নয়া রুট নয়া পারমিট, রাজ্যের সিদ্ধান্তে প্রশ্নও
জ্বালানি ও যন্ত্রাংশের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়লেও সেই অনুপাতে বাসের ভাড়া বাড়েনি। লোকসানের চাপে ধীরে ধীরে শহর-শহরতলির হরেক রুটে হাজার দুয়েক বাস বসে গিয়েছে। গণ-পরিবহণের দুর্দশায় নাভিশ্বাস উঠছে যাত্রীদের। এই অবস্থাতেই রাজ্য পরিবহণ দফতর নতুন তিন হাজার বাস পথে নামানোর পরিকল্পনা করেছে, যা ঘিরে দানা বেঁধেছে সংশয়। প্রশ্ন উঠেছে, খরচ পোষানোর মতো ভাড়া না-পেলে নতুন বাসও কত দিন যাত্রীর বোঝা টানবে?
সরকার অবশ্য আশঙ্কাকে আমল দিচ্ছে না। তবে তারা ভাড়া বাড়ানোর ইঙ্গিতও দেয়নি। বরং যুক্তি দিয়েছে, ‘জনপ্রিয় ও চালু’ রুটে নতুন বাস চালানোর অনুমতি দিলে মালিকেরা বিলক্ষণ লাভের মুখ দেখতে পারবেন। তাই নতুন বাসের পারমিট দেওয়া হবে। যদিও মালিকেরা সে তত্ত্ব সরাসরি খারিজ করছেন। কী বলছেন তাঁরা?
বাস-মালিকদের বক্তব্য: ভাড়া না-বাড়লে কিছুতেই কিছু হওয়ার নয়। রাজ্যের পরিবহণ ব্যবস্থা আসলে অপুষ্টিতে ভুগছে। আসল রোগ না-সারিয়ে শুধু কিছু নতুন বাসের পারমিট দিয়ে লাভ হবে না বলেই দাবি করছেন মালিকেরা। “যে কোনও ব্যবসা চালু রাখতে হলে মুনাফা দরকার। বেসরকারি পরিবহণও তো একটা ব্যবসা! খামোখা লোকসান পুইয়ে বাস চালাব কেন?” প্রশ্ন তুলেছেন ওঁরা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় এসেই জানিয়ে দিয়েছিল, বাসের ভাড়া বাড়ানো হবে না। সিদ্ধান্তটি বহাল থাকায় বহু বেসরকারি মালিক যেমন বাস উঠিয়ে নিয়েছেন, তেমন সরকারি পরিবহণ নিগমগুলোর হালও তথৈবচ। তাদের বোঝার ভার বাড়িয়েছে বাড়তি কর্মীর চাপ। অর্থাভাবে বিভিন্ন পরিবহণ নিগমের বিস্তর বাস রাস্তায় নামানো যাচ্ছে না। যে ক’টি চলছে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলোও লজ্ঝরে। সব মিলিয়ে আমজনতার ভোগান্তির একশেষ। রাস্তায় বেরিয়ে বাস না-পেয়ে বহু নিত্যযাত্রীকে রিকশা-অটো-ট্যাক্সি-মেট্রো ইত্যাদিতে যাত্রাপথ ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে। পকেট থেকে খসছে বেশি। হিসেব কষে অনেকে দেখেছেন, মালিকদের দাবিমতো বাসে উঠে বাড়তি ভাড়া গুণতে হলেও খরচ তুলনায় কম হতো, ঝক্কিও এত পোহাতে হতো না।
নাগরিকের যান-দুর্ভোগের সংবাদ পরিবহণ-কর্তাদেরও অজানা নয়। সুরাহা করতে ভাড়াবৃদ্ধির পথে হাঁটা সম্ভব না-হলেও ঘুরপথে বাস-মালিকদের উৎসাহ দিতে চেয়েছেন তাঁরা। তাই বছরখানেক ধরে নতুন বাসের পারমিট দেওয়ার জন্য পরিবহণ দফতর ডালা সাজিয়ে বসে ছিল। যদিও তাতে বিশেষ সুরাহা হয়নি। কারণ, নতুন বাসের পারমিট নিতে তেমন আগ্রহ দেখা যায়নি। যাঁরা নিয়েছেন (এক বছরে ৬৩৬টি পারমিট দিয়েছে সরকার), তাঁদেরও ৪০% বাস কেনেননি। মিনিবাসের ক্ষেত্রেও ছবিটা মোটামুটি এক।
ফলে চেষ্টা কার্যত বিফলে গিয়েছে। এ বার তাই কৌশল পাল্টে নতুন বাসের বহর নামানোর পরিকল্পনা করছে সরকার। কী রকম?
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা জানাচ্ছেন, রাজ্যে বেসরকারি বাসের নথিভুক্ত রুটের সংখ্যা আড়াইশো। মিনিবাসের শ’দেড়েক। পরিবহণ-কর্তাদের দাবি, এর প্রায় অর্ধেক রুটে যাত্রী ভাল হয়, তাই মালিকদের লাভ থাকে। এমন বিভিন্ন ‘জনপ্রিয় ও চালু’ রুটে গত দশ বছর কোনও নতুন বাসের পারমিট দেওয়া হয়নি। অথচ গত দশ বছরে সেখানে যাত্রীর সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় যাত্রার স্বাচ্ছন্দ্য কমেছে। এই রুটগুলোয় এ বার নতুন দেড় হাজার বাস-মিনিবাসের পারমিট দেবে সরকার। কর্তাদের মতে, যাত্রীর অভাব না-থাকায় ওখানে লোকসানের ভয় থাকবে না। পাশাপাশি কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় ছোট ছোট নতুন গোটা ষাটেক রুট বানিয়ে এসি ও নন-এসি বাস নামানো হবে। এখানেও হাজার দেড়েক নতুন বাসের পারমিট মঞ্জুরের কথা ভেবেছে পরিবহণ দফতর। “গত দশ বছরে শহরতলির পরিধি অনেক ছড়িয়েছে। বহু জায়গায় এখনও বাস পৌঁছয়নি। নতুন রুটে ওই সব এলাকাকে ঢোকানো হবে।” বলেন এক পরিবহণ-কর্তা।
অর্থাৎ সব মিলিয়ে হাজার তিনেক নতুন বাস-মিনিবাস নামানোর পরিকল্পনা। এবং সেগুলো চালালে মালিকদের লাভ নিশ্চিত বলে আশ্বাস দিচ্ছেন সরকারি কর্তারা। তবে বেসরকারি বাস-মালিকেরা বিশেষ আশ্বস্ত হতে পারছেন না। উল্টে তাঁরা মনে করছেন, আগেরটির মতো সরকারের এই উদ্যোগও জলে যাবে। মিনিবাস মালিকদের সংগঠন ‘মিনিবাস অপারেটর্স কো-অর্ডিনেশন কমিটি’র নেতা অবশেষ দাঁ-র মন্তব্য, “শিশু জন্মালেই তো হল না! ভাবতে হবে, তার বাসস্থান-স্বাস্থ্য-শিক্ষা ইত্যাদির খরচ কোথা থেকে আসবে। এ সবের জোগাড় না-হলে শিশু দাঁড়াতে পারবে না। এ রাজ্যে পরিবহণ শিল্পেরও এক হাল।”
তাই নতুন পারমিট দিয়ে সমস্যার কোনও সমাধান হবে এমন আশা অবশেষবাবুরা দেখছেন না। তাঁদের মতে, ভাড়া না-বাড়লে নতুন বাস চালানোর লোকই খুঁজে পাওয়া মুশকিল হবে। বেসরকারি বাস-মালিকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অব বাস সিন্ডিকেটস’-এর তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, “সরকার যদি ভাড়া বাড়িয়ে দিত, তা হলে তো বসে যাওয়া বাসগুলোই আবার রাস্তায় বেরোত! বাসের সংখ্যা বাড়ত। তা না-করে নতুন পারমিট দিয়ে লাভ কী?” তপনবাবুর দাবি, “পরিবহণ দফতরকে চার হাজার টাকা কশান মানি দিয়ে বহু মালিক নতুন পারমিট তুলে ঘরে বসে রয়েছেন। এখন তাঁরা পারমিট ফেরত দেওয়ার কথা ভাবছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.