অশোকের বিরুদ্ধে তদন্তে সায় বাহনবতীর
শোককুমার গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বল আরও এক বার সুপ্রিম কোর্টের হাতেই যেতে চলেছে। আইন মন্ত্রকের একটি সূত্রের দাবি, সুপ্রিম কোর্টের এই অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এক মহিলা ইন্টার্নের সঙ্গে ‘অবাঞ্ছিত আচরণ’ করেছিলেন বলে মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে বলে মত দিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল জি ই বাহনবতী। এই অভিযোগের পরিপ্রক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য জানতে চেয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশের (প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স) পক্ষেও তিনি মত দিয়েছেন বলে ওই সূত্রটির দাবি।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণ চেয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাঠানো দু’টি চিঠি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে পাঠিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষয়টি নিয়ে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করে। সেই সূত্রেই মতামতের জন্য চিঠি দু’টি বাহনবতীর কাছে পাঠানো হয়। সূত্রের খবর, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে যে প্রাথমিক প্রমাণ রয়েছে, সে বিষয়ে দুই মন্ত্রকই একমত। প্রসঙ্গত, এর আগে সুপ্রিম কোর্টের তদন্ত কমিটিও একই কথা জানিয়েছিল।
শুক্রবার এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী কপিল সিব্বল বলেন, “স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক আমাদের কাছে পরামর্শ চেয়েছিল। অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর অবস্থান জানালেই আমরা তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে জানিয়ে দেব।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, “আইনি পরামর্শ চেয়েছি। আগামী সপ্তাহের শুরুতেই তা এসে যাবে। সেই অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অ্যাটর্নি জেনারেল প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্সের পক্ষে মত দিলে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ কী হতে পারে?
আইন বলছে, দুর্ব্যবহার বা অযোগ্যতার অভিযোগে রাজ্যের মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যানকে সরাতে পারেন একমাত্র রাষ্ট্রপতিই। তবে তার আগে তিনি বিষয়টি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য জানতে চান। আইন মন্ত্রকের সূত্রটির দাবি, বাহনবতীর মতামত আইন মন্ত্রক পাঠাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে। তার পর প্রেসিডেন্সিয়াল রেফারেন্স তৈরি করে তা কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় অনুমোদন করিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। রাষ্ট্রপতির চিঠি এলে নতুন করে তদন্ত শুরু করতে হবে সর্বোচ্চ আদালতকে। সেই তদন্তে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় দোষী সাব্যস্ত হলে রাষ্ট্রপতি তাঁকে সরিয়ে দিতে পারবেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যদিও নিজের অবস্থানে অনড়। ঘনিষ্ঠ মহলে তিনি বলেছেন, কোনও দোষ তিনি করেননি। তাই পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, অভিযোগকারিণীর বয়ান ‘গোপন’ বলে তাঁকে দেওয়া হয়নি। অথচ তা সংবাদমাধ্যমে কী ভাবে প্রকাশ পেয়ে গেল?
এ দিন তিনি বলেন, “অভিযোগকারিণীর বয়ান আমার পাওয়া উচিত ছিল। আমাকে বলা হয়েছিল বয়ানটি গোপন নথি। তা আমাকে দেওয়া যাবে না। অথচ সংবাদমাধ্যমে তা প্রকাশ পেয়ে গেল!” পরে অবশ্য সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকেই তিনি ওই বয়ান সংগ্রহ করেছেন বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়েছেন। অশোকবাবুর কথায়, “গত ২৭ নভেম্বর আমি সুপ্রিম কোর্টের কমিটির সামনে হাজিরা দিই। কিন্তু তার আগে অভিযোগের কোনও প্রতিলিপি আমাকে দেওয়া হয়নি। কমিটির সামনেই আমাকে অভিযোগকারিণীর বয়ানটি পড়তে দেওয়া হয়। এবং সঙ্গে সঙ্গেই ওই বয়ানের ভিত্তিতে জবাব চাওয়া হয়।” ইতিমধ্যে জাতীয় মহিলা কমিশনও স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে অভিযোগের তদন্ত শুরু করেছে। সেখানেও সংবাদমাধ্যমের কাছ থেকে সংগ্রহ করা বয়ান নিয়েই তাঁকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে বলে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি।
শুক্রবারও ভবানী ভবনের দফতরে গিয়েছিলেন রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান। সেখানে মূল গেটের বাইরে তাঁর পদত্যাগ চেয়ে বিক্ষোভ দেখায় একটি সংগঠন। পুলিশ তাঁকে পিছনের গেট দিয়ে বার করে আনে। সংবাদমাধ্যমে তাঁকে নিয়ে যে ভাবে চর্চা হচ্ছে, তাতে অসন্তুষ্ট বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যম যা করছে, তাতে মনে হচ্ছে যেন আমি সাজাপ্রাপ্ত অপরাধী! এটা প্রত্যাশিত নয়। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। জনগণ যা বোঝার বুঝবেন।”

পুরনো খবর:



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.