ছাত্রী-নিগ্রহে অভিযুক্তই ছাত্র সংসদের শীর্ষ পদে
রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রাক্তন বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ইন্টার্নের যৌন হেনস্থার অভিযোগ ওঠায় তাঁকে পদ ছাড়তে হবে বলে সরব হয়েছে তৃণমূল। কিন্তু এক ছাত্রীকে শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে মারধর ও শ্লীলতাহানির অভিযোগে শ্রীঘর-ফেরত বিশ্বজিৎ দে ওরফে বাপ্পাকে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক করেছে সেই তৃণমূলেরই ছাত্র সংগঠন টিএমসিপি।
বাপ্পার বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ বিচারাধীন। এই অবস্থায় কেন বাপ্পাকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হল, টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডার কাছে তা জানতে চাওয়া হবে বলে বৃহস্পতিবার জানান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। তবে শঙ্কুদেবের ব্যাখ্যা, অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার আগে বাপ্পাকে দোষী বলে দেগে দেওয়ার কোনও কারণ নেই।
মে মাসে পরীক্ষার হলে সংস্কৃত বিভাগের এক ছাত্রীকে টোকাটুকিতে বাধা দেওয়ায় কর্তব্যরত শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ ওঠে বাপ্পা এবং তাঁর দলবলের বিরুদ্ধে। শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন, এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে। তার মাস দুয়েক পরে, ২৯ জুলাই বাংলা স্নাতকোত্তরের এক ছাত্রীকে ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন একটি ঘরে নিয়ে গিয়ে মারধর, শ্লীলতাহানির অভিযোগ ওঠে বাপ্পা এবং তাঁর শাগরেদদের বিরুদ্ধে। এই নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন ওই ছাত্রী। তার ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয় বাপ্পাকে।
সেই ছাত্রনেতাকেই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ঘোষণা করায় বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রবীন্দ্রভারতীতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছাত্র সংসদ দখল করেছে টিএমসিপি। শঙ্কুদেব নিজেই বাপ্পাকে সাধারণ সম্পাদক করার কথা ঘোষণা করেন। শিক্ষামন্ত্রী এ দিন বলেন, “আমি বিষয়টি জানতাম না। যে সম্পাদক হয়েছে, সে কী ভাবে হয়েছে, খোঁজ নিয়ে দেখব। ছাত্র সংগঠনের সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করেই এই বিষয়ে তাদের মতামত জানব।”
অশোকবাবুর পদত্যাগের দাবিতে সরব তৃণমূলেরই ছাত্র সংগঠন বাপ্পাকে ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক করল কেন, সেই প্রশ্ন উঠছে ইতিমধ্যেই। রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ পর্যন্ত দায়ের হয়নি। কিন্তু ছাত্রী-নিগ্রহের অভিযোগে এক দফা জেল-হাজতে থাকা হয়ে গিয়েছে বাপ্পার। প্রশ্নটা তাই জোরদার হয়েছে। এক ধরনের অভিযোগে দু’জনের ক্ষেত্রে শাসক দল ও তাদের ছাত্র সংগঠনের দু’রকম ভূমিকা কেন?
শঙ্কুদেব বলেন, “ক্লাস-প্রতিনিধিরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে বাপ্পাকে বেছে নিয়েছেন। তাই ওঁকে ওই পদে বসানো হয়েছে।” শঙ্কুদেবের বক্তব্য, বাপ্পার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিচার চলছে। তার আগেই তাঁকে দোষী বলে মেনে নেওয়া হবে কেন? আর রবীন্দ্রভারতীর ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক তো অশোকবাবুর মতো সাংবিধানিক পদ অধিকার করেন না। তাই দু’জনের মধ্যে তুলনা চলে না বলে মনে করেন শঙ্কুদেব।
বাপ্পাকে সাধারণ সম্পাদক করার বিষয়টি রবীন্দ্রভারতীর শিক্ষক-শিক্ষিকারা অবশ্য মোটেই ভাল ভাবে নেননি। ছাত্রছাত্রীদেরও একটি বড় অংশ এর বিরুদ্ধে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, “কিছুই বলার নেই। এদের কাণ্ডকারখানা দেখে যাওয়া ছাড়া কিছু করারও নেই!” যে-ছাত্রীকে নিগ্রহের ঘটনায় বাপ্পা অভিযুক্ত, স্নাতকোত্তরের সেই পড়ুয়ার কথায়, “ওর আচরণের জন্য আমি পরীক্ষা দিতে পারলাম না। আর ওকেই ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক পদে বসানো হল! এর পরে আর ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে পারব? আমার তো ক্যাম্পাসে ঢোকাই কঠিন হয়ে গেল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.