাকে দেওয়া হবে না। ...অথচ তার একটা বড় অংশ ক’দিন পরেই একটি বাংলা কাগজে ফাঁস হয়ে গেল।” প্রধান বিচারপতির কাছে অশোকবাবুর আর্জি কী ভাবে ওই গোপন বয়ান আইন মন্ত্রকে গেল এবং সেখান থেকে সংবাদমাধ্যমের হাতে এল, তা অবিলম্বে তদন্ত করা হোক।
কমিটির কাছে তিনি নিজে যা বলেছিলেন, তার কপিও পাননি বলে অভিযোগ করে অশোকবাবু লিখেছেন, “ইন্টার্নের বয়ান নেওয়া হয়েছে আমাকে না জানিয়ে। আমার বয়ান নেওয়া হয়েছে ইন্টার্নকে না জানিয়ে। এমন কর্মপদ্ধতির কথা আমি কখনও শুনিনি।” অশোকবাবু মনে করিয়ে দিয়েছেন, সুপ্রিম কোর্ট নিজে বারবার বলেছে, সাক্ষ্যপ্রমাণ ভাল করে খতিয়ে না দেখে কোনও গুরুতর অভিযোগ প্রাথমিক ভাবেও সত্য বলে ধরা উচিত নয়। এ ক্ষেত্রে সেই নীতি একেবারেই মানা হয়নি বলে তাঁর অভিযোগ। তদন্ত প্রক্রিয়ায় তাঁর প্রতি ন্যূনতম সৌজন্য দেখানো হয়নি এবং নিয়মনীতি মানা হয়নি বলেই তাঁর দাবি।
সম্প্রতি অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল ইন্দিরা জয়সিংহ অভিযোগকারিণীর বয়ানের প্রতিলিপি সংবাদমাধ্যমে বিলি করেছেন। তাঁর এই পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলে অশোকবাবু জানতে চেয়েছেন, প্রধান বিচারপতি বা তদন্ত কমিটির কোনও সদস্যের অনুমতি নিয়ে কি এ কাজ করা হয়েছে? উত্তরে দিল্লিতে ইন্দিরা এ দিন জানিয়েছেন, “বিভিন্ন প্রভাবশালী মহল যখন অশোকবাবুর পক্ষে সওয়াল করছিল, তখন অভিযোগকারিণী অসহায় বোধ করছিলেন। তখন তিনিই আমাকে ওই বয়ানের প্রতিলিপি বিলি করার অনুমতি দিয়েছিলেন।” অশোকবাবুর দাবি, ইন্দিরা যে বয়ান প্রকাশ করেছেন, তাতে ২৯ নভেম্বর তারিখ রয়েছে। অথচ তার দু’দিন আগেই, ২৭ নভেম্বর তদন্ত কমিটি তার রিপোর্ট জমা দিয়ে দিয়েছিল। তা হলে অভিযোগকারিণী ২৯ তারিখ বয়ান দিলেন কী ভাবে?
প্রাক্তন বিচারপতির আশঙ্কা, যা ঘটেছে যা পরিকল্পিত ভাবে ঘটানো হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে যৌন হেনস্থার অভিযাগ ওঠার পর থেকেই বিষয়টিকে ষড়যন্ত্র বলে দাবি করে আসছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীদের একাংশও অশোকবাবুকে ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন। কারা তাঁর বিরুদ্ধে এই ষড়যন্ত্র করেছেন তাঁদের নাম প্রকাশ্যে না আনলেও এ দিনের চিঠিতে সম্ভাব্য ষড়যন্ত্রকারী কারা হতে পারেন, তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। একাধিক রায়ে বিভিন্ন শিবিরের কায়েমি স্বার্থে আঘাত করেছিলেন বলে দাবি করে অশোকবাবু লিখেছেন, “কোনও ভীতি বা লোভকে প্রশ্রয় না দিয়ে আমি যে ভাবে মামলাগুলোর বিচার করেছি, তার জন্য যদি আজ আক্রান্ত হতে হয়, সেটা বিচারবিভাগের স্বাধীনতার পক্ষেই বিপজ্জনক।”
আর মূল অভিযোগ প্রসঙ্গে কী বক্তব্য অশোকবাবুর? চিঠিতে তিনি লিখেছেন, সে দিন অভিযোগকারিণী ইন্টার্নকে ২০ পাতা ডিকটেশন দিয়েছিলেন। “ডিকটেশন দেওয়ার পরে আমরা নৈশাহার করি। উনি যাতে নিরাপদে ফিরতে পারেন, সে জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করে রেখেছিলাম। সেই গাড়িই ওঁকে পৌঁছে দেয়।”
যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে প্রাক্তন বিচারপতি দাবি করেছেন, “আমি আমার কর্মজীবনে অনেক ইন্টার্নকেই (পুরুষ ও মহিলা) যথাসাধ্য সাহায্য করেছি। তাঁরা সবাই আমাকে প্রভূত শ্রদ্ধা করেন। সেই সুনাম এখন নষ্ট করার চেষ্টা হচ্ছে।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.