সামনে লোকসভা ভোটের জন্য প্রস্তুতি। সেই সময়েই রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে দিশাহীনতার অভিযোগে দলের একের পর এক জেলা কমিটির ক্ষোভে বেনজির সঙ্কটে পড়েছে বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক! সাংসদ এবং বিধায়ক জিতিয়ে আনতে পারে, এমন সাংগঠনিক অস্তিত্বসম্পন্ন তিনটি জেলার সম্পাদক দলের নানা কাজকর্মে তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছেন ফব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষকে। লোকসভা ভোটের আগে দলের নিয়ন্ত্রণ রাজ্য নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলছেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ফব-য়!
রাজ্য কমিটির বৈঠকে কয়েক মাস আগেই অশোকবাবু জানিয়েছিলেন, রাজ্য কাউন্সিলের অধিবেশন ডেকে নভেম্বর-ডিসেম্বরেই নেতৃত্বে রদবদল আনা হবে। কিন্তু তার কোনও ইঙ্গিত দেখতে না-পেয়ে উত্তরবঙ্গের
একটি জেলার নেতৃত্ব তাঁদের ক্ষোভের কথা জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর কাছে। এরই মধ্যে সঙ্কট আরও ঘনীভূত হয়েছে বিক্ষুব্ধ তথা দলত্যাগী নেতা সরল দেবকে ফিরিয়ে আনার জন্য অশোকবাবুর সাম্প্রতিক তৎপরতায়। জেলা, রাজ্য এবং তার পরে সর্বভারতীয় সম্মেলনে যাঁকে কোনও কমিটিতে স্থান দেওয়া হয়নি, তাঁকেই কয়েক মাসের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে চাইলে তাঁদের পক্ষে মেনে নেওয়া যে সম্ভব নয়, চিঠি দিয়ে অশোকবাবুকে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট জেলার নেতৃত্ব। আবার রাজ্য নেতৃত্ব যে ভাবে একের পর এক ঘটনায় পরিস্থিতি ঘোরালো করে তুলছেন, তাতে তীব্র অসন্তোষ ব্যক্ত করেছেন উত্তরবঙ্গের অন্য একটি জেলার সম্পাদক। এই তিন জেলার মধ্যে দু’টিতেই ফব-কে দু’টি লোকসভা আসনে লড়তে হবে। অন্যটিতেও সংগঠন এখনও প্রভাবশালী। বিক্ষুব্ধ জেলা সংগঠন কী ভাবে ভোটের প্রস্তুতিতে নামবে, দলের অন্দরে সেই প্রশ্ন দেখা দিয়েছে গুরুতর ভাবে।
এই বিদ্রোহের পরিবেশেই
আজ, শুক্রবার থেকে ফব-র রাজ্য দফতরে দলের নতুন কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী এবং কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক বসছে। লোকসভা ভোটের পরে দলের গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য জাতীয় কাউন্সিল অধিবেশনের দিনক্ষণ ঠিক করা সেই বৈঠকের অন্যতম
মুখ্য উদ্দেশ্য।
কিন্তু দলেরই একাংশের প্রশ্ন, লোকসভা ভোটের পরে জাতীয় কাউন্সিল সেরে রাজ্য কাউন্সিল কবে হবে, তা নিয়ে এখন থেকে সলতে পাকিয়ে কী লাভ? তার চেয়ে জরুরি প্রশ্নগুলির মীমাংসা করে নিলে ভাল হত। আপাতত সরল-পর্বই সব চেয়ে জটিল চেহারা নিয়েছে দলে। ফব সূত্রের খবর, সরলবাবুকে ফেরানো যায় কি না, সেই সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী থেকে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গড়া হতে পারে। এ মাসেই রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতেও তা অনুমোদন করানোর চেষ্টা হতে পারে। কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শুরুর আগে অশোকবাবু বৃহস্পতিবার সবিস্তার মন্তব্যে না-গিয়ে এটুকুই বলেছেন, “সরল দেব এবং তাঁর অনুষ্ঠান নিয়ে সাম্প্রতিক কালে যা যা হয়েছে, সবই কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনা হবে। তার পরে দল প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।” |