বল এ বার অ্যাটর্নি জেনারেলের কোর্টে।
পশ্চিমবঙ্গ মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান পদ থেকে বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়কে সরানোর দাবিতে রাষ্ট্রপতিকে দু’-দু’টি চিঠি লিখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই চিঠি গিয়েছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। বৃহস্পতিবার সেই দু’টি চিঠি অ্যাটর্নি জেনারেল জি বাহনবতীর কাছে পাঠাল মন্ত্রক। বাহনবতী বলেছেন, “আমি পুরো বিষয়টি সময় নিয়ে খতিয়ে দেখতে চাই। তার পরে আমার মত জানাব।” কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি সূত্র বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামত জানার পরেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এক ইন্টার্নকে যৌন হেনস্থায় অভিযুক্ত অশোকবাবুর পদত্যাগের দাবিতে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে তৃণমূল, বিজেপি, সমাজবাদী পার্টি-সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। অশোকবাবুর অপসারণের দাবিতে উত্তাল হয়েছে সংসদও। তবে সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এখনও পর্যন্ত তাঁর অবস্থানে অনড় রয়েছেন।
আইন অনুযায়ী, মানবাধিকার কমিশনের পদ থেকে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে সরাতে পারেন রাষ্ট্রপতিই। মমতার চিঠি পেয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায় এ ব্যাপারে কেন্দ্রের মত চেয়ে পাঠিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এই নিয়ে আইন মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শ করেছে। তারই সূত্রে এ দিন বিষয়টি অ্যাটর্নি জেনারেলের মতামতের জন্য পাঠানো হল। তিনি মতামত জানালে কেন্দ্র তার সিদ্ধান্ত নেবে। এ দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীলকুমার শিন্দে বলেন, “আমরা কাগজপত্র পেয়েছি। আইন মন্ত্রকের সঙ্গে পরামর্শও করছি। তার পর যথাসময়ে পদক্ষেপ করব।” কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত জানার পরে রাষ্ট্রপতি তাঁর কর্তব্য স্থির করবেন। প্রয়োজন বোধে তিনি অশোকবাবুর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টেকে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিতে পারেন।
এ দিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় মানবাধিকার কমিশনে যাননি। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানানো হয়, বুধবার বিক্ষোভকারীদের ঠেলাঠেলিতে কমিশনের সদর দফতর, ভবানী ভবনের গেটের সামনে পড়েই যাচ্ছিলেন অশোকবাবু। এ দিনও ভবানী ভবনে বিক্ষোভ দেখান একটি সংগঠনের কর্মীরা। এই বিক্ষোভকারীদের এড়াতেই অশোকবাবু এ দিন দফতরে যাননি বলে তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর। এ দিন ইউনাইটেড স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন মহিলা প্রতিনিধিরা বিধাননগরে পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়ের কাছে স্মারকলিপি দিয়ে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের অপসারণের দাবি জানান। জাতীয় মহিলা কমিলা কমিশন অবশ্য আগেই স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে তারা এ ব্যাপারে চিঠিও পাঠিয়েছে।
অন্য দিকে অশোকবাবুকে ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে যে চিঠি এসেছিল, সেই চিঠি তিনি লেখেননি বলে দাবি করেছেন বর্ধমান আদালতের মুহুরি অসীমা মালিক। এ দিন জেলা ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশনের ডাকা সাংবাদিক সম্মেলনে অসীমা অভিযোগ করেন, “ছ’মাস আগে আমার সঙ্গে আইনজীবী সুদীপ্ত রায়ের ঝগড়াঝাঁটি হয়েছিল। তার পরে তিনি নানা জায়গায় আমার নাম করে চিঠি লিখে আমাকে বেকায়দায় ফেলছেন। অশোকবাবুকেও তিনি চিঠি লেখেন।” সুদীপ্তবাবু অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
কিন্তু বর্ধমান ল ক্লার্ক অ্যাসোসিয়েশন প্রাথমিক ভাবে অসীমার পাশেই দাঁড়িয়েছে। সাংবাদিক বৈঠকে এ দিন সংগঠনের সহসভাপতি বিপত্তারণ আইচ বলেন, “কুড়ি বছর ধরে আমরা অসীমাকে চিনি। ও ভাল লেখাপড়া জানে না। আমাদের বিশ্বাস, ওর নাম ভাঁড়িয়ে অন্য কেউ চিঠি লিখেছে।” সংগঠন মানবাধিকার কমিশনের কাছে ওই চিঠির প্রতিলিপি চেয়ে পাঠাচ্ছে। হাতের লেখা পরীক্ষা করে অসীমা দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্য তাঁকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হবে বলেও জানানো হয়েছে। |